আপনিও কি চ্যাট করতে করতে ‘হাওয়া’ হয়ে যান?

প্রযুক্তির এই যুগে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম মুঠোফোনের খুদে বার্তা। খুব সহজ ব্যাপার হলেও কিন্তু কারও সঙ্গে খুদে বার্তা আদান–প্রদান করার সময় আদবকেতার কিছু দিক মেনে চলা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, সামনাসামনি দেখা না হলেও এখানে কিন্তু অপরের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হয়, বাধতে পারে বিপত্তি। ধরুন, কেউ আপনার সঙ্গে খুদে বার্তা আদান–প্রদান অর্থাৎ, চ্যাট করতে করতে হঠাৎ ‘হাওয়া’ হয়ে গেলেন। অথচ আপনি হয়তো বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই তাঁর সঙ্গে কোনো বিষয় আলাপ করছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই এতে আপনি বিরক্ত হতে পারেন। কথা শেষ না করে হুটহাট ‘হারিয়ে’ যাওয়াটা যেমন বিরক্তিকর, তেমনি কাউকে সামনে রেখে অন্য কারও সঙ্গে চ্যাট করাও উচিত নয়। খুদে বার্তা পাঠানোর সময় কীভাবে ভদ্রতা বজায় রাখা উচিত, তা হয়তো সবারই জানা। কেবল ঠিক জায়গায় নিজের সেই জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়ে ওঠে না অনেকেরই। চলুন, মনে করিয়ে দেওয়া যাক, খুদে বার্তা আদান–প্রদানের কিছু আদবকেতা।

কারও সঙ্গে খুদে বার্তা আদান–প্রদান করার সময় আদবকেতার কিছু দিক মেনে চলা প্রয়োজন
ছবি: পেক্সেলস

হুটহাট ‘হাওয়া’ হয়ে যাবেন না

যে প্রসঙ্গে আলাপ করছেন, তা শেষ করুন। কথা শেষ করে বিদায় সম্ভাষণ জানান। তবে চ্যাটের মাঝখানে আপনার যেকোনো কাজে যাওয়ার প্রয়োজন পড়তেই পারে, সে ক্ষেত্রে অপরজনকে জানিয়ে দিন যে আপনি কাজে যাচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আদান–প্রদানের মধ্যে এমনটা হলে দুঃখ প্রকাশ করাটাও ভদ্রতা। চ্যাটে যদি তর্কও হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই আপনি তর্ক এগিয়ে নিতে অনিচ্ছুক হন, তবু এটুকু জানিয়ে দিন যে আপনি আর আলাপ করতে আগ্রহী নন।

অসময়ে ‘হাজির’ হবেন না

যাকে খুদে বার্তা পাঠাতে চাচ্ছেন, তিনি সেই মুহূর্তে বিশ্রামে থাকতে পারেন কি না, তা ভেবে দেখুন। কর্মঘণ্টার বাইরে কিন্তু কাজসংক্রান্ত বার্তা পাঠানো উচিত নয়। রাতবিরাতে আপনি নিতান্ত আপনজন ছাড়া অন্য কাউকে বার্তা পাঠানোর অধিকার রাখেন না, সেটিও মাথায় রাখুন।

বারবার বার্তা পাঠিয়ে কাউকে বিরক্তি করবেন না

বারবার ‘নক’ করবেন না

কেউ যদি আপনার বার্তার উত্তর দিতে দেরি করেন কিংবা উত্তর না দেন, তাঁকে বারবার ‘নক’ করবেন না। একটু পরপর বার্তা পাঠিয়ে ফিরতি বার্তার জন্য তাগাদা দেবেন না। ধরে নিন, তিনি ব্যস্ত আছেন কিংবা কোনো কারণে আলাপ করতে ইচ্ছুক নন। বারবার বার্তা পাঠিয়ে তাঁর বিরক্তির উদ্রেক করবেন না।

অপ্রাসঙ্গিক কিংবা দুঃখজনক বার্তা দেবেন না

‘ব্যস্ত নাকি?’, ‘ঘুমায় গেছেন?’ খুব কাছের মানুষ ছাড়া কাউকে এ জাতীয় বার্তা পাঠাবেন না। বরং স্বাভাবিক সম্ভাষণ জানিয়ে কাজের কথা সেরে ফেলুন। স্বল্প পরিচিত কাউকে প্রায়ই ‘শুভ সকাল’ বা ‘শুভ অপরাহ্ন’ জাতীয় বার্তা পাঠানো থেকে বিরত থাকুন। গ্রুপ চ্যাট, যেখানে বহু মানুষ রয়েছেন, সেখানে কাজের কথা ছাড়া বাড়তি কিছু বলবেন না। গ্রুপের কারও সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করার ইচ্ছা থাকলে তাঁকে আলাদাভাবে বার্তা পাঠান। তবে যে সংবাদ পেলে কেউ আক্ষরিক অর্থেই দুঃখ পাবেন, তা খুদে বার্তায় জানাতে নেই। এমন সংবাদ জানাতে হলে তাঁকে ফোন করতে পারেন।

রাতবিরাতে আপনজন ছাড়া কাউকে বার্তা পাঠানো উচিত নয়

অকারণ কারও সময় নেবেন না

খুদে বার্তা ‘ক্ষুদ্র’ই রাখুন। লম্বা বার্তা পড়াটা অনেকের জন্যই বিরক্তিকর। ছোট ছোট অনেকগুলো বার্তাও না পাঠানোই ভালো। আবার অন্য কাউকে পাঠাতে গিয়ে ভুল করে কেউ আপনাকে বার্তা পাঠিয়ে ফেললে তাঁকে ভদ্রভাবে ভুলটা ধরিয়ে দেওয়া উচিত। নইলে তিনি হয়তো বেখেয়ালে ভেবে বসবেন যে বার্তাটি সঠিক জায়গাতেই পৌঁছেছে। তবে এ নিয়ে বাড়তি কথা বলাও ঠিক নয়।

অকারণে ছবি বা ভিডিও পাঠাবেন না

অ্যাপভিত্তিক বার্তায় কাউকে ছবি পাঠানো হলে তাঁর মুঠোফোনে ছবিটি ডাউনলোড হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা এমন অপ্রয়োজনীয় ছবি বা ভিডিওতে আপনার মুঠোফোনের ‘গ্যালারি’টা যদি ভরপুর হয়ে যায়, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি বিরক্ত হবেন? তাই নিজেকেও এমন কাজ থেকে বিরত রাখুন।

খুদে বার্তা ‘ক্ষুদ্র’ রাখলেই ভালো

সামনের মানুষকে অগ্রাহ্য করে চ্যাট করবেন না

ডিজিটাল মাধ্যমে চ্যাট করতে গিয়ে সামনের মানুষটাকে অগ্রাহ্য করবেন না। কারও সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে বারবার মুঠোফোন দেখবেন না, চ্যাট করবেন না। বাস্তবের সম্পর্ককে সবকিছুর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন। এসব সম্পর্কগুলো নিঃসন্দেহে অমূল্য।

সূত্র: রিডার’স ডাইজেস্ট