কেউ কেউ থাকে কিছুটা অন্য রকম। কারও সঙ্গে তাদের জীবনযাপন মেলে না। নিজেদের কোথাওই তারা খাপ খাওয়াতে পারে না। পরিবার, বন্ধুমহল, কর্মক্ষেত্র—সর্বত্রই তারা বেমানান, বেখাপ্পা। কিছুটা ব্রাত্য, অপাঙ্ক্তেয়। প্রচলিত ফ্যাশন বোঝে না। পরিপাটি-ফিটফাট ব্যাপারগুলো তাদের কাছে গুরুত্বহীন। বহুদিনের না ছাঁটা উষ্কখুষ্ক চুল-দাড়ি-গোঁফ। চোখের আয়তনের তুলনায় ইয়া বড় ফ্রেমের চশমা। যেমন-তেমন পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানো। সমাজের চোখে হয়তো এগুলো অদ্ভুত বা উদ্ভট। তবে এসব অসংগতি নিয়ে তাদের নিজেদের কিন্তু কোনো মাথাব্যথা নেই। নিজের ব্যক্তিজীবন নিয়ে সংকোচ না থাকলেও, চারপাশ নিয়ে তারা সংকোচে ভোগে। বাস্তবের পৃথিবীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কম। ফলে যোগাযোগদক্ষতাও একেবারে শূন্যের কাছাকাছি। কথায় মাধুর্য নেই। আচরণে স্বতঃস্ফূর্ত নয়। আড্ডায়-আয়োজনে তাদের উপস্থিতিও নেহাতই খাপছাড়া। গুরুত্বপূর্ণ আলাপে আলটপকা অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করে বসে হয়তো। অধিকাংশ সময়ই তাদের কথাবার্তা মনে হয় অবান্তর। এ ধরনের লোকদের সমাজ আখ্যা দেয় অসামাজিক বা উটকো লোক বলে।
বাইরের জগতের সঙ্গে আপাত যোগাযোগহীন এই মানুষগুলোর কিন্তু নিজস্ব একটা জগৎ আছে। সেই আপন পৃথিবীতে তারা নিঃসংকোচ, রাজাধিরাজ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে নিমগ্ন থাকে। সাহিত্য, খেলাধুলা বা গবেষণা—ব্যক্তিভেদে এমন কোনো বিষয়ে থাকে তাদের তীব্র ঝোঁক। ওই বিষয়টির নাড়ি-নক্ষত্র থাকে তাদের নখদর্পণে। আবিষ্ট মানুষটি তার মনোযোগ আর অন্য কোথাও সরাতে পারেন না। অসামাজিক ও নিঃসঙ্গ হয়েই কাটে তাদের জীবন। এমন মানুষদের ইংরেজিতে বলা হয় ‘ডর্ক’।
আজ ১৫ জুলাই, এমন মানুষদের দিন। দিবসটির আনুষ্ঠানিক নাম ‘বি অ্যা ডর্ক ডে’। আমাদের আশপাশে এ ধরনের মানুষ যারা আছেন, তারা সমাজেরই বৈচিত্র্য। তাদের অন্য দৃষ্টিতে দেখা বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা উচিত নয়। গোষ্ঠীবদ্ধ মানবসমাজে ভিন্ন চরিত্রের মানুষগুলো বস্তুত একধরনের সৌন্দর্য। উটকো নয় মোটেই। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতেই ২০০৪ সালে এই দিবসের চল হয়। প্রচলন করেন রুথ ও টমাস রয় নামের দুজন ব্যক্তি।
ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে