সব সময় যে নম্র-ভদ্র উত্তরই দিতে হবে, তা কিন্তু নয়। নিয়মিত আপনাকে যাঁরা ‘মোটা হচ্ছ কেন?’ বলে বারবার বিরক্ত করেন, তাঁদের মুখ বন্ধ করার সময় এসে গেছে। দেরিতে হলেও এবার জানিয়ে দিন আপনিই বা কী ভাবছেন।
হরমোন, বংশগত কোনো রোগ কিংবা জীবনযাপনে অনিয়ম—নানা কারণে মানুষ স্থূল হয়ে যায়। আবার সন্তান হওয়ার পর অনেকেই আর আগের অবস্থায় ফিরতে পারেন না। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁরা নিজেরাই সেটা নিয়ে কিছুটা হলেও শারীরিকভাবে অসুবিধায় থাকেন। এর মধ্যে রাতদিন ‘তুমি অনেক মোটা হয়ে গেছ,’ কথাটি শুনতে কাহাতক ভালো লাগে, বলুন! অথচ ওজন কমাতে উৎসাহ দেওয়া, পরামর্শ দেওয়ার মতো শুভাকাঙ্ক্ষীর অভাব নেই। যদি তাঁরা কাছের মানুষ হন, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু যাঁর সঙ্গে এমন ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলার সম্পর্ক নেই, তিনি যখন অস্থানে, অজায়গায় আপনাকে খাটো করার চেষ্টায় থাকেন, ‘মোটা হয়ে যাচ্ছ কেন’ প্রশ্ন করেন, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কড়া বা মজা করে তাঁদের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দেওয়াটাই শ্রেয়। রইল তেমনই কিছু উত্তর।
মজা করে তির্যক উত্তর
যাঁরা ইচ্ছা করে অন্যের দুর্বল জায়গায় আঘাত দিয়ে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করেন, তাঁরা কিন্তু পাল্টা উত্তরের জন্য প্রস্তুত থাকেন না। কারণ, প্রশ্নগুলোই এমন থাকে যে উল্টো পাশে থাকা মানুষটি থতমত খেয়ে বা অপ্রস্তুত অবস্থায় অল্প হেসে চুপ হয়ে যান। পাশা উল্টে দিন। প্রশ্নকারীর চোখে চোখ রেখে তির্যক হাসি দিয়ে বলতে পারেন, ‘বাহ! বিষয়টি লক্ষ করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার চোখের পাওয়ার তো বেশ ভালো।’ অথবা বলতে পারেন, ‘শরীরের মতো আমার মনটাও কিন্তু অনেক বড়।’
কড়া জবাব
সব সময় যে নম্র-ভদ্র উত্তরই দিতে হবে, তা কিন্তু নয়। নিয়মিত আপনাকে যাঁরা ‘মোটা হচ্ছ কেন?’ বলে বারবার বিরক্ত করেন, তাঁদের মুখ বন্ধ করার সময় এসে গেছে। দেরিতে হলেও এবার জানিয়ে দিন আপনিই বা কী ভাবছেন। প্রশ্ন যদি হয়, ‘আপনার চেহারা তো সুন্দর, কিন্তু ওজনটা একটু বেশি, ’ উত্তর হতে পারে, ‘আপনার চেহারাও মন্দ নয়, তবে বুদ্ধি-বিবেচনার বিষয়ে একই কথা বলতে পারছি না বলে দুঃখিত।’ তবে খেয়াল রাখুন, এ ধরনের প্রশ্নকারীরা পাল্টা জবাব আশা করেন না। সে কারণে আপনার এই উত্তর পেয়ে খারাপ ব্যবহার করে ফেলতে পারেন। এ কারণে জায়গা আর পরিস্থিতি এবং আপনার নিরাপত্তার দিকটি বুঝে উত্তর দেবেন।
যাঁরা আপনার স্থূলতা নিয়ে কটাক্ষ করছেন, অন্যদের সঙ্গেও তাঁরা এটা করেন। লিফটে অপরিচিত লোকের সামনে, অফিসের আনুষ্ঠানিক মিটিংয়ে, কোনো নিমন্ত্রণবাড়িতে একগাদা অতিথির সামনে কিংবা খাবার টেবিলে কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো বলে বসতে পারেন।
সবার হয়েই তাঁকে জবাব দিতে পারেন—
১. আমার শরীর নিয়ে আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে।
২. আমার তো সমস্যা হচ্ছে না, সমস্যা তো দেখছি আপনার।
৩. সবার সামনে আমাকে অপ্রস্তুত করে আপনি কী মজা পাচ্ছেন, বুঝতে পারছি না।
৪. এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না, আর কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
৫. আমি তো নাহয় ওজন কমিয়ে ফেলব, আপনি তো সারা জীবন এমন অবিবেচকই থেকে যাবেন মনে হচ্ছে।
দুশ্চিন্তামুক্ত করুন
হয়তো একসঙ্গে অফিসের সহকর্মীরা কোথাও খেতে গেছেন বা ক্যানটিনেই খেতে বসেছেন, এ সময় কেউ বলে বসলেন, ‘আগের চেয়ে মোটা হয়ে গেছ? খাওয়া কমাতে হবে মনে হচ্ছে!’ এসব প্রশ্নকারীকে দুশ্চিন্তামুক্ত করে দিয়ে বলুন, ‘তোমার বাড়িতে তো খেতে যাচ্ছি না, দুশ্চিন্তা করছ কেন?’ বা ‘আমার খাবার বিল তো তোমাকে দিতে হচ্ছে না।’
৮-১০ বছর ধরে দেখা হচ্ছে, এমন ব্যক্তিরাও মাঝেমধ্যে অদ্ভুত ব্যবহার করেন। দেখা হলে প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন, ‘আরে, তুমি তো দেখি অনেক মোটা হয়ে গেছ।’ মিষ্টি হেসেই বলুন, ‘ভাই, ভদ্রতা করে হলেও তো প্রথমে জিজ্ঞেস করতে পারতেন, তুমি কেমন আছ। তারপর নাহয় আমার শরীরের খোঁজ নিতেন।’
‘টাইটানিক’খ্যাত অভিনেত্রী কেট উইন্সলেটকেও তাঁর স্কুলের দিনগুলোয় অতিরিক্ত ওজনের জন্য অনেক হাসাহাসি এবং কথা সহ্য করতে হয়েছে। এ কারণে স্কুলে অনেক সময় নিগৃহীতও হয়েছেন তিনি। ‘ব্লাবার’ বলে ডাকা হতো তাঁকে। অভিনয় করতে চাওয়ার জন্যও তাঁকে উত্ত্যক্ত করেছেন কেউ কেউ। এমনকি ‘টাইটানিক’ ছবির অডিশনের সময় তাঁকে বলা হয়েছে, ‘আমরা যে রোজকে খুঁজছি, আপনি তা নন।’ এসব কথা শুনেও দমে যাননি কেট। সামনে এগিয়ে গেছেন। আপনিও সব উপেক্ষা করে এগিয়ে যান।