বিশ্ব জন্মনিয়ন্ত্রণ দিবসের বিশেষ আয়োজন

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

শিশুকে পৃথিবীতে আনার আগে তার উপযোগী একটি জীবন তৈরি করে রাখা জরুরি। অন্তত ১৮ বছর যেন যথাযথভাবে ‘প্যারেন্টিং’ করা সম্ভব হয়, সেটি মাথায় রাখতে হবে। সব সময় মা–বাবা একটি শিশুর জন্মের জন্য প্রস্তুত থাকেন না। অপরিকল্পিত জন্ম নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, পারিবারিক, সামাজিক জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে মা–বাবার সদিচ্ছা আর সতর্কতায় খুব সহজেই অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ এড়ানো যায়।

প্রতীকী ছবি
ছবি: পেকজেলসডটকম

পিল, কনডম, ইন্ট্রাইউটারাইন ডিভাইসগুলো (IUDs) ধরন ও ব্যবস্থাপনা অনুসারে ৮০ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। স্থায়ী ব্যবস্থা যেমন নারীর স্টেরিলাজেইশন ও পুরুষের ক্ষেত্রে ভ্যাসেকটমি বিফল হওয়ার সম্ভাবনা এক শতাংশেরও কম। তবু সম্ভাবনা থেকেই যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে অনীহা কিংবা ব্যর্থতায় অপরিকল্পিত গর্ভধারণের পর দম্পতিদের একটা বড় অংশ পরবর্তীকালে চেষ্টা করেন অপচিকিৎসাভিত্তিক ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাতের। সর্বশেষ মাতৃমৃত্যু জরিপ বলছে, দেশে গর্ভপাতজনিত মৃত্যুর হার বেড়েছে। ২০১৪ সালে মোট মাতৃমৃত্যুর ১ শতাংশ ছিল গর্ভপাতজনিত, এখন তা ৭ শতাংশ! অথচ একটু সতর্কতায় বাঁচতে পারে একটা জীবন।

অপরিণত মায়ের ক্ষেত্রে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ বয়ে আনে মাতৃমৃত্যুঝুঁকি। অধিক বয়সী মায়ের ক্ষেত্রে হতে পারে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ইনফেকশনসহ বিভিন্ন জটিলতা। সেই সঙ্গে যেকোনো বয়সে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি অপরিকল্পিত গর্ভধারণ আনতে পারে বাচ্চা ও পরিবারের জন্য সামাজিক ও মানসিক চাপ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক মায়ের গর্ভস্থ শিশুর হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। সাধারণ শিশুর তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি। এসব শিশুর জন্মগত হৃদ্‌পিণ্ডের ছিদ্র, ভাল্‌ভের ত্রুটি, গঠন ও রক্তনালির ত্রুটি, পেশির বাড়তি বৃদ্ধি (HCM) এবং পারসিসটেন্ট পালমোনারি হাইপারটেনশনের মতো হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সাম্প্রতিক করোনা মহামারি শুরুর পর দ্য জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (JAMA) ভারতসহ বিশ্বের ১৮টি দেশের ২১০০ গর্ভবতী নারীর তথ্য নিয়ে গবেষণা করেছে। সেখানে দেখা গেছে, করোনায় গর্ভবতী মায়েরা উচ্চ মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন, এই মৃত্যুঝুঁকি যাঁরা গর্ভধারণ করেননি, তাঁদের চেয়ে ৭০% বেশি!
বিশ্ব জন্মনিয়ন্ত্রণ দিবস উপলক্ষে চিকিৎসক হিসেবে আমার চাওয়া, বিশ্বে প্রতিটি গর্ভধারণই যেন কাঙ্ক্ষিত হয়। প্রতিটি শিশু যেন তার সব সম্ভাবনা যতটা সম্ভব মেলে ধরে, বিকশিত করে বেড়ে উঠতে পারে।

লেখক: ইন্টার্ন ডাক্তার, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, যশোর।