মা–বাবারা প্রায়ই অভিযোগ করেন, ‘আমার বাচ্চাটা পড়তে চায় না।’ অন্য সবদিকে মনোনিবেশ থাকলেও পড়ায় রাজ্যের আলসেমি। কেন সে এমন করে?
মনে রাখবেন, আপনি শিশুকে যতই পড়তে বলেন না কেন, সে সেটাই করবে, যেটা আপনি করেন। শিশুরা দেখে দেখে শেখে। তাই আপনি নিজে বই না পড়লে শিশুকে যতই পড়তে বলেন না কেন, সে আগ্রহী হবে না।
আপনারাও বই পড়ার অভ্যাস করুন। সন্তানের সামনে পত্রিকা, বই পড়ুন। সন্তানকে পড়ানোর সময় নিজেরাও সঙ্গ দিন।
ডিজিটাল এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিডিও গেমস, ইউটিউব ভিডিও, রিলস শিশুদের খুব টানে। ছাপার অক্ষর তাদের আর টানে না। এ যেন ছাপা অক্ষরের সঙ্গে অনলাইন–দুনিয়ার অলিখিত প্রতিযোগিতা। শিশুদের প্রিন্ট বইয়ের ফরম্যাটটা যেন ভালো লাগে না। দিন দিন পড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে তারা।
এ জন্য শিশুদের মোবাইল–আসক্তিতে রাশ টানতে হবে। অর্থাৎ তাদের স্ক্রিনিং টাইম কমিয়ে আনতে হবে। বই বাছাইয়ে নতুনত্ব আনতে হবে। শিশুরা নতুন জিনিস পছন্দ করে। তাই গতানুগতিক বইয়ের পাশাপাশি তাদের পছন্দের বই দিতে পারেন। তাদের গ্রাফিক উপন্যাস বা ‘থ্রি ডি’ বই পড়তে দিন, পড়ার দিকে তাদের আগ্রহ বাড়বে। এই বইগুলোও বোঝার দক্ষতা তৈরি করবে, ধীশক্তি বাড়বে এবং অনীহা কমবে।
‘বই বিরক্তিকর’—এ ধরনের অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যায়। এই কথার আড়ালে শিশু আসলে যা বলার চেষ্টা করছে, তা হলো, ‘আমাকে আকর্ষণীয় কিছু পড়তে দাও।’ কখনো কখনো মা–বাবারা তাদের পছন্দের টপিক পড়তে দেন না। এতে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
আকর্ষণীয় বই বা টপিক খুঁজে পেতে একজন গ্রন্থাগারিক, শিক্ষক, অন্য শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলুন। কমিকস, খেলাধুলাবিষয়ক বই, পশুপাখির খাবারের ছবি–সংবলিত বই, ফ্যাশন ম্যাগাজিন—এ রকম ভিন্ন ধাঁচের বই দিতে পারেন। আপনার শিশুকে জিজ্ঞাসা করুন, সে কী ধরনের বই পড়তে চায়। তাকে নিয়ে যান বইয়ের দোকানে।
শিশুরা ফ্যান্টাসি পছন্দ করে। গল্পের জাদুতে হারিয়ে যেতে চায় তারা। গৎবাঁধা বিষয় পড়তে চায় না। মা–বাবা যখন জোর করে তাদের গৎবাঁধা বই পড়ান, তখন তাদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। শিশুরা মনে করে তাদের মাথায় বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন তারা পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। চেয়ে থাকে বইয়ের দিকে, কিন্তু মন থাকে অন্য কোথাও।
বিভিন্ন কৌশলে অবলম্বন করতে পারেন। যেমন গল্প করে করে পড়ানো বা খেলার মাধ্যমে পড়ানো যেতে পারে। দু-এক ঘণ্টা পরপর পড়াটা জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আবার ছড়ার ঢঙে উচ্চ স্বরে শিশুদের পড়াতে পারেন।
অনেক সময় দেখা যায়, বইয়ের টেক্সটা অনেক বড় বা দীর্ঘ। তখন শিশুটি মনে হবে, সে যেন একটি পাহাড় ডিঙাচ্ছে বা কোনো ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছে—এক কথায়, অনেক পরিশ্রমের কাজ করছে। এতে শিশুরা বিরক্ত হয়। পড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
বেশি কঠিন শব্দ মুখস্থ করাতে যাবেন না। বয়স উপযোগী বই দিন। শিক্ষককে বলুন টেক্সটগুলো ছোট ছোট করে দিতে, বোধগম্য করে পড়াতে। আর পড়ার সময় আপনিও উচ্চ স্বরে তার সঙ্গে পড়ুন। তখন সে একটু বিরতি পাবে, আবার সঙ্গীও পাবে।
পড়তে শেখার প্রক্রিয়াটি কিন্তু সহজ নয়। তাই কোনো কোনো শিশুর অন্যদের তুলনায় পড়তে বেশি সমস্যা হয়। কিন্তু পেছনের কারণটা কী, খুঁজে বের করতে হবে। কেউ কেউ অল্প সময়ে পড়া আয়ত্ত করতে পারে, কেউ কেউ পারে না। বাচ্চা কোনো কারণে ডিস্টার্ব কি না বা শিশুটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
এ জন্য মা-বাবাকে শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে হবে, জানতে হবে তাঁর কাছে সে রকম কিছু চোখে পড়েছে কি না। শিশুর দৃষ্টিশক্তির কোনো সমস্যা আছে কি না, এটাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
আরেকটি বিষয়, অন্য শিশুর সঙ্গে আপনার বাচ্চার তুলনা করা উচিত নয়। এতে আপনার বাচ্চা কষ্ট পায় আর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আর সব সময় বলবেন না ‘এই পড়তে বসো’। তখন পড়ার প্রতি বিতৃষ্ণা জাগতে পারে।
সূত্র : আন্ডারস্টুড ডটঅর্গ