কোন বয়সে কীভাবে সঞ্চয় করবেন

সঞ্চয়ী হতে হলে যে আপনাকে কর্মজীবী হতেই হবে, এমন কিন্তু নয়। পেশাগত জীবনে প্রবেশের অনেক আগে থেকেই গড়ে তুলতে পারেন এ অভ্যাস। এমনকি শৈশব থেকেই গড়ে তোলা যায় সঞ্চয়ের অভ্যাস। বড় হওয়ার পরেও এ অভ্যাসের সুফল পাওয়া যায়। তবে এসবের জন্য আগে প্রয়োজন সঞ্চয়ের সদিচ্ছা।

শৈশব-কৈশোর

ছোট বয়স থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাস হওয়া গুরুত্বপূর্ণ
ছবি: পেক্সেলস

মাটির ব্যাংকে পয়সা জমিয়ে শখের জিনিস কেনার সুখস্মৃতি আমাদের অনেকেরই রয়েছে। আপনিও সন্তানকে এমন একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন, যেখানে সে অর্থ সঞ্চয় করবে। তার শখের কোনো জিনিস কেনার জন্য একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিতে পারেন। জমানো টাকা দিয়ে প্রিয় কোনো মানুষকে সে উপহারও দিতে পারে। শিশু-কিশোরদের আলাদা আয়ের উৎস না থাকলেও টিফিনের টাকা থেকে কিছুটা সঞ্চয় করা সম্ভব। ঈদের সালামি কিংবা বিশেষ দিবসের উপহার হিসেবে পাওয়া অর্থ জমাতে পারে সে। ওই টাকা দিয়ে খাবারদাবার, পোশাক, টুকটাক খেলনা প্রভৃতি না কিনে সে নিজের জন্য জমাতে পারে। দুই ঈদের সালামি জমিয়ে নিজের জন্য একবারে একটু বড়সড় কিছুও কিনতে পারে। এই বয়সে সঞ্চয়ের এ অভ্যাসটাই গুরুত্বপূর্ণ।

যখন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া

উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পর টুকটাক কাজ করার সুযোগটা কাজে লাগান অনেকেই। খণ্ডকালীন কাজ বা ছোটদের পড়ানোর মতো কাজ থেকে নিজের হাতখরচ মেটানোর পাশাপাশি খানিকটা সঞ্চয়ও করা যেতে পারে এই সময়ে।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই চেষ্টা করুন, যাতে প্রতি মাসে আয়ের ২০ শতাংশ সঞ্চয় করতে পারেন

ক্যারিয়ারের শুরুতে

এ সময় মোটামুটি একটা ধরাবাঁধা রোজগার শুরু হয়। সাধারণত এ সময়ের আয়ের পরিমাণটা আহামরি কিছু হয় নয়। তবু নিজের খরচ সামলে অনেকেই পরিবারের পাশে দাঁড়ান। সঞ্চয়ের সুযোগ কমই থাকে এই সময়ে। তবু চেষ্টা করুন, যাতে প্রতি মাসে আয়ের ২০ শতাংশ সঞ্চয় করতে পারেন। সঞ্চয়ের লক্ষ্যপূরণ পুরোপুরি সম্ভব না হলেও যতটা পারেন, চেষ্টা করুন। সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করুন। চাকরি পেয়েছেন বা নতুন ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন বলে জীবনের সব অপূর্ণ বাসনা একবারে মেটাতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। আগে গণপরিবহন ব্যবহার করতেন? এখনো সেটাই করুন। বাড়তি ব্যয় করবেন না। নতুন জীবনের আনন্দে ঘন ঘন ‘পার্টি’ দেবেন না। বরং বাজেট করে খরচ করুন। মাসের শুরুতেই সঞ্চয়ের অর্থ আলাদা করে রাখুন।

ক্যারিয়ারের মধ্যপর্যায়

আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সঞ্চয় বাড়িয়ে নিন

এ পর্যায়ে এসে আয়রোজগার অনেকটাই বাড়তে পারে। কিন্তু আয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যয় বাড়ালে ভবিষ্যতে মুশকিলে পড়তে পারেন। আগে বরং আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সঞ্চয় বাড়িয়ে নিন। বেহিসাবি খরচ এড়িয়ে চলুন। জীবনের বড় লক্ষ্যপূরণের দিকে এগিয়ে চলুন। নিজের একটা ঠিকানার স্বপ্ন দেখেন? সেটির জন্য সঞ্চয় করুন। সন্তানের পড়ালেখা ও ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করুন। বয়স্ক মা-বাবার বিপদে পাশে দাঁড়ানোর জন্য সঞ্চয় করুন। এটিই সেই সময়, যখন আপনি আপনার কাছের মানুষদের জন্য দারুণ কিছু করতে পারেন। এমনও হতে পারে, জীবনযাপনের কিছু ব্যয় কমে যাওয়ার ফলে কিছু বাড়তি অর্থ বেঁচে গেল। প্রতি মাসে ওই অর্থ আপনার সঞ্চয়ের সঙ্গে যোগ করুন।

ক্যারিয়ারের শেষ দিকে

নিজের জন্য সঞ্চয় করুন

জীবনে যা পাওয়ার, তা হয়তো পেয়ে গেছেন। কিংবা না পাওয়ার অনেক দুঃখ রয়েছে। পরিস্থিতি যেমনই হোক, এবার সত্যিকার অর্থে নিজের জন্য কিছু করুন। নিজের জন্য সঞ্চয় করুন। কর্মজীবন শেষে সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য আপনার কী প্রয়োজন, ভাবুন। বেহিসাবি খরচ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। কোনো খাতের খরচ বেঁচে গেলে সেটি সঞ্চয়ের হিসাবে যোগ করে নিন। জীবনধারায় এই পরিমিতিবোধ জীবনজুড়ে আপনার সুখের চাবিকাঠি হয়ে থাকবে।

সূত্র : ফোর্বস অ্যাডভাইজর, সিএনএন