গত ১১ জানুয়ারি অমিক্রনের আবির্ভাবের সাত সপ্তাহ পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাল, করোনার একটি ধরনের সংক্রমণের জোয়ার বইছে পশ্চিম থেকে পূর্বে। ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার ৫৩টি দেশের মধ্যে ৫০টি দেশ অমিক্রনের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করল। দেশগুলো নিজেদের এপিডেমিওলজিক্যাল উপাত্ত, নিজস্ব সম্পদ, টিকা—এসব নিয়ে মোকাবেলা করল। সংক্রমণের প্রাবল্য দেখা গেল ইউরোপ ও আমেরিকায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য বিজ্ঞানী যদিও ধারণা করছেন, অমিক্রনের প্রাবল্য ও অনেক বেশি সংক্রমণের ফলে ক্ষণস্থায়ী ইমিউনিটি ঢেউয়ের জন্য হয়তো এ অতিমারির সমাপ্তি ঘটবে। অনেক গবেষক বলছেন, পরিস্থিতি এখনো অস্থির আর অনিশ্চিত। এর মডেল নির্মাণ করা দুরূহ। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ইনফেকশাস ডিজিজ মডেলার গ্রাহাম মেডলে বলেন, এটি এত দ্রুতগতির যে এর সাড়া বোঝা কঠিন। তাই দারুণ অনিশ্চয়তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় অমিক্রন সম্পর্কে।
মাত্র দুই দিনে এর সংক্রমণ হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ। আগের করোনাভাইরাসগুলোর চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ক্রিস্তিয়ানা পাগেল বলেন, এমন দ্রুতগতি আগে দেখা যায়নি। এটি রোধ করার উপায় মাঝপথে থেমেও যেতে পারে।
নানা উপাত্ত নিয়ে গবেষকেরা বিভ্রান্ত, এটি কম গুরুতর—এ নিয়েও। উপাত্তের পরিমাণগত বিশ্লেষণ নেই—বলেন এডিনবরার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ উলহাউস। টিকা দেওয়ার পর বিচিত্র ইমিউনোলজিক্যাল একটি দৃশ্যপট আসে।
টিকা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যে সুরক্ষা দিয়েছিল, তা ম্রিয়মাণ হওয়ায় এ চিত্র হয়েছে আরও জটিল। সব দেশে টিকার হার খুব ধীর।
গত ৩১ জানুয়ারি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে এ কথা তুলেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের ধারণা, অমিক্রন দিয়ে শেষ হবে না অতিমারি। এটি শেষ ধরন হবে না, পরবর্তী ধরন আসবে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে—বলেন মেডলে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, এ ভাইরাস সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হবে না। কোভিড–১৯ থাকবে এনডেমিক রোগ হিসেবে। এনডেমিক পর্যায়ে অবস্থান্তর আর বিধিনিষেধ ছাড়া ভাইরাসের সঙ্গে বসবাস সম্ভব কি না, তা বলা কঠিন এবং এমন একটি মডেল তৈরি করা দুরূহ। পরবর্তী ভাইরাস মৃদু হবে, এমন কথাও নেই। তাই কবে করোনার সংক্রমণ শেষ হবে, সে কথা বলার সময় এখনো আসেনি।