বাংলাদেশি ফ্যাশন ডিজাইনার সামি আলমের নকশা করা জামদানি জ্যাকেটে দেখা দিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই। ১১ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ফরাসি দূতাবাস আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ আরও অনেকে।
ফ্রান্সের জাতীয় পতাকায় আছে তিনটি রং—লাল, সাদা ও নীল। ম্যারির জন্য যে জ্যাকেকটি সামি বানিয়েছেন, সেটির রং গাঢ় নীল। কাপড় হিসেবে বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশের ফ্যাশনে আভিজাত্যের প্রতিনিধিত্ব করা জামদানি। সামি আলম বলেন, ‘ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জামদানি আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলে। নেভি ব্লু ১০০ কাউন্টের জামদানিতে সোনালি সুতায় তুলে ধরেছি নিমপাতার মোটিফ। কলার আর হাতার কাফে রুপালি সুতায় ফুটে উঠেছে নকশাটি। জ্যাকেটের নিচের দিকে তিন পরতের ঢেউখেলানো পাড় রেখেছি। ফলে একটা ইন্দো–ওয়েস্টার্ন তথা একই সঙ্গে স্থানীয় আবার বৈশ্বিক রূপ ফুটে উঠেছে।’
সামি আলম আরও জানান, জ্যাকেটটি দেখে ম্যারি খুব প্রশংসা করেছেন। এমনকি অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরাও জামদানি জ্যাকেটটির সুনাম করতে ভোলেননি। সামি বলেন, ‘একজন ফ্যাশন ডিজাইনার যখন আন্তর্জাতিকভাবে নিজের কাজের মধ্য দিয়ে দেশ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য তুলে ধরেন এবং তা যখন সব মহলে সমাদৃত হয়, তখন এর চেয়ে বড় পাওয়া আর হয় না।’
ম্যারি জ্যাকেটটি পরেছেন ভারতের যোধপুরের লাল পায়জামা আর সাদা টপ দিয়ে। ফলে পোশাকের তিনি ফ্রান্সের রংগুলোই তুলে ধরেছেন। এর সঙ্গে গলায় পরেছিলেন বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী অলংকার সোনার হার। ঠোঁটে লিপস্টিক আর মিনিমালিস্টিক সাজেই সম্পূর্ণ হয়েছে বিশেষ দিবসে তাঁর লুক।
১৪ জুলাই ফ্রান্সের ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এদিন ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ বাস্তিল দুর্গ দখল করে, যা ফরাসি বিপ্লব ও আধুনিক ফ্রান্সের একটি প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবস, যা বাস্তিল দিবস হিসেবেও পরিচিত।
২০২৩ সালেও ফ্রান্সের জাতীয় দিবসে ম্যারির জন্য স্কার্ফ বানিয়েছিলেন সামি আলম। সেবার রাজশাহী সিল্কের ওপর রিকশা পেইন্টিংয়ে ফুটে উঠেছিল টেপা পুতুল, বেঙ্গল টাইগারসহ বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গ। ম্যারি বিভিন্ন আয়োজনে পরেছেন এই স্কার্ফ।
এদিন ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের (বাংলাদেশ–ফ্রান্স) সম্পর্ক এখন যতটা জোরালো, আগে কখনোই তেমনটা ছিল না। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট (এমানুয়েল) মাখোঁ বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্কে উচ্চ মাত্রার বিশ্বাস ও পারস্পরিক আস্থা গভীর হয়েছে। (এখন) দুই দেশের নেতাদের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক আছে।’
গত বছর ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বাংলাদেশে এসে এ দেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।