তীব্র শীতে আমাদের যেমন জড়সড় অবস্থা হয়, গাছের বেলায়ও তা-ই। এ সময় গাছের বৃদ্ধি কমে যায়, ঝরে যায় বিবর্ণ পাতা। বিপরীতে আবার এই শীতের সময়েই এমন সব বর্ণিল ফুলে বাগান রাঙানো যায়, যা বছরের অন্য সময় অসম্ভব। শীতে বাগান আলো করে রাখার মতো মুগ্ধতা ছড়ানো কিছু ফুল নিয়ে কথা বলা যাক আজ। দেখুন তো এর মধ্যে কোন কোন ফুলকে বাগানে ঠাঁই দিতে চাইছেন আপনিও?
শীতকালীন ফুলের মধ্যে গাঁদার অবস্থান সবার আগেই থাকবে। কত যে বৈচিত্র্য এর রঙে ও রূপে। হলুদ থেকে লাল, কমলা, গাঢ় খয়েরি, আছে লাল-হলুদের মিশ্রণ। জাতেও আছে ভিন্নতা। চায়নিজ গাঁদা, ইনকা গাঁদা, রাজগাঁদা, আফ্রিকান ও ফরাসি জাতের গাঁদাও চাষ হচ্ছে দেশে। বিয়ে, জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকী, ঘর সাজানো থেকে শুরু করে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও শহীদ দিবসের মতো সব রকমের অনুষ্ঠান সাজাতে আছে গাঁদা ফুলের চাহিদা। এর আছে ঔষধি গুণও। কেটে যাওয়া ত্বকের রক্ত পড়া বন্ধ করতে, কাটা ঘা শুকাতে ও জীবাণুনাশক হিসেবে গাঁদা ফুলের পাতার রস খুব উপকারী। বাগানে গাঁদা ফুল থাকলে উড়ে আসে প্রজাপতি ও ভ্রমরের মতো কীটপতঙ্গ, যা বাগানের অন্যান্য ফল-ফসলের পরাগায়নে উপকারী।
বাগানে পাপড়ি মেলে মাথা উঁচিয়ে থাকা ঢাউস আকৃতির চমৎকার এক শীতের ফুল ডালিয়া। সাদা, কমলা, বেগুনি, হলুদ ও গাঢ় গোলাপি রঙের পাপড়িতে ঠাসা ডালিয়া দেখলে মুগ্ধ হতে বাধ্য আমরা। সরাসরি বাগান থেকে শুরু করে টবে, ছাদে ও রোদ পায়, এমন বারান্দায়ও চাষ করা যায়। নার্সারি থেকে সরাসরি চারা কিনে রোপণ করতে পারেন, আবার আগের বছর রোপণ করা মিষ্টি আলুর মতো দেখতে ডালিয়ার কন্দ মাটিতে বপন করেও চারা করে নিতে পারেন।
শীতকালে যেসব ফুল ফোটে, তার মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও আকারে বড় সূর্যমুখী। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর নাম সূর্যমুখী। আবার সে নিজেও তো দেখতে সুয্যিমামার মতোই। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও বীজ ও তেলের জন্য সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়। তবে সৌন্দর্যের জন্য বাগানেও ঠাঁই পায় সূর্যমুখী। ভালো রোদ পায়, এমন জায়গায় সূর্যমুখী চাষ করা যায়; হোক সে বাগান, বারান্দা কিংবা ছাদে।
অতি চিকন চিকন পাতায় ছাওয়া কাণ্ডের মাথায় একেক রঙের কসমস ফুল যখন বাতাসে দোল খায়, দেখতে দারুণ লাগে। বাগানে এমন দৃশ্য যদি পেতে চান, আনুন কসমস ফুল। রঙের মধ্যে সাদা আর গোলাপি রংটাই চোখে বেশি পড়ে। আছে কমলা, হলুদ, বেগুনি রঙের ফুলও। দেশি লম্বা গাছের পাশাপাশি এখন খাটো জাতের কসমস ফুলও মিলছে নার্সারিতে।
চন্দ্রমল্লিকা শীতকালের আরেকটি জনপ্রিয় ফুল। জাতভেদে চন্দ্রমল্লিকার রংও বিভিন্ন রকম হয়। যেমন সাদা, উজ্জ্বল হলুদ, হালকা বেগুনি, হালকা গোলাপি ইত্যাদি। থোকা থোকা কলি এসে যখন ফুল ফুটতে থাকে, তখন বিরামহীনভাবে ফুল ফুটেই চলে। এমনও হয় ফুলের ভিড়ে গাছের পাতাই হারিয়ে যায় চোখের আড়ালে। বীজ বা চারা যেমন রোপণ করতে পারেন, পারেন সরাসরি ডাল কেটে মাটিতে রোপণের পর চারা তৈরি করে নিতে।
সাদাটে সবুজ পাতার ছোট ফুলগাছ জিনিয়া। সাদা, হলুদ, লাল, বাদামি, বেগুনি, কমলা রঙের ছোট এই জিনিয়া ফুল বাগানের মাটি, টব এমনকি ঝুলন্ত টবেও ঠাঁই দিতে পারেন।
পিটুনিয়া ফুলের চাহিদার মূল কারণ এর আকর্ষণীয় রং। সবচেয়ে বেশি রঙের দখল যেন এক পিটুনিয়ার কাছেই আছে। সাদা থেকে শুরু করে লাল, গোলাপি, বেগুনি, হলুদ, নীল—এক রঙের ফুল যেমন হয়, হয় একই ফুলে অনেক রঙের মিশেল। এক রঙের ওপর ডোরাকাটা দাগ ফুলটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। বাগানে, বিশেষ করে ঝুলন্ত টবে ঝুলিয়ে পিটুনিয়ার সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেওয়া যায় রোদ পায়, এমন যেকোনো জায়গায়।
বাগানে লাল–সবুজ কিংবা মনমাতানো বেগুনির সমারোহ চান? বুনতে পারেন স্যালভিয়া। গাছের মাথায় লম্বা পুষ্পমঞ্জরি থাকে, যা আকারে গাছের চেয়েও বড় হতে পারে। ফুলের কলিগুলো নিচের দিক থেকে ফুটতে ফুটতে ওপরের দিকে যায়। মজার বিষয় হলো, স্যালভিয়ার ফুল, কলি, মঞ্জরি সব একই রঙের। টকটকে লাল কিংবা বেগুনি রঙের একেকটি পুষ্পমঞ্জরি যেন একেকটি ফুলের তোড়া।
শীতকালের ছোট ফুলের মধ্যে আরেকটি সুন্দর ফুল ডায়ান্থাস। লিখতে লিখতে পেনসিলের মাথা যখন ক্ষয়ে যায়, তখন শার্পনার দিয়ে চোখা করতে গেলে পেনসিলের যে পাতলা কাঠের অংশটা গোল হয়ে ঝরে পড়ে, ডায়ান্থাস ফুলটা দেখতে অনেকটা সে রকম। শীতের অন্যান্য ফুলের সঙ্গে রাখতে পারেন ডায়ান্থাসকেও।
ভারবেনা শীতের সেরা ফুলগুলোর একটি। গোলাপি, লাল বা বেগুনি ফুলের গুচ্ছাকার ফুলগুলো চাইলে বারান্দার ঝুলন্ত টবেও চাষ করতে পারেন।
এ ছাড়া অন্যান্য ফুলের মধ্যে জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস, ডেইজি, দোপাটি, অ্যাস্টার, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, ফ্লক্স, কারনেশান, পুরতলিকা, ক্যালেন্ডুলা, হলিহক ও মর্নিং গ্লোরির মতো শীতকালীন ফুলও রাখতে পারেন বাগানে। বর্ণিল সব ফুলের মেলা বসুক আপনার বাড়িতে।