লেদারের মতো দেখতে কিছু ব্যাগ সম্প্রতি অনলাইন–দুনিয়ায় ভাইরাল। ২০২৩ সালে ‘শিক্ষার্থীদের অস্কার’–খ্যাত ‘হাল্ট প্রাইজ’ পেয়েছে এই ব্যাগের প্রকল্প ‘বানোফি লেদার’। ভারতের মুম্বাইকেন্দ্রিক প্রকল্পটির উদ্যোক্তা জিনালি মোদি ও তাঁর দল হাতে তুলেছে পুরস্কার। কলাগাছের বাকল আর পাতা দিয়ে ফেব্রিক তৈরি করে ‘বাস্তব সমস্যার সমাধান করে, এ রকম আইডিয়া’ বিভাগে সেরা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরা। জিনালি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে স্নাতোকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন। তা ছাড়া উদ্যোক্তা হিসেবেও দুই বছর হলো যাত্রা শুরু করেছেন।
প্রতিবছর সারা বিশ্বে ১০০ বিলিয়ন কলা খাওয়া হয়। আর সারা বিশ্বে যত কলার চাহিদা, তার শতকরা ২৫ ভাগ পূরণ করে ভারত। এক টন কলা উৎপাদন করতে চার টনের বেশি বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর ভেতরে রয়েছে কলাগাছের পাতা ও বাকল। এগুলোর খুব কম অংশই পুনরায় ব্যবহৃত হয়। জিনালির প্রতিষ্ঠান থেকে যে সমস্ত পণ্য তৈরি হয়, তার সবই তৈরি হয় কলাগাছের তন্তু থেকে। ইতিমধ্যে তাঁর প্রতিষ্ঠান ১ লাখ কেজি কলার বাকল ও পাতা থেকে ফেব্রিক তৈরি করেছে।
বানোফি লেদারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ৬০ জন প্রান্তিক কলাচাষি। এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জিনালি বলেন, ‘সত্যিকারের টেকসই ফ্যাশন সহজ কথা নয়। আর সেটাই আমরা করে দেখাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কেননা, প্রকৃতি ধ্বংস করে ফ্যাশন মানে মানবসভ্যতারই ধস। প্রকৃতি আর মানবসভ্যতার ভেতরে নিঃসন্দেহে প্রকৃতিই টিকে থাকবে। তাই টেকসই ফ্যাশন কোনো আদিখ্যেতা নয়, বরং নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ।’
লেদার বা প্রাণিজ চামড়ার সত্যিকারের একটা ব্যাগ বানাতে কী পরিমাণ পানি খরচ হতে পারে বলে আপনার ধারণা? ১০ হাজার লিটার! হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন, ১০ হাজার লিটার! একটা লেদারের ব্যাগ বানাতে গড়ে এই পরিমাণ পানিই লাগে। সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ আর উপজাত হিসেবে পরিবেশের জন্য বিষাক্ত উপাদানও উৎপাদিত হচ্ছে টনে টনে।
বানোফি লেদার–এর এই উদ্যোক্তা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাগ বিক্রিও করেছেন। জিনালি আরও জানান, এই ব্যাগ তৈরিতে শতকরা ৮০ ভাগ কার্বন নিঃসরণ কমানো হয়েছে। পানির প্রয়োজনও কমে গেছে ৯০ শতাংশ (প্রতিটি ব্যাগ তৈরিতে গড়ে ১ হাজার লিটার পানি ব্যবহার করা হয়েছে)। আর এই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছুই উৎপাদিত হয়নি। এই ব্যাগ উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় পরিবেশের জন্য বিষাক্ত কিছুই তৈরি হয়নি।
ব্যাগ ছাড়াও কাগজ আর ডায়েরিও তৈরি করেছে এই প্রতিষ্ঠান। চলছে কাপড় তৈরির প্রক্রিয়া। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি পোশাকও বানিয়েছে।
ভারতে প্রতিবছর অন্তত ৯২ মিলিয়ন টন কলাগাছের বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এগুলোর প্রায় কিছুই নতুন উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় না। আর ওগুলোকে আপসাইকেল করে আরও বেশি ফেব্রিক উৎপাদন করা গেলে তা টেকসই ফ্যাশনকে এগিয়ে নেবে অনেকটাই। একই সঙ্গে এই প্রক্রিয়া অনেকটাই পরিবেশবান্ধব।
সূত্র: ইয়েল স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট, এনবিসি ও ইনস্টাগ্রাম