‘হালকা স্ন্যাকস’ হিসেবে খাওয়া হলেও ক্যালরির হিসেবে শিঙাড়া কিন্তু মোটেও হালকা নয়
‘হালকা স্ন্যাকস’ হিসেবে খাওয়া হলেও ক্যালরির হিসেবে শিঙাড়া কিন্তু মোটেও হালকা নয়

শিঙাড়া খেলে কি ওজন বাড়ে

কাজের ফাঁকে হালকা ক্ষুধা পেলে ঝটপট স্ন্যাকস হিসেবে এক-দুটি শিঙাড়া খেয়ে নেন অনেকেই। ‘হালকা স্ন্যাকস’ হিসেবে খাওয়া হলেও ক্যালরির হিসেবে শিঙাড়া কিন্তু মোটেও হালকা নয়। শিঙাড়া উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন একটি খাবার। এক কাপ ভাতের প্রায় কাছাকাছি পরিমাণ ক্যালরিই থাকতে পারে একখানা শিঙাড়ায়। এমনকি বহু দোকানে একই তেল দিয়ে বারবার ভাজার কাজটিও সেরে ফেলা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই শিঙাড়া সুস্বাদু হলেও তা খাওয়ার আগে আরেকবার ভাবুন।

এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানালেন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।

ওজন বাড়ার কারণ যখন

একজন ব্যক্তির সুস্থতার জন্য রোজ যতটা ক্যালরি প্রয়োজন, তা সারা দিনের খাবারের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হয়। ব্যক্তিভেদে এই ক্যালরির পরিমাণটা আলাদা। এর চেয়ে বেশি গ্রহণ করলেই কিন্তু মুশকিল। অতিরিক্ত ক্যালরির কারণে আপনার ওজন বাড়তে থাকবে। অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়ানোও কঠিন। তিন বেলার মূল খাবারের বাইরেও আমরা নাশতা হিসেবে অনেক ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। সবটা মিলিয়েই ক্যালরির পরিমাণটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে হয়। আপনি যদি প্রায়ই উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করেন, তাহলে সারা দিনের ক্যালরি গ্রহণকে সেই নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে ওজন বাড়াই স্বাভাবিক। এমনই এক উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার শিঙাড়া।

শিঙাড়ার আকার যত বড়, ক্যালরির মাত্রাও তত বেশি

কী আছে শিঙাড়ায়?

শিঙাড়ায় পুর হিসেবে দেওয়া হয় আলু, যা শর্করার উৎস। বাইরের স্তরটাও শর্করা। সব মিলিয়ে শিঙাড়ায় থাকে প্রচুর শর্করা। শিঙাড়া ভাজা হয় ডুবো তেলে। সব মিলিয়ে এতে ক্যালরির মাত্রা থাকে অনেক বেশি। শিঙাড়ার আকার যত বড়, ক্যালরির মাত্রাও তত বেশি। বেশি আলু দেওয়া হলে বেড়ে যায় ক্যালরির মাত্রা। ৮০ গ্রাম ওজনের অর্থাৎ, বড় আকারের একটি শিঙাড়ায় প্রায় ২৩০- ২৪০ ক্যালরি থাকতে পারে, যেখানে মাঝারি দানার চাল থেকে তৈরি এক কাপ (১৫০ মিলিলিটার মাপের কাপ) ভাতে প্রায় ২০০-২৪০ ক্যালরি থাকে। একজন সুস্থ ব্যক্তি কালেভদ্রে স্ন্যাকস হিসেবে একটি শিঙাড়া খেতেই পারেন। তবে প্রায়ই খেলেই বিপত্তি, এমনকি পরিমাণে ‘মাত্র একটি’ করে হলেও। শিঙাড়ার পরিমাণ বেশি হলে যে ক্ষতিটাও বেশি, তা তো বুঝতেই পারছেন। শিঙাড়ার সঙ্গে যদি সস বা কেচাপ গ্রহণ করা হয়, তাহলে ক্যালরির মাত্রা আরও বাড়বে। তেলেভাজা শিঙাড়ার চেয়ে বেকড শিঙাড়ায় মোট ক্যালরি খানিকটা কম। তবে সেটিও খুব একটা গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যে নয়, কারণ তাতে তেল না থাকলেও কিন্তু শর্করা তো একই থাকছে।

নাশতার বিকল্পও নয়

সকালের মূল নাশতা বাদ দিয়ে খালি পেটে ‘হালকা নাশতা’ হিসেবে শিঙাড়া খাওয়াটাও স্বাস্থ্যকর নয়। এতে অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে। সকালে সুষম নাশতা হিসেবে পর্যাপ্ত আমিষসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। আলুর শিঙাড়া থেকে কিন্তু পর্যাপ্ত আমিষটা পাচ্ছেন না আপনি।

কোন তেলে শিঙাড়া ভাজা হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি

তেল-লবণবৃত্তান্ত

শিঙাড়ায় বেশ খানিকটা বাড়তি লবণ যোগ করা হয়। তাই রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি থাকে। রক্তে চর্বিও বাড়তে পারে নিয়মিত শিঙাড়া খেলে। রক্তনালিতে চর্বি জমা হলে যেমন রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি থাকে, তেমনি হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। কোন তেলে শিঙাড়া ভাজা হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। ব্যবহৃত তেল দিয়ে ভাজা যেকোনো খাবারই এড়িয়ে চলুন।

শিঙাড়া ছাড়াও

শিঙাড়া যেমন ‘হালকা’ নয়, তেমনি এমন আরও অনেক খাবারই আমরা ‘হালকা’ নাশতা হিসেবে খেয়ে ফেলি হরহামেশা। এই যেমন স্যান্ডউইচ, পুরি কিংবা বার্গার। এ ধরনের একটা খাবার থেকে আপনি ঠিক কত ক্যালরি পাচ্ছেন, নির্ভর করছে খাবারের আকার, ধরন এবং উপকরণগুলোর ওপর। তবে সংখ্যাটা নিঃসন্দেহেই খুব ছোট নয়! ধরুন, আপনি দুপুরে অফিসে ভাত খেলেন না। কিন্তু বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে একটি স্যান্ডউইচ খেলেন। এই ‘সামান্য’ একখানা স্যান্ডউইচ থেকেই কিন্তু আপনি প্রায় ২৫০-৩৫০ ক্যালরি পেতে পারেন। অর্থাৎ, এক কাপ ভাতের চেয়েও বেশি। বার্গার থেকে পাওয়া ক্যালরির পরিমাণ কিন্তু হতে পারে আরও অনেক অনেক বেশি। প্রায় ২৫০- ৭৩৫ ক্যালরি পর্যন্ত থাকতে পারে একটা বার্গারে। আচ্ছা স্যান্ডউইচ, বার্গার বাদ। আপনি হয়তো দুপুরে ভাত না খেয়ে বিকেলে খেলেন দু-একটা পুরি। তাতেও কি নিস্তার আছে! একটা পুরিতেই থাকতে পারে প্রায় ১৮০ থেকে ৩০০ ক্যালরি। তার চেয়ে বরং মূল খাবার বাদ না দিয়ে সময়ের খাবার সময়েই খেয়ে নিন। আর এমন স্ন্যাকস গ্রহণ করুন, যাতে ক্ষুধা মিটবে, কিন্তু অত্যধিক ক্যালরি গ্রহণ হবে না।