সংস্কারের আলোচনা এখন সর্বত্র। নিজ নিজ বিভাগের অসংগতি তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর নানা দাবি জানাচ্ছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিয়েছেন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। গণপরিষদ মডেলে তাঁরা গড়ে তুলেছেন ‘সংস্কার পরিষদ’।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল, যা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অস্থায়ী সংসদ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া প্রণয়নেও এই পরিষদের ভূমিকা ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সংস্কারের জন্য এই মডেলে একটি পরিষদ গঠন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিভাগের চলতি ছয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এক হয়ে প্রকাশ করেছেন একটি ‘ঘোষণাপত্র’। ঘোষণাপত্রে তাঁরা উল্লেখ করেন, ‘প্রতি ব্যাচ থেকে ২০ জন করে নির্বাচিত মোট ১২০ জন প্রতিনিধি সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করবেন। আইন বিভাগ ও এর কর্মপ্রণালীর সংস্কারসাধনের উদ্দেশ্যে নিয়মিত অধিবেশনের মাধ্যমে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভাগকে যুগোপযোগী করতে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর এবং সর্বোপরি, দেশের স্বনামধন্য আইনশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগকে বিশ্বের সেরা আইনশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমকক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে এই পরিষদ নির্বাচিত প্রতিনিধি কর্তৃক প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতাক্রমে গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সর্বতোভাবে বদ্ধপরিকর থাকবে। গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষে পরিষদটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে।’
আইন বিভাগ সংস্কার পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে গঠন করা হয়েছে কয়েকটি কমিটি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করা হয়েছে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার। অন্য কমিটিগুলোর মধ্যে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট ‘কার্যপ্রণালী বিধি প্রণয়ন কমিটি’ এবং প্রতি ব্যাচ থেকে একজন করে ছয়জন সদস্যকে ‘হুইপ’ নির্বাচিত করা হয়েছে। স্পিকার আইন বিভাগের সংস্কারের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবের ওপর আলোচনার আয়োজন করবেন। সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো আইন বিভাগ সংস্কার প্রস্তাবনার জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবে।
আইন বিভাগ সংস্কার পরিষদের কার্যক্রম শুধু বিভাগ সংস্কারেই ভূমিকা রাখবে না, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব তৈরিতেও সাহায্য করবে বলে মনে করেন বিভাগটির স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিষদের গঠনটা এমনভাবে করা হয়েছে, যেন আইন বিভাগের প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজেকে এর অংশ মনে করে। পরিষদের মধ্য দিয়ে যেসব বিষয় পাস হয়ে আসবে, সেগুলো তাঁদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই আসবে। প্রস্তাবগুলো সর্বসম্মতিক্রমে পাস হলেই কেবল চূড়ান্ত প্রস্তাবনায় যাবে। একটা সংসদ কীভাবে কাজ করে, একটা প্রস্তাব কীভাবে আসে, কীভাবে পাস হয়—এ বিষয়গুলোও শিক্ষার্থীরা শিখতে পারবেন।’