ভালো থাকুন

অস্টিওপোরোসিস রোগের উপসর্গ ও চিকিৎসা

অস্টিওপোরোসিস হাড়ের ক্ষয়জনিত একটি রোগ। এ সমস্যায় ঘনত্ব কমে গিয়ে হাড় হালকা ও ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রতিবছর বিশ্বে ৯০ লাখের বেশি মানুষের হাড় ভাঙে অস্টিওপোরোসিসের কারণে। এ জন্য ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অনেক মূল্য দিতে হয়। তাই অস্টিওপোরোসিসের বিষয়ে সামাজিক সচেতনতামূলক আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। এই পরিস্থিতিতে আজ ২০ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস। এ রোগের প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয়।

অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকিতে যাঁরা

আগেই বলা হয়েছে, সাধারণত এই রোগ পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি ও মেনোপজ-পরবর্তী সময়ে নারীদের বেশি হয়। এ ছাড়া যাঁদের আগে হাড় ভাঙার ইতিহাস আছে, দীর্ঘদিন স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ অথবা খিঁচুনির ওষুধ সেবন করেছেন, অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপান, কম ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া, স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন, কায়িক শ্রমের ঘাটতি রয়েছে—এমন ব্যক্তিদের এ রোগের ঝুঁকি বেশ। তা ছাড়া কিছু বাতজনিত রোগ, থাইরয়েড ও প্রজনন গ্রন্থির রোগ, খাদ্যনালী থেকে পুষ্টি ও ভিটামিন শোষণে সমস্যা ইত্যাদি কারণেও অস্টিওপোরোসিস হতে পারে।

উপসর্গ

সাধারণত হাড় ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত অস্টিওপোরোসিসের কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাথার সমান উচ্চতা থেকে পড়ে হালকা আঘাতেই হাড় ভেঙে যায়। আবার হাড় ভেঙে গেলে ব্যথা ও হাড়ে বাঁক তৈরি হয়। কুঁচকির হাড় ভেঙে গেলে রোগী আক্রান্ত পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারেন না এবং আক্রান্ত পা অন্য পায়ের চেয়ে কিছুটা খাটো হয়ে যায়। মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙলে পিঠে বা কোমরে ব্যথা হয় এবং রোগী সামনে কিছুটা কুঁজো হয়ে যান। এ রোগে হাতের কব্জিও ভাঙতে পারে।

বুঝবেন যেভাবে

যদি সামান্য উচ্চতা থেকে পড়ে বা অল্প আঘাতে কারও হাড়, বিশেষ করে মেরুদণ্ড, কব্জি, কুঁচকি, রান ও পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়, তবে তার অস্টিওপোরোসিস আছে বলে ধরে নিতে হবে। তা ছাড়া ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ করেও অস্টিওপোরোসিস নির্ণয় করা যায়। এফআরএএক্স (FRAX) নামের অনলাইনভিত্তিক অ্যাপের সাহায্যে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি নিরূপণ সম্ভব। এই অ্যাপের বাংলা ভার্সনও রয়েছে।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে ঝুঁকি শনাক্ত করা ও তা রোধ করা প্রথম পদক্ষেপ। জীবনধারায় পরিবর্তন, কায়িক শ্রম, নিয়মিত ব্যায়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি–সমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়া জরুরি। ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের প্রয়োজনে ঝুঁকি চিহ্নিত করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কারণ একবার হাড় ভেঙে গেলে যেসব জটিলতার সৃষ্টি হয়, তার ব্যাপকতা অনেক। বয়স্ক ব্যক্তিদের অচল, শয্যাশায়ী বা কর্মক্ষমতাহীন হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হাড় ভেঙে যাওয়া। এতে প্রবীণদের মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ে। কাজেই অস্টিওপোরোসিস সন্দেহ হলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক রোগীর প্রকৃতি ও রোগের মাত্রা বুঝে প্রয়োজনীয় ওষুধ বা চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেবেন।

লেখক: রিউমাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মহাসচিব, বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটি