আঁচিল ও তিল এক নয়। আঁচিল হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) সংক্রমণে হওয়া ত্বকের একটি সাধারণ রোগ। মেডিকেলের ভাষায় একে ‘ভাইরাল ওয়ার্ট’ বলা হয়। এটি সংক্রামক রোগ। ফলে শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়াতে পারে, এমনকি একজন থেকে অন্যজনেও ছড়াতে পারে।
আঁচিল যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে শিশু ও কিশোর বয়সে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন মিলনের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির হতে পারে। যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তি বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনকারী রোগীর ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।
প্রাথমিক অবস্থায় আঁচিল ত্বকের রঙের ছোট ফুসকুড়ির মতো হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে আকারে বড়, অমসৃণ ও শক্ত হতে থাকে। সাধারণত হাতে ও পায়ে বেশি দেখা যায়। মুখ ও যৌনাঙ্গেও এটি হতে দেখা যায়।
সাধারণত কোনো ব্যথা থাকে না।
চুলকানিও সাধারণত থাকে না। তবে যৌনাঙ্গের আঁচিলে চুলকানি হতে পারে।
আঁচিল বেশ কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। যেমন সাধারণ আঁচিল, যা হাতে ও পায়ে দেখা যায়।
মুখে যে আঁচিল দেখা যায়, তা আকারে ছোট ও সমান হওয়ার কারণে একে ‘ফ্লাট ওয়ার্ট’ বলে।
পায়ের তলায় যে আঁচিল হয়, তা পায়ের তলার আঁচিল নামেই পরিচিত।
যৌনাঙ্গের আঁচিলকে মেডিকেলের ভাষায় বলে ‘কনডাইলোমা একোমিনাটা’। এটি এক ধরনের যৌন সংক্রমণজনিত রোগ।
নারীদের জরায়ু মুখের ক্যানসারের জন্য এইচপিভিকে দায়ী করা হয়।
কিছু বিশেষ ধরনের এইচপিভি পায়ুপথে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
যেসব নারীর যৌনাঙ্গে আঁচিল রয়েছে, জন্মের সময় তাঁদের সন্তানদের শ্বাসনালি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
অরক্ষিত যৌন মিলনে বিরত থাকতে হবে।
কিছু কিছু এইচপিভির সংক্রমণ টিকার মাধ্যমে প্রতিহত করা সম্ভব।
আক্রান্ত স্থানের স্পর্শ এড়িয়ে চলা দরকার। দাঁত বা নখ দিয়ে আঁচিল খোঁটানো যাবে না।
আঁচিল অপসারণের জন্য বেশ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যেমন ইলেকট্রোডেসিকেশান।
ক্রায়োসার্জারি পদ্ধতিতে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আক্রান্ত কোষকে কেটে অপসারণ করা যায়।
লেজারের মাধ্যমে আঁচিলের চিকিৎসা করা সম্ভব।
কিছু ক্ষেত্রে স্যালিসিলিক অ্যাসিড, ইমিকুইমড ক্রিম ক্যানথারিডিন এককভাবে অথবা পোডোফিলিনের সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডা. আনজিরুন নাহার, সহযোগী অধ্যাপক, ও বিভাগীয় প্রধান, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ,পপুলার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা