ল্যাকমে ফ্যাশন উইকের চতুর্থ দিনের আসর শুরু থেকেই ছিল জমজমাট। শনিবার ছুটির দিন, তাই ফ্যাশনপ্রেমীদের ভিড়ও উপচে পড়েছে। এই প্রাঙ্গণে নামী ডিজাইনারদের দামি আর হাল ফ্যাশনের পোশাকের কেনাকাটা আরও জমে উঠেছে।
১৩ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এফডিসিআই ল্যাকমে ফ্যাশন উইক। গতবার দিল্লিতে এই জনপ্রিয় ফ্যাশন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। এবার মুম্বাইয়ে বসেছে সেই পুরোনো মেজাজে ল্যাকমে ফ্যাশন উইক। আজ রোববার সকাল থেকে ডিজাইনারদের বাহারি পোশাকের পাশাপাশি ল্যাকমের আসর মাতাচ্ছেন বিটাউন তারকারা। ল্যাকমের চতুর্থ দিনের আসর শুরু হয় তিন তরুণ ডিজাইনারের অভিনব প্রদর্শনের মাধ্যমে। মঞ্চে তাঁরা তুলে ধরেন উৎসবমুখী পোশাকের বাহার।
বরুণ চাক্কিলাম, সাক্ষী ভাটি ও অরবিন্দ আম্পুলার প্রদর্শনে উঠে এসেছিল গ্রীষ্মকালীন বিয়ে বা পার্টিতে দিন অথবা রাতের হালকা অথচ জমকালো পোশাক। বরুণ চাক্কিলাম সাদা, রুপালি, সোনালি রঙের গাউন, লেহেঙ্গা-চোলির বাহারি আয়োজন রেখেছিলেন। তিনি তাঁর সংগ্রহ ‘লিনোরা’র মাধ্যমে আলোকে নানাভাবে উদযাপন করেছেন। তাঁর এই শোয়ের শো–স্টপার ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী সারা আলী খান।
সাদা লেহেঙ্গা-চোলিতে দারুণ দেখাচ্ছিল সারাকে! ল্যাকমের মঞ্চে হাঁটা প্রসঙ্গে এই বলিউড কন্যা বলেন, ‘পোশাকটা বেশ আরামদায়ক। নিজেকে আরও তরুণ আর চনমনা মনে হচ্ছে। আমি এখন দুটি ছবির প্রচারণা একসঙ্গে করছি। একটা ছবিতে খাদির শাড়ি পরেছি, আর অন্য ছবিতে শর্ট ড্রেস পরেছি। তাই মনে হচ্ছে সারা সারাকে একটু হলেও খুঁজে পেয়েছে।’
সারাকে শেষ দেখা গেছে ওয়েবফিল্ম ‘মার্ডার মুবারক’-এ। গত বৃহস্পতিবার রাতে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। এদিকে ‘অ্যায় ওয়াতান মেরে ওয়াতান’ সিনেমায় তাঁকে দেখা যাবে বেতারযোদ্ধার চরিত্রে। এই দুই সিনেমার প্রচারণায় খুবই ব্যস্ত সময় কাটছিল তাঁর। গরম কফি উল্টে গায়ে পড়ে বুকের নিচে আর পেটের খানিকটা অংশ পুড়ে গেছে সারার। তবু পোড়া দাগ নিয়েই তিনি জিম করছেন। এবার ফ্যাশন শোতে হাঁটলেন শো–স্টপার হিসেবে।
এই আয়োজনেই অরবিন্দ আম্পুলা তাঁর ‘হুইসপারস অব এম্পায়ার্স’ শীর্ষক সংগ্রহের মাধ্যমে এক রঙিন প্রদর্শনী রেখেছিলেন। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য লাল, বেগুনি, নীলসহ নানা উজ্জ্বল রঙের উৎসবমুখর রাতের পোশাক এই আয়োজনে মেলে ধরেন অরবিন্দ।
তাঁর ডিজাইন করা গাঢ় নীল রঙের লেহেঙ্গা-চোলি আর দোপাট্টা পরে রাজকন্যার বেশে এসেছিলেন অভিনেত্রী ফাতিমা সানা শেখ। এদিন ল্যাকমের আসরে মডেল হিসেবে অভিষেক হলো তাঁর। নিজের স্টাইল বর্ণনা করতে গিয়ে ফাতিমা ঝলমলে হাসি হেসে বলেন, ‘ভাইয়ের টি–শার্ট উঠিয়ে পরে নিই। এতে পয়সার সাশ্রয় হয়। আর আরামদায়ক পোশাক। নিজের মন ভালো করতে হলে কোনো চরিত্রের মতো সেজে উঠি।’
‘দঙ্গল’ ছবি থেকে সানিয়া আর ফাতিমার বন্ধুত্ব ক্রমেই গাঢ় হয়েছে। সানিয়া মালহোত্রা এর আগে ল্যাকমের মঞ্চে একাধিকবার হেঁটেছেন। সানিয়ার থেকে কোনো টিপস নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে ফাতিমা বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওর বোঝাপড়া দুর্দান্ত। র্যাম্পে হাঁটার সময় ওকে দারুণ সুন্দর আর মিষ্টি লাগে। তবে ওর থেকে কোনো টিপস নেওয়া হয়নি। আমার ভয়ে লাগছিল যে র্যাম্পে হাঁটার সময় আমি পড়ে না যাই। তবে আমি মোটেও নার্ভাস ছিলাম না। বরং রোমাঞ্চিত ছিলাম।’
ডিজাইনার সাক্ষী ভাটি তাঁর এই আয়োজনের মাধ্যমে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যকে উদযাপন করেছেন। তিনি তুলে ধরেছেন চোখজুড়ানো কালার প্যালেট। তাঁর ডিজাইন করা ধূসর রঙের লেহেঙ্গা-চোলি পরে মঞ্চ আলোকিত করেছেন অভিনেত্রী শ্রুতি হাসান।
খ্যাতনামা ডিজাইনার অনুশ্রী রেড্ডি ল্যাকমের চতুর্থ দুপুরে উপহার দিয়েছেন ‘গুলাব-বাড়ি’। তাঁর এই প্রদর্শনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ভারতের হায়দরাবাদের রাজপরিবার নিজামদের পোশাকের ঐতিহ্য। তিনি মঞ্চে এনেছিলেন নিজাম রাজকন্যাদের উজ্জ্বল ফ্যাশন।
তাঁর ডিজাইন করা লেহেঙ্গা-চোলি পরে র্যাম্প উজ্জ্বল করেন বলিউড তারকা মালাইকা অরোরা। এদিন তাঁর পরনে ছিল সাগর-নীল রঙের ওপর হলুদ ফুলের অ্যাপ্লিক করা লেহেঙ্গা-চোলি।
ঋতিকা মিরচন্দানির প্রদর্শনে উঠে এসেছিল প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের মিশেল। তাঁর এই শোয়ের শো–স্টপার ছিলেন সদ্য বিবাহিত অভিনেত্রী রাকুল প্রীত সিং।
ল্যাকমের চতুর্থ রাতকে আরও আলোকিত করেন তাপসী পান্নু ও তৃপ্তি দিমরি। তাপসীকে ল্যাকমের মঞ্চে দেখা গেছে গৌরি-নয়নিকার পোশাক গায়ে। আর তৃপ্তি শেষ রাতে পরেন শান্তনু-নিখিলের ডিজাইন করা পোশাক।