সব সময় শুনে এসেছি, বুড়িগঙ্গা নাকি ঢাকার প্রাণ। অথচ এই নদীর কাছাকাছি গেলেই এখন দুর্গন্ধ এসে নাকে ধাক্কা দেয়।
বুড়িগঙ্গার মতো নদীগুলোকে আমরা যেন বর্জ্য নয়, ভালোবাসা দিতে পারি, বাঁচাতে পারি—সেই অঙ্গীকার নিয়েই ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষাসফর। শুক্রবার সকালে রাজধানীর সদরঘাট থেকে সুন্দরবন-১৬ লঞ্চে চেপে চাঁদপুরে সাগর মোহনা পর্যন্ত এই ভ্রমণ উপভোগ করি আমরা।
যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা নিয়ে বের হয়েছিলাম, শুরুতেই তাতে খানিকটা ভাটা পড়ে। বুড়িগঙ্গার কালো পানি, এখানে-সেখানে ময়লার স্তূপ দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। দিন যত যাচ্ছে, নদী যেন আরও দূষিত হচ্ছে।
আগে লঞ্চ কিছুটা পথ যাওয়ার পরই স্বচ্ছ পানির দেখা মিলত, এখন আর সেটা হয় না। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর কিছুটা স্বচ্ছ পানির দেখা পেলেও নদীর প্রকৃত সৌন্দর্যটা টের পাওয়া যায় চাঁদপুর পাড়ি দেওয়ার পর। ভবিষ্যতের শিশুরা কোন বাতাসে নিশ্বাস নেবে, ভেবেই কিছুটা শঙ্কা বোধ হলো। এসব নিয়ে কথা বলতে বলতেই প্রিয় গাইড শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে আমরা প্রতিজ্ঞা করলাম, অন্তত আমরা কেউ নদীতে আবর্জনা ফেলব না। নদীকে নৌযান ও কারখানার বর্জ্যমুক্ত রাখতে ‘ছায়া মেঘা প্রজেক্ট ডিজাইন’ নামে আমাদের একটা অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার প্রস্তাব তখনই উঠল।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে ভূমিকা রেখেছিল শিক্ষার্থীরা। ‘বর্জ্যমুক্ত নদী’ নিশ্চিত করার আন্দোলনও এই তরুণ সমাজকেই করতে হবে। তুরাগ, বুড়িগঙ্গাসহ পর্যায়ক্রমে দেশের সব নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া জরুরি।
সকালে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে শিক্ষাসফর ২০২৪–এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও অতিথিরা। নদীদূষণমুক্ত রাখার অঙ্গীকার করে দুই পাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে গন্তব্যে এগোতে থাকি। ঘণ্টা দুই পর চোখে পড়ে, নদীর মোহনায় পানির বিচিত্র স্রোতের বয়ে চলা।
মধ্যাহ্নভোজের পর শুরু হয় সংগীতশিল্পী কুদ্দুস বয়াতির গান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যাফল ড্রর পর অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী। সফরের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিইউবিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও ঢাকা কমার্স কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য মো. শামসুল হুদা এফসিএ, কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য আহমেদ হোসেন, অধ্যক্ষ মো. আবু মাসুদ, উপাধ্যক্ষ মো. ওয়ালী উল্যাহ্ এবং সাবেক অধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য অতিথি।
তাজা ইলিশের স্বাদ আর দিনভর আনন্দের উচ্ছ্বাস সঙ্গী করে দিন শেষে বাড়ি ফিরি আমরা।