পুরোনো শাড়ি নতুন হবে, খরচ ৫০০ টাকার কম

শম্পার সবচেয়ে পছন্দের পোশাক শাড়ি। তাঁর সংগ্রহে ৪০টির বেশি শাড়ি আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো আছে, যেগুলো একবার বা দুবার মাত্র পরেছেন। তারপরও অন্য কাউকে দিয়ে দিতে মন সায় দেয় না। কারণ, শাড়িগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোনো না কোনো স্মৃতি। এই যেমন ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলজীবন শেষ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পরেছিলেন সাদা কোটা জমিনে চিকন লাল পেড়ে একটা শাড়ি। এটি হাতে নিলেই মনে জেগে ওঠে সে সময়ের স্মৃতি। সম্প্রতি শাড়িটি হাতে নিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে সাদা জমিনে লালচে ভাব চলে এসেছে। তাই পরিকল্পনা করলেন শাড়িটিকে নতুন রূপ দেবেন। শুধু সেই শাড়িই নয়, একরঙা বেশ কয়েকটি শাড়ি নিয়ে চলে গেলেন নিউমার্কেটে। তৃতীয় তলায় ব্লক, বাটিক, হ্যান্ডপেইন্ট, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, জারদৌসির কাজ করে—এমন বেশ কয়েকটি দোকান আছে। শম্পা বলেন, ‘পুরোনো সাদা শাড়িটিকে পছন্দমতো নকশা দিয়ে ব্লক করিয়েছি। লাল রং রেখেছি বেশি। মাত্র ৩৫০ টাকা খরচ করে এটি হয়ে গিয়েছিল আমার বৈশাখের শাড়ি।’

পড়ে থাকা শাড়িকে স্বল্প খরচে নতুন লুক দেওয়া হয়েছে
 ছবি: লেখক

নাঈম ব্লক প্রিন্টের কর্ণধার আবুল বাশার শেখ জানান, এখানে নতুন-পুরোনো শাড়ি বলে কিছু নেই। সবই এক রেট। অনেকেই, বিশেষ করে তরুণীরা মাঝেমধ্যে নানি-দাদির হালকা রঙের শাড়ি নিয়ে এসে পছন্দমতো নকশা ও রঙে ব্লক করিয়ে নিয়ে যান। কাজ শেষে বোঝার উপায়ই থাকে না এগুলো পুরোনো শাড়ি।

ধানমন্ডি থেকে এসেছিলেন প্রভা। করপোরেট অফিসে চাকরি করেন। হাতে দুই রঙের দুটি মসলিন শাড়ি। জানতে চাইলে বলেন, অনেক দিন ধরে শাড়ি দুটি পড়ে আছে। শখ করে কিনেছিলেন, কিন্তু পরতে গেলেই মনে হচ্ছে বেশি পাতলা। ব্লক করলে স্বচ্ছ ভাব কিছুটা কমে আসবে, তাই নিয়ে এসেছেন। শাড়ি দুটি ব্লক করানোর পর তিনি বেশ খুশি। বুটিক হাউসের পণ্যের চেয়ে কোনো অংশ কম মনে হচ্ছিল না তাঁর কাছে। তা–ও আবার এত কম খরচে!

ব্লকের পাশাপাশি চাইলে বাটিক, টাই-ডাই, হালকা এমব্রয়ডারিও করিয়ে নিতে পারবেন এখানে

শুধু ব্লক নয়, চাইলে বাটিক, টাই-ডাই, হালকা এমব্রয়ডারিও করিয়ে নিতে পারেন। যে শাড়ি বেশ কয়েকবার পরেছেন, বাটিক করিয়ে চাইলে সেটি নতুন রূপও দিতে পারেন। একেবারে যেসব শাড়ি আর পরবেন না বলে ঠিক করেছেন, সেগুলোর পাড় যদি মলিন না হয়, তাহলে সেগুলো কেটে রেখে দিতে পারেন। প্রয়োজনে অন্য কোনো শাড়ি বা সালোয়ার–কামিজে বসিয়ে নতুন লুক আনতে পারেন। আর সেটা যদি হয় জামদানি শাড়ির পাড়, তাহলে পোশাকে ঐতিহ্যের পাশাপাশি চলে আসবে আভিজাত্য।

পুরোনো শাড়িতে দেওয়া হচ্ছে নতুন নকশা

পড়ে থাকা শাড়ি দিয়ে স্কার্ট, জামাও বানিয়ে নেওয়া যায়। পুরোনো ওড়না থাকলে সেগুলো কেটে স্কার্ফ বানিয়ে পাড়ে লেস বসিয়ে নিলে হয়ে যাবে নতুন কিছু। আপনার পোশাকটিও হবে ব্যতিক্রম। কারও সঙ্গে মিলবে না। বিবিয়ানা ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার লিপি খন্দকার বলেন, ফেলে না দিয়ে একটা পণ্যকে নতুন করে ব্যবহার করা যায় সহজেই। এটাকে বলা হয় আপ-সাইকেল। ফাস্ট ফ্যাশনের ফলে ওয়ার্ডরোব নতুন জামায় ভরে উঠছে। অথচ পুরোনো কাপড় পুনর্ব্যবহার করে বানানো যেতে পারে অনেক কিছু।

পুরোনো শাড়িতে ব্লক করানো হয়েছে

কিছু সালোয়ার–কামিজ থাকে, যেগুলো বিয়ে, পার্টি ছাড়া আর হয়তো পরাই হয় না। এখন বের করে দেখলেন, দু–এক ইঞ্চি ছোট হয়ে গেছে। এগুলো লেস বা পাড় বসিয়ে লম্বা করে নিতে পারেন। আবার পোশাকটি যদি আঁটসাঁট অথবা ঢিলেঢালা হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে কাছের কাউকে দিতে পারেন, যাঁরা কিছু মনে করবেন না, বরং সাদরে গ্রহণ করবেন। শাড়ির ক্ষেত্রেও তা–ই; পড়ে থাকা ভালো মানের শাড়িগুলো নতুন রূপ দিয়ে উপহার দিতে পারেন একান্ত কাছের মানুষদের, যাঁরা আপনার এই মায়া বুঝতে পারবেন।