আলগোছে পরা সুতির শাড়িতেও নিজেকে উপস্থাপন করা যায় সুন্দরভাবে। নকশার আয়োজনে মডেল হয়েছেন সংগীতশিল্পী সুনিধি নায়েক।
আলগোছে পরা সুতির শাড়িতেও নিজেকে উপস্থাপন করা যায় সুন্দরভাবে। নকশার আয়োজনে মডেল হয়েছেন সংগীতশিল্পী সুনিধি নায়েক।

শাড়িকথন

সুতিতে আরাম, সুতিতে আয়েশ

সুতিশাড়ি যে আধুনিক এবং স্বতন্ত্রমনাদের প্রথম পছন্দ, রবীন্দ্রনাথের লাবণ্য তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ, শেষের কবিতায় অধিকাংশ সময় তাকে আমরা এ শাড়িতেই পেয়েছি। সিল্ক, তসর, শিফন কিংবা মসলিনকে ছোট করছি না, সেগুলোর সৌন্দর্যও অনন্য, তবে সুতিশাড়ির সহজাত আরাম আর আয়েশ এসবে পাওয়া যাবে না।

সুতির শাড়িতে পাওয়া যায় আরাম

খুব সহজেই আপন করে নেওয়ার যোগ্যতা এ শাড়ির আছে। বুননের মধ্যে আছে সহজাত সৌন্দর্য, চাইলেও যা এড়ানো যায় না। ৬০০ টাকার আপাত সাধারণ একটা সুতিশাড়িতেও সেজে ওঠা যায় অসাধারণ করে। চাকচিক্যহীন ১২ হাতের সুতিশাড়ি যখন কুঁচি শেষে কাঁধ ঘুরে আঁচল ফেলায়, স্নিগ্ধতার পাশাপাশি তখন তাতে ফুটে ওঠে ব্যক্তিত্বের ধারালো দিকটিও।

কুঁচকানো মানেই আনস্মার্ট নয়

কম নকশার সুতির শাড়িতেও নিজেকে জমকালোভাবে উপস্থাপন করা যায়। বেছে নিতে হবে সঠিক গয়না আর মেকআপ।

সুতির শাড়ি খুব সহজেই গুছিয়ে পরা যায়, কিন্তু পরার পর যদি মন না থাকে, তাহলে গোছানো শাড়িটাও কিছুক্ষণের মধ্যে অগোছালো হয়ে যাবে। অনেকে মাড় দেওয়া কড়কড়ে শাড়ি পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, অনেকে আবার নরম শাড়িটাই গায়ে জড়িয়ে নেন আলতো করে। যেভাবেই পরুন, সুতির শাড়ি কিছুটা সময় পর নরম হবেই হবে। সারা দিন পরে থাকলে কুঁচকে যাবে, এ চিন্তা থেকে অনেকেই তাই সুতিশাড়ি এড়িয়ে যান। কিন্তু কুঁচকে যাওয়া শাড়ির আঁচল আলগোছে তুলে নিয়েই কাটিয়ে দিতে পারেন সারা দিন, আর মোটেও তাতে আপনাকে আনস্মার্ট লাগবে না।

সুতির শাড়ির সঙ্গে টিপ যেন অনেকটাই আবশ্যক

দেশালের স্বত্বাধিকারী ইশরাত জাহান সব সময়ই ভালোবেসে এসেছেন সুতিশাড়ি। এ উপকরণের ওপর তাঁর একধরনের ভালো লাগা আর আস্থা গড়ে উঠেছে। যেকোনো মৌসুমেই তাঁর কাছে সুতির শাড়ি আরামদায়ক। চকচকে ভাব না থাকার কারণে আরও বেশি ভালো লাগে, জানালেন ইশরাত জাহান। পাড়, আঁচলে একটা মজার বিন্যাস থাকে। যাঁরা সুতির শাড়ি পরেন, তাঁরা এ অনুভূতি খুব ভালোভাবেই বুঝবেন।

যাঁরা সুতির শাড়ি পরতে চান, কিন্তু দ্বিধায় ভোগেন, তাঁদের জন্য ইশরাত জাহানের পরামর্শ—খুব বেশি নিচু করে সুতিশাড়ি পরবেন না, হোঁচট খাওয়া থেকে বেঁচে যাবেন। আর কাঁধের ওপর আঁচলটাও খুব আঁটসাঁটভাবে লাগাবেন না। যেকোনো পোশাক পরলে একটু কুঁচকাবেই, কিন্তু সেটা নিয়ে যদি সারাক্ষণ চিন্তায় থাকেন, তাহলে সেই চিন্তা আপনার চেহারাতেও ফুটে উঠবে। আর দেখতে সেটা মোটেও ভালো লাগবে না। এ কারণে সুতির শাড়ি পরার সময় আত্মবিশ্বাসটা জরুরি।

কোন উপলক্ষে কী অনুষঙ্গ

সুতিশাড়ির সঙ্গে মানাবে পুঁতি, কড়ির গয়না

সুতির শাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, যেকোনো পরিবেশেই মানিয়ে যায়। ঘরোয়া আড্ডা, কাজের জায়গা, বাজার, এমনকি বিয়ের দাওয়াতের মতো অনুষ্ঠানে পর্যন্ত এ শাড়ি পরে চলে যেতে পারবেন। শুধু জায়গার সঙ্গে মানিয়ে যায়, এমন গয়না বেছে নিতে হবে আর করতে হবে তেমন মেকআপ। কাজল আর টিপ এ শাড়ির প্রথাগত সাজ, না পরলেও সমস্যা নেই। সুতিশাড়ির আভিজাত্যই এমন যে শুধু এটাই সবার থেকে আপনাকে আলাদা করে তুলবে।

শাড়িতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রামীণ জীবনের চিত্র। তার সঙ্গে আধুনিক কাটের ও নকশার ব্লাউজ। পুরো সাজে চলে এসেছে ভিন্নতা।

রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, সুতির শাড়ি স্টাইলের সঙ্গেও পরা সম্ভব, সাজটা যদি আলাদা করে করা যায়। সেটার মাধ্যমেই তৈরি করা সম্ভব নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট। শাড়ি যদি কম নকশার হয়, ব্লাউজে আনতে পারেন নানা নকশা আর রঙের ছটা। শাড়ির রং আর ব্লাউজের রং, নকশার মিল না থাকলেও মনে কোনো খুঁতখুঁতে ভাব রাখবেন না। আফরোজা পারভীন বলেন, ‘আমি যেমন এক রঙের সুতির শাড়ির সঙ্গে ছাপা নকশার ব্লাউজ পরি। এটা আমার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানিয়ে যায়। সুতির মধ্যে সব রঙের শেড, স্ট্রাইপ, নকশা খুঁজে পাওয়া যায়। সিল্কের মধ্যে চাইলেই সব রং পাওয়া যায় না। আমি যে জামদানি পরি, সেখানেও সুতির জামদানি বেশি।’

সুতিশাড়ির সঙ্গে কেমন সাজ

হালকা কিংবা গাঢ়—সুতিশাড়ির সঙ্গে দুই সাজই যায়। কিশোরীরা এ শাড়ির সঙ্গে ফাংকি ধাঁচের অলংকার বেছে নিতে পারেন। চোখের ওপর অনেক রঙের ব্যবহার না করে মাসকারা আর কাজলটাই ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ব্লাউজের প্যাটার্ন ভিন্ন হতে পারে। আঁচল রাখতে পারেন বড়। লিপস্টিকের রং অনেক উজ্জ্বল থাকতে পারে আর গালে থাকুক হালকা ব্লাশন।

টাই-ডাইয়ের সুতির শাড়ির সঙ্গে স্মোকের ব্লাউজ।

বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া হলে তাঁতের ছাপা নকশার শাড়ির সঙ্গে পরতে পারেন অলংকার। হালকা বেজ ব্যবহার করে বড় টিপ, ন্যুড লিপস্টিক, চোখ ভরে মোটা করে কাজল লাগানোর মধ্য দিয়ে সাজ শেষ করুন।

২৫-৪৫ বছরের অধিকারীদের জন্য আফরোজা পারভীনের পরামর্শ, বেজ ও কনট্যুরের কাজটি ভালোভাবে করবেন। সঙ্গে কপালে জায়গা করে নিতে পারে ছোট টিপ। চোখে থাকতে পারে রঙিন আইলাইনার। শাড়ির রংকে মাথায় রেখে লিপস্টিকের রং বেছে নিন। সাজে সর্বোত্তম ভাব নিয়ে আসবে মুক্তার গয়না। ইশরাত জাহানের মতে, সুতিশাড়ির সঙ্গে ধাতব, অক্সিডাইজ, মাটি, কাপড়, কাচ বা পুঁতি—সব ধরনের গয়নাই মানিয়ে যাবে।