যেকোনো অসুস্থতায় শরীরে বিপাক বেড়ে যায়। বেশি বেশি ক্যালরি খরচ হয়। অপর দিকে ক্ষুধামন্দা হয়, খেতে পারে কম। সবকিছু মিলে শরীর দুর্বল লাগে, এমনকি ওজনও কমে যেতে পারে। অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে শরীরকে দিনরাত অগণিত ক্রিয়া-বিক্রিয়া করতে হয়। এতে শরীরকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কাজ করতে হয়। এই কাজ করতে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে অনেক গুণ ক্যালরির দরকার হয়। অনেক বেশি তরলেরও দরকার পড়ে। তাই এই সময়ে প্রচুর তরলের পাশাপাশি ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবারেরও প্রয়োজন হয়।
শরীর যেন সঠিকভাবে অল্প সময়ে বেশি বেশি ক্রিয়া-বিক্রিয়া করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে, সে জন্য বিশ্রাম একটা বড় উপাদান। বিশ্রামের পাশাপাশি খেতে হবে ভালো, ঘুমাতে হবে পর্যাপ্ত এবং সঙ্গে যোগ করতে হবে সঠিক ব্যায়াম, তাহলে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব। কোনো অবস্থাতেই খাবার বন্ধ করা বা দীর্ঘ সময় পর খাবার খাওয়া যাবে না। এতে রোগ নিরাময় দীর্ঘ হবে।
খাবার কেমন হবে
খাবার হতে হবে সহজপাচ্য। একেক রোগীর দ্রুত ভালো হতে একেক ধরনের উপাদান বেশি লাগে। বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, যাতে ক্যালরির পাশাপাশি ভিটামিন, মিনারেলও পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকবে। খাবারে কার্ব, প্রোটিন, চর্বি, ফলমূল, শাকসবজি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকতে হবে। ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তেলের রান্না এড়িয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে খাবার মেনু ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে।
ঘুম হতে হবে পর্যাপ্ত
ঘুমের সঙ্গে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। দৈনন্দিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় আরও বেশি ঘুমের প্রয়োজন। যেমন মেলাটোনিন হরমোন ঘুমের সময় বেশি তৈরি হয়। ধারণা করা হয়, এই হরমোন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডিএনএর মেরামত করে এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধ করে। তাই যেকোনো সময়েই পর্যাপ্ত ঘুম খুব জরুরি।
সঠিক ব্যায়াম বা হাঁটাচলা
যেমন পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন, তেমনি অসুস্থ অবস্থায় সঠিক নড়াচড়া, ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করাও স্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি। আবার একেক অসুস্থতায় একেক ধরনের ব্যায়াম বা হাঁটাচলা দরকার। সঠিক ব্যায়াম মাংসপেশি, হাড়, টেন্ডন, লিগামেন্ট সমস্যায় খুবই জরুরি বিষয়। এমন সমস্যায় শুধু বিছানায় শুয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিলেই হবে না, সঙ্গে লাগবে সঠিক ব্যায়াম। এককথায় সঠিক ব্যায়ামে রোগ দ্রুত সারে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
যা যা মনে রাখতে হবে
ব্যথা কমাতে হবে: যেকোনো অসুস্থতায় ব্যথা একটি সাধারণ ঘটনা। এটি রোগমুক্তিকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। ব্যথায় ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে তাই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে পারে এবং রোগ নিরাময় জটিল হতে পারে। তাই ব্যথাকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং প্রয়োজনে যথাযথ ওষুধ সেবন করতে হবে।
মনকে প্রশান্ত রাখতে হবে: প্রশান্ত মন রোগ নিরাময় ত্বরান্বিত করে। প্রশান্ত মন শরীরকে শিথিল করে। স্ট্রেস হরমোন তৈরি কমায়, প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর জন্য মেডিটেশন বা সৃষ্টিকর্তার কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা মনকে আরও বেশি প্রশান্ত করতে পারে। এই সময়ে ভালোবাসার পছন্দের মানুষ পাশে থাকে তাহলে রোগীর টেনশন অনেকাংশে কমে যায়, মন প্রশান্ত হয়, স্ট্রেস হরমোন কম তৈরি হয়, ফলে রোগ নিরাময় দ্রুত হয়।
লেখক: চিকিৎসক