ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব—সবখানেই ফ্যাশনে কোন ধরনের পোশাকে ‘রিচ লুক’ আসবে, সেটি নিয়ে কনট্যান্টের অভাব নেই। চট করে জেনে নেওয়া যাক, কোন ধরনের কাপড়ের ফেব্রিকে আপনাকে মার্জিত, রুচিশীল আর অভিজাত দেখাবে।
১. সফট অরগাঞ্জা
সময়ের সঙ্গে অরগাঞ্জার কদর বাড়ছে। খুবই হালকা ওজনের এক কাপড়। এই কাপড়ে যেকোনো রং খুবই সুন্দর দেখায়। অনেক বেশি পাতলা, সহজে কুঁচকে বা ছিঁড়ে যায় না, সুতি কাপড়ের মতো বায়ু শোষণের ক্ষমতা আছে। অরগাঞ্জা সিল্ক থেকে তৈরি হয়। তবে সিনথেটিক ফাইবার যেমন পলিয়েস্টার, নাইলন, রেয়ন থেকেও বানানো হয় অরগাঞ্জা। খাঁটি সিল্কের চেয়ে আবার এ ধরনের অরগাঞ্জা বেশি টেকসই ও সহজলভ্য হয়।
বিয়েতে আলিয়া ভাট সব্যসাচী মুখার্জীর নকশা করা আইভরি রঙের অরগাঞ্জা শাড়ি পরেছিলেন। এমনকি রণবীরের কুর্তা-পায়জামার সঙ্গেও ছিল অরগাঞ্জার ওড়না। লাক্সারি পোশাকেও অরগাঞ্জার কদর বাড়ছে। তবে অরগাঞ্জা শাড়িকে ট্রেন্ডে আনার ক্ষেত্রে কারিনা কাপুরের ‘বেবো’ লেখা শাড়িটাকে একটা বিশেষ ধন্যবাদ দিতেই হবে। এরপরই একই ধরনের শাড়িতে বেশ কয়েকজন বলিউড তারকা দেখা দেন। তারপরই এই ফেব্রিকের শাড়ি ভারত আর বাংলাদেশের মার্কেটে হট কেকের মতো বিক্রি হতে থাকে।
২. ভেলভেট
ভেলভেট বা মখমল কাপড়টার উৎপত্তি চীনে। মিং রাজবংশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হত। এরপর সারা বিশ্বের রাজপরিবারের অংশ হয়ে যায়। ভেলভেটের একটা বিলাসী মেজাজ আছে। এই ফেব্রিকটায় সমস্ত রং চকচকে দেখায় আর আলো পড়লে দেখতে লাগে আরও রাজকীয়। কাপড়টা নিজেই এত জমকালো যে এর ওপরে খুব বেশি নকশা বা কারুকাজেরও কোনো প্রয়োজন হয় না। ধনীদের ফেব্রিক হিসেবেই পরিচিত ভেলভেট।
৩. বেনারসি
‘এথনিক ড্রেসিং’য়ে বেনারসির কোনো বিকল্প নেই। ভারতের পুরোনো শহর বেনারস থেকে উৎপত্তি। এখন বাংলাদেশেও তৈরি হচ্ছে জমকালো এই ফেব্রিক। মূলত বিয়ের শাড়ির ফেব্রিক হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। তবে সময়ের সঙ্গে এখন বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি হচ্ছে এই কাপড়ে। এই ফেব্রিকে সোনা, রূপার সূক্ষ্ম কারুকাজও ব্যাপকভাবে হয়েছে। এর ওপর সাধারণত জরির কাজ জনপ্রিয়। ২০২৩ সালে নীতা ও মুকেশ আম্বানি কালচারাল সেন্টার আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে জীবনসঙ্গী নিক জোনাসের সঙ্গে ৬৫ বছরের পুরোনো একটি বেনারসি শাড়ি দিয়ে বানানো গাউনে দেখা দেন।
৪. পিওর মসলিন
আভিজাত্য আর মসলিন যেন সমার্থক। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জুড়ে আছে মসলিন। এই কাপড়ের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও ব্যবহারকারী ছিলেন মুঘল শাসকেরা। ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মসলিন তৈরি হতো। তবে সবচেয়ে ভালো মানের মসলিন হতো ঢাকায়, বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত পানাম নগরের গ্রামগুলোতে। শীতলক্ষ্যা নদীতীরের হাওয়া মসলিন কাপড় বুননের জন্য উপযোগী। ১৭০ বছর পর বাংলাদেশে আবার তৈরি হচ্ছে মসলিন।
৫. রাজশাহী সিল্ক
বিভিন্ন ধরনের সিল্কসহ রেশম থেকে তৈরি সাটিনজাতীয় কাপড়, তসর, অ্যান্ডি—এসবের ভেতর রাজশাহী সিল্ক, রাশিয়ান সিল্ক, চীনা সিল্ক ‘অ্যালিগেন্ট লুকে’র জন্য সবচেয়ে উপযোগী। তবে সিল্ক খুবই যত্নে রাখতে হয়। হালকা এই ফেব্রিকটি শাড়ি থেকে শুরু করে নানা ধরনের পার্টি ড্রেসেও এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
৬. জামদানি
শাড়ি থেকে শুরু করে ব্লেজার, স্যুট, ওড়না, কুর্তা, পাগড়ি, ঘাগরা—সবখানেই এখন জামদানির জয়জয়কার। বস্ত্রে ফুটিয়ে তোলা জ্যামিতিক আর ফুল–লতাপাতার মতো সাধারণ নকশাও যে গুপ্তবিদ্যা হতে পারে, তার উদাহরণ জামদানি। শত শত বছর ধরে জামদানি বোনা হচ্ছে, কিন্তু এর নকশা কোথাও আঁকা থাকে না। সেই নকশা সংরক্ষিত থাকে তাঁতির স্মৃতির মহাফেজখানায়। অথচ এতে রয়েছে অঙ্কের জটিল হিসাবনিকাশ! ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন চাঁপা জলপাই রঙের জামদানি শাড়িতে সাড়া ফেলেন।