অফিস না বলে বিবি রাসেলের ডেরা বলাই সমীচীন। একপাশে একজন রিকশা পেইন্টার ট্রেতে আঁকছেন। বিবি রাসেল এই পড়ছেন, এই কথা বলছেন, গান শুনছেন। ‘অফিস টাইম’ পুরোটা সময় বাজতে থাকে গান। শুনতে শুনতেই চলে মিটিং আর ইন্টারভিউ দেওয়া। অফিসে ওঠার সিঁড়ি, দেয়ালজুড়ে মডেল আর ডিজাইনার বিবি রাসেলের বিভিন্ন সময়ের ছবি। হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঘুরে সেগুলো দেখতে দেখতেই হয়ে যায় টাইম ট্রাভেল। সেসব ছবিতে বিবির সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, হলিউড-বলিউড তারকা, সংস্কৃতিকর্মী আর প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বদের চোখে পড়ে। ১৯৭৬ সালে তিনি লন্ডন কলেজ অব ফ্যাশন থেকে স্নাতক করেন। তাঁর আন্তর্জাতিক পুরস্কারের তালিকাটা বেশ লম্বা। ১৯৯৭ সালে ফরাসি ম্যাগাজিন ‘এলে’ তাঁকে ‘উইমেন অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার তুলে দেয়। ২০০১ সালে তিনি ইউনেসকোর ‘আর্টিস্ট ফর পিস অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি ইউএনএইডসের শুভেচ্ছাদূত। স্পেনের রাজার কাছ থেকে পেয়েছেন ‘দ্য ক্রস অব অফিসার অব দ্য অর্ডার অব কুইন ইসাবেলা’। ২০১৯ সালে তাঁকে আজীবন সম্মাননা জানায় ব্রিটিশ বাংলাদেশ ফ্যাশন কাউন্সিল। ‘মনের মানুষ’ সিনেমার কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। জিনাত শারমিন-এর সঙ্গে কথা বললেন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা মডেল ও ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল।
আপনার অফিসটা মতিঝিলেই কেন?
এটা আমার বাবার অফিস ছিল। আমার বাবা সাংস্কৃতিক, সাংগঠনিক কাজ করতেন। সেটি-ই উত্তরাধিকারসূত্রে আমি পেয়েছি। আমার প্রতিষ্ঠান একেবারে আমার নিজের পয়সায় চলে। তা ছাড়া আমার বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। এ এলাকার নানান জায়গায় আমার ছোটবেলার স্মৃতি ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরি। ১৯৯৫ সালে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে এই অফিস খুলি।
আপনার জন্ম তো চট্টগ্রাম?
হ্যাঁ, জন্ম চট্টগ্রাম। তবে আমাদের সব ভাইবোনের বেড়ে ওঠা এই পুরান ঢাকায়। আমার যখন দেড় বছর বয়স, তখন আমার পরিবার ঢাকায় শিফট করে।
আপনার ছোটবেলার পুরান ঢাকা কেমন ছিল?
আমরা তিন বোন, দুই ভাই। আমরা তিনজনই কামরুন্নেসায় (সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়) পড়েছি। তখন আব্বা-আম্মাকে স্কুলে দিয়ে আসা নিয়ে আসা লাগত না। পুরান ঢাকা তখন সাংস্কৃতিকভাবে খুবই সমৃদ্ধ। সুফিয়া (কবি সুফিয়া কামাল) নানির মেয়েরা (সাঈদা কামাল, সুলতানা কামাল), লায়লা হাসান (নৃত্যশিল্পী)—আমরা একসঙ্গেই বড় হয়েছি। আমাদের হাটখোলার বাসার পাশেই ছিল (শেরেবাংলা) এ কে ফজলুল হকের বাড়ি। ওঁদের ছেলেমেয়েরা, (আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ সৈয়দ আজিজুল হক) নান্না মিয়ার ছেলেমেয়েরা, পারভীন হাসান, জসীম উদ্দীন ভাই...সব একই এলাকার। মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু, জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, (এস এম) সুলতান ভাই, আব্বাস উদ্দীন ভাই, আব্দুল আলিম ভাই, হরলাল রায়দের সঙ্গে আমার বাবা–মায়ের পরিচয়, ওঠাবসা ছিল। সবাই আমাদের বাসায় আসতেন। আমার মা রেঁধেবেড়ে খাওয়াতেন। ‘প্রথমা’ থেকে ‘অবরুদ্ধ ঢাকা ১৯৭১: গোপন প্রতিরোধকারীদের সাক্ষাৎকার’ নামে যে বইটা লেখা হয়েছে, ওখানে আমার বাবা–মায়ের (সংস্কৃতিজন মোখলেসুর রহমান সিধু এবং শামসুন্নাহার রহমান) অবদানের কথা লেখা আছে। এককথায় দেশের রাজনীতি, সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি—সব অঙ্গনের সেরা মানুষদের চোখের সামনে দেখে আমার বড় হওয়া। একটা মানুষের গড়ে ওঠার পেছনে তাঁর বাড়ির শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি কাকে দেখিনি! দেশের মহিরুহদের কাকে দেখে আমি বড় হইনি! সবার সঙ্গে আমাদের পারিবারিকভাবে ওঠাবসা ছিল।
আপনি তো গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন?
আমি কোনোকালেই ভালো ছাত্রী ছিলাম না। আমার বড় দুই বোন, ভাইয়েরা খুবই ব্রিলিয়ান্ট ছিল। আমি কেবল পাস করার জন্য পড়তাম। হোম ইকোনমিকসে সিদ্দিকা (কবির) আপা, হুসনে বানু খানম, (ভাষাসৈনিক) সাবেরা মোস্তফা—এঁরা ছিলেন আমার শিক্ষক। সবাই আমাকে খুব পছন্দ করতেন।
আপনার মা-ও তো সেলাই করতেন। সেখান থেকেই কি ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার অনুপ্রেরণা?
তখনকার মায়েদের মতো আমার মা-ও টুকটাক সেলাই করতেন। অন্য বোনেরা খুব খুশি থাকত। আমার সেগুলো পছন্দ হতো না। আমি বাবাকে বললাম। আমার বাবা আমাকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দিল। তাই একটু বড় হওয়ার পর নিজের পোশাক আমি নিজেই সেলাই করতাম। আমাদের বাসায় সব ধরনের পত্রিকা, ম্যাগাজিন আসত। আমরা পরীক্ষায় ভালো করলে আমাদের ‘দেশ’, ‘সন্দেশ’...আমরা ভাই-বোনেরা পরীক্ষায় ভালো করলেই আমাদের রচনাবলি কিনে দিত বাবা-মা। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, শরৎচন্দ্র...আমি কোনো দিন প্রথম হইনি। ভাই-বোনেরা এসব বই পেত। আমি সব পড়তাম। ১৬ বছর বয়সে আমার বাবা কোকো শ্যানেলের ওপর একটা বই উপহার দিয়েছিল। সেই বই আমার ভেতরে ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার ইচ্ছেকে উসকে দিয়েছিল। আমার মা খুব ভালো সেতার বাজাত। আমি বেহালা বাজাতাম। বেহালা শিখেছি ছায়ানটে, মতিলাল বিশ্বাসের কাছে। গান শিখেছি। তবে চর্চা করি না। তবে সারাক্ষণ গান শুনতে থাকি।
একাত্তরে তো আপনি দেশেই ছিলেন? ওই সময়ের স্মৃতি কিছু শেয়ার করবেন?
সেভেনটি ওয়ানটা বাদ দিয়ে কথা বলি। আমার পরিবার হানড্রেড পারসেন্ট মুক্তিযুদ্ধে ইনভলভ ছিল। সেই ইতিহাস বইতে পেটেন্ট করা। আমার মৃত্যুর পর লন্ডন থেকে প্রকাশিত হবে। আমি চলে গেলে আমার প্রতিষ্ঠানটাকে তো উঠতে হবে!
মুক্তিযুদ্ধের পর লন্ডন কলেজ অব ফ্যাশনে পড়তে গেলেন?
আমি ছোটবেলা থেকে খুব ক্রিয়েটিভ ছিলাম। তবে টেকনিক্যাল কাজ কিছু পারতাম না। আমাকে আট মাস ধরে রিজেক্ট করেছিল। কেননা, তখন আমার ইংরেজি এত ভালো ছিল না। এরপর একটা মার্কিন স্টুডেন্ট ড্রপ করল। ওর জায়গায় আমাকে নতুন করে ভাইভাতে ডাকল। আমার সঙ্গে কথা বলে ওরা বুঝল, যে সৃজনশীল, স্মার্ট, আত্মবিশ্বাসী। আমাকে নিল। তবে শর্ত জুড়ে দিল। যেহেতু আমি টেকনিক্যাল কাজ কম জানি, তাই এক্সট্রা ক্লাস করতে হবে। এত ব্যস্ত থাকতাম যে প্রথম কয়েক মাস সূর্য দেখারই সময় পাইনি। ভোরে উঠে পোস্ট বিলি করতাম। নিজের খরচ নিজেই জুগিয়েছি। কেননা, এম্বাসির মাধ্যমে আমার স্কলারশিপ হবে না। আমার পড়াশোনার ব্যাকগ্রাউন্ড সাপোর্ট করে না। আমি তো আর্টস নিয়ে আগে পড়িনি। গভীর রাত পর্যন্ত ক্লাস করতাম। এক বছর পর একটা স্কলারশিপ পাই। লন্ডন কলেজ অব ফ্যাশন বিশ্বের ফ্যাশন স্কুলগুলোর ভেতরে অন্যতম সেরা। সেখানে আমার গ্র্যাজুয়েশন-সংগ্রহ প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছিল। এখন যে বল গাউন এটা-সেটা বানানো হয়, এগুলো আমি তখন স্টুডেন্ট থাকার সময়ে করে এসেছি। আমার জন্য খুবই সহজ।
তারপর মডেলিং শুরু করলেন?
মডেলিং আমার কোনোকালেই ইচ্ছা, শখ, স্বপ্ন ছিল না। আমার শিক্ষকেরা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। বলেছিলেন মডেলিংয়ে আমার সম্ভাবনা আছে। তখনকার ওয়ার্ল্ডের টপ ম্যাগাজিন হারপারস বাজারের মডেল হিসেবে শুরু করি। বারবারা ডেইলি আমার মেকআপ করেছিল, হেয়ার করেছিল জন ফ্রিদা। সেই থেকে শুরু। ফেস অব ভোগ, কসমোপলিটন, ম্যারি ক্লের—বিশ্বের প্রথম শ্রেণির সব ম্যাগাজিনে দেখা গেছে আমাকে। মডেলিং আমাকে ম্যাচিউর করেছে, বিশ্ব দেখিয়েছে। মিডিয়া আমাকে তৈরি করেছে। এখনো মিডিয়া আমাকে সাপোর্ট দিচ্ছে। [মডেল হিসেবে] আমি দেশে কোনো কাজ করিনি। ২০ বছর ইন্টারন্যাশনালি কাজ করেছি। আমি তখন প্রতিবছর দেশে আসতাম, বাবা-মায়ের কাছে। মডেলিং এখন অন্য রকম হয়ে গেছে। মডেলরা কথা বলতে পারে না। দে ওয়াক লাইক হ্যাঙ্গারস। কাজটা সহজ নয়, খুবই কঠিন।
এখন মডেলিং কেমন?
বাংলাদেশের মডেলিং নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। মডেল হলেই বল গাউন পরে ঘুরে বেড়াতে হবে, মেকআপ, এক্সট্রা আইল্যাশ পরে ফুটানি মারতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এই যে (মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ শাম্মী ইসলাম) নীলা মেয়েটা, একে আমি একটা কারণেই (মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চের জন্য) পোশাক করে দিয়েছি, ও আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে, একবারে মেকআপ ছাড়া। খুবই সিম্পল, খুবই হাম্বল। অন্যদের কথা বলতে চাই না। একবার এক সুন্দরী আমাকে ফোন করে পোশাক বানিয়ে তার বাসায় পৌঁছে দিতে বলেছিল। এখনকার মডেলরা শিখবে না কিছু? খালি দেখতে সুন্দর হলেই হলো?
আপনার পর বিবি প্রোডাকশনসের কী হবে?
আমার প্রতিষ্ঠানে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা প্রত্যেকে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। ওঁরা কেউ আমার রক্তের সম্পর্কের না, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি। আপনি ওদের মাসে ১০ লাখ টাকার চাকরি অফার করেন, দেখেন, ওরা কেউ যাবে না। গ্রামের মানুষ, তাঁতিরা আর ওরাই আমাকে দেখে রাখে। কেননা, দিনের শেষে তো আমি একাই বাড়ি ফিরি। ঘরের সব কাজও আমি করি। গুলশানে আমার মায়ের বাড়িটাতে। ফলে ভাড়া দেওয়া লাগে না। আমার ওপর অনেক স্টোরি আছে। আমার সিনেমা বুক করে রেখে দিয়েছে। বই বুক করে রেখে দিয়েছে। দুই ছেলেকে মানুষ করেছি। ওরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একজন যুক্তরাজ্যে, আরেকজন যুক্তরাষ্ট্রে বড় চাকরি করছে। আমার দু পয়সা যা আছে, সব এদের। ওরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আপনি কেন বিবি প্রোডাকশনকে আরও বড় করলেন না? আপনার তো সুযোগ ছিল, এখনো আছে...
হ্যাঁ। এখনো যদি আমি ব্যাংকে যাই, কোথাও যাই, আমার বয়স জিজ্ঞেস করবে না। আমার নামই যথেষ্ট। আমি নিজের দশটা আউটলেট দিতে চাই না। আমি কেবল বাংলাদেশকে অনেক ওপরে দেখতে চাই। আর সে কারণে তাঁতিদের নিয়ে উঠতে চাই। আমার কাজটা একেবারেই উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। তাঁতির বাড়ির সন্তানেরা যেন লেখাপড়া করে শিক্ষিত হয়, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে, এটা চাই। আমার স্লোগান ‘ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট’। আমার এই স্লোগান তো এখন পুরো বিশ্ব নিয়ে নিয়েছে। আমাকে একসময় এক দেশ থেকে আরেক দেশে নিয়ে যাওয়া হতো প্রাইভেট প্লেনে। আমি যদি টাকা করব, তাহলে কেন দেশে ফিরব? যেদিন মিডিয়া এটা বুঝতে পারবে যে টাকা কামাই করা আমার উদ্দেশ্য নয়, কেবল দেশকে তুলে ধরা, দেশীয় পণ্যকে তুলে ধরাই আমার কাজ; সেদিন হয়তো বাংলাদেশের মিডিয়া আমার কাজকে গুরুত্ব দেবে। যে দশটা দোকান করে, তার ফিলোসফি আর আমার ফিলোসফি এক না। আমি একদম একা থাকি। আমার অফিসে কেউ ২ তারিখে মাইনে পায় না। ১ তারিখ অথবা আগের মাসের শেষ দিন। একটা মেয়ে দেশের তাঁতিদের তৈরি গামছা নিয়ে বিশ্বের বড় বড় মানুষকে পরিয়ে দিয়েছে। আমি ইউনেসকো, ইউএনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে গিয়ে সেশন করে এসেছি। এগুলো তো এমনি এমনি হয়নি। ‘ডিজাইনার’ আর ‘শপ ওনার’ দুটি ভিন্ন বিষয়। আমি ব্যবসা করে টাকা কামাতে দেশে ফিরিনি। আমাকে পয়সা টানে না। আমি যদি শোরুমই করতে চাইতাম, তাহলে দেশে ফিরলাম কেন? আমি তাঁতিদের নিয়ে, গ্রামের মানুষকে নিয়ে বড় হতে চাই। ওদের পয়সা দিতে চাই।
আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা?
একেবারেই মধ্যবিত্ত। নিম্নমধ্যবিত্ত। তরুণ। বাংলাদেশের যে তরুণেরা দেশের বাইরে পড়াশোনা করছেন, ওঁরা আমার পোশাক নেন আর সাধারণ মানুষ যাঁরা দেশকে ভালোবাসেন, শিল্প বোঝেন। আমার কাপড়, সেলাই সবই আলাদা। আমি সব সময় এভাবেই সাদামাটাভাবে চলাফেরা করি। কোনো অনুষ্ঠানে বড় আয়োজনে গেলে শাড়ি পরি। চশমা পরি। এটুকুই।
ঈদে নতুন সংগ্রহ আসছে?
হ্যাঁ, আসছে। আপনারা তো খোঁজ রাখেন না, অনেকের ঈদের সংগ্রহের ৯০ শতাংশ কাপড় আসে বাইরে থেকে। আমারটা তাঁতিদের তৈরি। পাশের দেশে তো আমিও কাজ করি। বিভিন্ন সময়ে ডাকে। যদিও সময় পাই না। ওরাই জানায় যে ওদের কোত্থেকে কেত্থেকে থান ধরে ধরে কাপড় ঢুকেছে এখানে। তাই এখানকার ডিজাইনাররা যখন নিজেদের সংগ্রহের কথা বলে, ওদের জিজ্ঞেস করবেন, কাপড়টা কোত্থেকে এসেছে। কেননা, খাবারের পর পোশাক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি তিন দিন না খেয়ে থাকতে পারবেন। কিন্তু পোশাক ছাড়া থাকতে পারবেন না। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব ভারত রেজিস্ট্রেশন করার পর থেকে আমি ভারতের সব কাজ আপাতত বাদ দিয়ে দিয়েছি। কোথাও যাচ্ছি না। অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে নতুন বলিউড তারকারা সবাই আমার ডিজাইনের মূল্যায়ন করেন। আমি তাঁদের ওখানে গিয়ে কাজ করি। কিছুই নিয়ে আসি না।
আপনি বলেন যে বাংলাদেশ আপনাকে সেভাবে মূল্যায়ন করে না, ডাকে না, পুরস্কার দেয় না, এটা নিয়ে অভিমান, মন খারাপ হয়?
নাহ, সবচেয়ে বড় কথা আমার সময় নেই। পুরস্কার নিতে ডাকবে, সেখানে নিজের কাজের ক্ষতি করে সময় নষ্ট করে যেতে হবে...আমি নিজের কাজ নিয়ে নিজের মতো আছি। ভালোই আছি। আমাকে মিথ্যা কথা বলতে হয় না। শঠতার প্রশ্রয় নিতে হয় না। ভণ্ডামির আশ্রয় নিতে হয় না। চোরামি করতে হয় না। তাই দিন শেষে আমি সুখী।