ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনকে ২১তমবারের মতো কানের লালগালিচা থেকে হাত নাড়তে দেখল বিশ্ব। হাজারো ক্যামেরায় বন্দী হলো সেই মুহূর্ত। পরের কয়েক মিনিটের ভেতর ইন্টারনেটে ভাইরাল ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভারতীয় অভিনেত্রীর লুক। তবে এবার আর মন জয় করতে পারলেন না ৫০–এ দাঁড়ানো, ভাঙা হাত নিয়ে লালগালিচায় হাঁটা ঐশ্বরিয়া। এবারও ফরাসি কসমেটিক ব্র্যান্ড ল’রিয়েলের পণ্যদূত হিসেবে হাজির হয়েছেন তিনি। কানের লালগালিচায় ঐশ্বরিয়ার স্বাভাবিক সৌন্দর্য, ফ্যাশনবোধ আর স্টাইলিংয়ের মাধুর্যে একসময় নিয়মিত মুগ্ধ হয়েছে বিশ্ব। দু–একবার সমালোচিত যে হননি, তা–ও নয়। তবে এবারের সমালোচনা যেন ছুঁয়ে ফেলছে ২০১৬ সালের বেগুনি লিপস্টিককে। কেন এত ট্রলের শিকার হচ্ছেন সর্বকালের সেরা এই বিশ্বসুন্দরী?
ঐশ্বরিয়া রাইকেও যে একদিন নিজের ‘ফ্যাশন সেন্স’ আর ‘স্টাইলিং’ নিয়ে কথা শুনতে হবে, তা কি কেউ কখনো ভেবেছিল? সেটাই ঘটল ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে।এখন পর্যন্ত দুটো পোশাকে কানের লালগালিচা মাড়িয়েছেন ৫০ বছর বয়সী ঐশ্বরিয়া। দুটো পোশাকেই ঐশ্বরিয়ার লুককে বলা হচ্ছে ‘ডিজাস্টার (বিপর্যয়)’।ঐশ্বরিয়া প্রথমে দেখা দেন ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনার ফাল্গুনী ও শেন পিককের কালো, সাদা আর সোনালি রঙের একটা গাউনে। পোশাকের রঙের বিন্যাস, শেপ, কাট, নকশা, ফোলা হাতা, সোনালি ফয়েল পেপারে বানানো ফুল, গাউনের ওপর মেটালিক নকশা, গাউনের বাড়তি অংশ, ট্রেইন—সবটাই নাকি বেখাপ্পা। অতিরিক্ত নাটকীয়তায় পোশাকটি ভারসাম্য হারিয়েছে।কানের চওড়া স্বর্ণের হুপ রিংটিও পছন্দ করেননি ফ্যাশনবোদ্ধারা।ঐশ্বরিয়ার ইনস্টাগ্রাম পোস্টের নিচে ভক্তরা লিখেছেন, ‘আমরা আপনাকে ভালোবাসি। আর সে জন্যই চাই, আপনি আপনার স্টাইলিস্ট বদলান। যোগ্য কাউকে নিয়োগ দিন। ফ্যাশনের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে কানের লালগালিচায় বন্ধুবান্ধব বিচার করে পোশাক পরবেন না।’দ্বিতীয় যে পোশাক পরেছেন ঐশ্বরিয়া, সেটিকে বলা হচ্ছে কানের লালগালিচায় তাঁর সর্বকালের সবচেয়ে বাজে পোশাকগুলোর একটি। এটির চকমকে ভাব আর নাটকীয়তা ছাড়িয়ে গেছে প্রথমটিকে।রুপালি আর পেস্টাল সবুজের যে চকচকে ট্যাসেল গাউনে দেখা দেন, সেটিকে বলা হচ্ছে ‘আরাধ্যর (ঐশ্বরিয়া রাই ও অভিষেক বচ্চনের একমাত্র কন্যা) স্কুল প্রজেক্ট’। এই পোশাকেরও লম্বা ট্রেইন। প্রজাপতির পাখা অথবা ঝাড়ুর মতো করে গাউনের ওপরের অংশে সামনে–পেছনে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বাড়তি অংশ। বলা হচ্ছে, পোশাকটি এত বেশি ‘গর্জিয়াস’ যে তাকাতে ইচ্ছা করে না! একবার চোখ পড়ে গেলে তড়িঘড়ি করে চোখ সরিয়ে নিতে হয়।একটি ছবিতে ঐশ্বরিয়া পোজ দিয়েছেন হলিউড তারকা, প্রযোজক ইভা লঙ্গোরিয়ার সঙ্গে। এতে ভক্তদের তুলনা করা আরও সহজ হয়ে গেছে। ইভার বয়সও ৪৯ বছর। তবে ফিটনেস আর ফ্যাশনে নাকি হারিয়ে দিয়েছেন ঐশ্বরিয়াকে।ভক্তরা বলছেন, পেশাগত জীবনে আর পারিবারিকভাবে তিনি যে মোটেই ভালো অবস্থায় নেই, এটা তাঁর মনের ভেতর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে, তারই বহিঃপ্রকাশ নাকি কানের লালগালিচায় ঐশ্বরিয়ার এই উপস্থিতি।অনেক ভক্ত লিখেছেন যে তাঁরা নব্বইয়ের দশকের ঐশ্বরিয়াকে হারাচ্ছেন। এক ভক্ত ঐশ্বরিয়াকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘আপনি স্টাইলিস্ট বদলান। জিমে যান। কাজে ফিরুন। ভারতের ঐতিহ্যবাহী শাশুড়ি–ননদদের সঙ্গে ঘরের বৌয়ের সংঘাত আপনার ক্যারিয়ার, সৌন্দর্য, চারুত্ব সব ধ্বংস করে ফেলবে, তা হয় না। আপনি আবার ফুটে উঠুন, জেগে উঠুন। আমরা আপনাকে এর চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় দেখতে চাই।’আরেকজন লিখেছেন, ‘মাতৃত্ব, পারিবারিক জীবনের সংঘাত সবই মানলাম, তবে আপনার ফ্যাশনবোধ কোমায় কেন?’ সপ্তাহখানেক হলো ডান হাতের কনুই ভেঙেছে ঐশ্বরিয়ার। কান থেকে ভারতে ফিরলে হবে অস্ত্রোপচার। ভাঙা হাত নিয়েই কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছেন তিনি। আরেকজন লিখেছেন, ‘একজন প্রবল ঐশ্বরিয়াভক্ত হিসেবে আমি ভীষণ মর্মাহত, হতাশ।’