নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আতিকুল ইসলাম–এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাইফুল্লাহ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর ব্যাপারে আপনারা অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছেন। কোনো অগ্রগতি আছে?
অনুমোদনটা আসলে পাওয়া উচিত। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির কথা যদি বলি—আমাদের সব বিষয়ের শিক্ষকেরাই আধুনিক উদ্ভাবন, গবেষণা সম্পর্কে অবগত। সুতরাং তাঁদের অধীনে যখন কোনো শিক্ষার্থী পিএইচডি করবে, নিশ্চয়ই সেটা মানসম্পন্ন হবে। ভিনদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানের অভিজ্ঞতাও আমাদের শিক্ষকদের আছে। নেদারল্যান্ডস, নরওয়ের বিভিন্ন গবেষণায়ও আমাদের শিক্ষকেরা সুপারভাইজ করেছেন। এ ছাড়া গবেষণার সংখ্যা ও মানের দিক থেকেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নর্থ সাউথই সেরা। আমি মনে করি বাংলাদেশের আরও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরও পিএইচডি ডিগ্রি চালু করার মতো শিক্ষক বা অন্যান্য রিসোর্স আছে। কাজেই এই সুযোগ না দিলে ক্ষতিটা দেশের। ধরা যাক আমার একজন শিক্ষক বছরে চারটি গবেষণাপ্রবন্ধ প্রকাশ করছেন। তাঁর যদি চারজন পিএইচডি শিক্ষার্থী থাকে, তাহলে আটটি গবেষণা হতে পারত। ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, এগুলো তো পিএইচডি শিক্ষার্থীদেরই করার কথা। গবেষণা যত বেশি হবে, আমরা তত বেশি জানব। দেশ উপকৃত হবে।
এসব গবেষণা কি দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারে?
নিশ্চয়ই। শিল্প খাতের বিভিন্ন সমস্যা যদি আমার কাছে আনা হয়, গবেষণা করে আমরা সমাধান খুঁজতে পারি। এ ধরনের কাজ নর্থ সাউথ করছে। সাংবাদিকতা বিভাগ যেমন ফ্যাক্ট চেকিং নিয়ে কাজ করছে, অনলাইনে বিদ্বেষ ছড়ানো রোধে কী করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছে। সরকারের সঙ্গে এক হয়েও আমরা গবেষণা করেছি। যেমন বিদ্যুৎ খাতের সমস্যা সমাধানে আমাদের একজন অধ্যাপক কাজ করছেন, বেশ বড় অঙ্কের ফান্ডিংও পেয়েছেন। গুগল, মাইক্রোসফটের মতো নামী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও আমাদের শিক্ষকদের চুক্তি হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ সম্মানজনক অবস্থানেও নর্থ সাউথের স্নাতকেরা কাজ করছেন। সবাইকে এক করে একটা শক্তিশালী অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন করার কোনো পরিকল্পনা কি আছে?
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে আমরা গুগলের সদর দপ্তরে গিয়েছিলাম। সেখানে ছয়জন বাংলাদেশি প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজনই নর্থ সাউথের। স্ট্যানফোর্ডে গিয়েও আমাদের এক ছাত্রীর সঙ্গে দেখা হলো, সেখানকার প্রভাষক হিসেবে কাজ করছে। এ রকম বলে শেষ করা যাবে না। নর্থ সাউথের অ্যালামনাইয়ের সংখ্যা এখন প্রায় ৪০ হাজার। তবে সত্যি বলতে আমরা এখনো সবাইকে এক করতে পারিনি। বিচ্ছিন্নভাবে সিডনি, মেলবোর্ন, সান ফ্রান্সিসকো, নিউইয়র্ক, মধ্যপ্রাচ্যেও নর্থ সাউথের অ্যালামনাইদের অ্যাসোসিয়েশন আছে। বাংলাদেশেও প্রকৌশলের স্নাতক, বিজনেসের স্নাতকদের আলাদা অ্যাসোসিয়েশন আছে। সবাইকে এক ছাতার নিচে আনতে হবে। আমরা একটা তালিকা তৈরি করছি। তবে আলাদা অ্যাসোসিয়েশন থাকারও প্রয়োজন আছে। যেমন ধরেন নর্থ সাউথের একজন স্নাতক যদি এখন সিডনি বা মেলবোর্নে যায়, তার থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে চাকরির ব্যবস্থাও কিন্তু অ্যালামনাইরাই করে দেবে। তাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। এই নেটওয়ার্কটা খুব জরুরি।
এনএসইউ স্টার্টআপস নেক্সট নামে আপনাদের একটা উদ্যোগ আছে। এটার ব্যাপারে একটু বলবেন?
শিক্ষার্থীদের ভাবনাটা ক্লাসরুম থেকে বোর্ডরুমে নিয়ে যাওয়া—মূল উদ্দেশ্য এটাই। অনেকের মাথায় হয়তো আইডিয়া আছে, কিন্তু অর্থায়ন কিংবা সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এই সহযোগিতাটাই আমরা করি। প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে পৃষ্ঠপোষকতা—সব আমরা দিই। যত দিন তারা নিজেরা ফান্ড না পাচ্ছে, তত দিন সহযোগিতা অব্যাহত থাকে। আমাদের স্টার্টআপ নেক্সটের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কিন্তু দেশে বসেই ১০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্তও ফান্ড নিশ্চিত করেছে। বিনিয়োগকারীরাও ওদের ওপর আস্থা রাখছে।
উপাচার্য হিসেবে আপনি নর্থ সাউথে কেমন শিক্ষার্থী চান?
উদার, ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব থাকতে হবে। শুধু বই পড়লে হবে না, পৃথিবীর হালনাগাদ তথ্য জানতে হবে। একজন নীতিমান, পরিপূর্ণ মানুষ হতে হবে।
৫ বছর পর নর্থ সাউথকে কোথায় দেখতে চান?
এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে নর্থ সাউথের অবস্থান এখন ১৯১। এই প্রথম দেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০–এর মধ্যে স্থান পেয়েছে। পাঁচ বছরের মধ্যে এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নর্থ সাউথকে দেখতে চাই।