কিছুদিন ধরে আমার এক বন্ধু রাতে ঘুমাতে পারছিল না। চিকিৎসক তাকে ঘুমের আগে ঘরে ঘুমের আবহ তৈরি করে, বিশেষ ধরনের মিউজিক চালিয়ে নিতে বলেন। এর পর থেকেই তিনি ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা গভীরভাবে ঘুমাচ্ছেন। অনেকে আবার ঘুম তাড়িয়ে চাঙাভাবে দিন শুরু করতে সকালে উঠেই চালিয়ে দেন মিউজিক। বিকেলে বৃষ্টি নামলে এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসে প্রিয় কোনো একটা গান ছেড়ে স্মৃতিচারণা করা অনেকেরই বিলাসিতা। নিছক বিনোদন বাদেও গান শোনার রয়েছে অগণিত উপকারিতা। গানের ‘নিরাময়ী’ প্রভাব চিকিৎসাবিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও ইতিহাসজুড়ে স্বীকৃত। আবেগের কারণে আমাদের মনের ওপর গানের গভীর প্রভাব রয়েছে। সুর যেমনই হোক না কেন, শক্তিশালী আবেগ জাগিয়ে তোলার এবং সুখ, প্রশান্তি আর নস্টালজিয়া তৈরি করার ক্ষমতা গানের আছে।
গবেষণা যা বলছে
গবেষণা বলে, গান মস্তিষ্ককে ডোপামিন নিঃসরণ করতে উদ্দীপিত করে। ডোপামিন আনন্দ ও প্রাপ্তির অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ফলে মনমেজাজ ভালো করে, মানসিক চাপ কমে। গান মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে ধ্রুপদী সংগীত সৃজনশীলতা ও মনোযোগ বাড়ায়।
স্নায়ুচাপ কমায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
গান শুনলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চল সক্রিয় হয়। স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়। পড়াশোনা, সৃজনশীল কাজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে মনোযোগ বেশি প্রয়োজন। এ সমস্ত ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায় বেশি। শারীরিকভাবে গান শোনার প্রভাব বেশ গভীর। হৃৎকম্পন, রক্তচাপ ও উদ্বেগ কমাতে এবং প্রশান্তি বাড়াতে সাহায্য করে গান।
ব্যথা কমায়, দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে
স্বাস্থ্য ও সম্পর্কবিশেষজ্ঞ আশমিন মুনজাল বলেন, ‘নরম সুরের ধীরগতির গান শুনলে শ্বাসপ্রশ্বাস ধীর হয়। ‘স্ট্রেস লেভেল’ কমে গিয়ে শরীরে প্রশান্তি তৈরি হয়। কিছু কিছু অস্ত্রোপচারের পর ব্যথা লাঘবে ও দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য কয়েক ধরনের গান ও মিউজিক শোনার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
গানের ছন্দময়তা ও সুর মস্তিষ্ককে এমনভাবে উদ্দীপিত করে, যা কেবল মুখের কথায় অর্জন করা সম্ভব নয়। এর ফলে সাইকোথেরাপিতে একটি শক্তিশালী নিরাময়ী হাতিয়ার হয়ে ওঠে গান। গান শোনার শারীরিক উপকারিতা সুদূরপ্রসারী। মুড ও জ্ঞানীয় ক্রিয়াকলাপ বাড়ানো থেকে শুরু করে মানসিক চাপ কমানো—নানাভাবে আমাদের তা সুস্থতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া