যেকোনো উৎসবে বাঙালি ছেলেরা পাঞ্জাবি পরতে ভালোবাসেন। টি–শার্ট, জিনসে মজে থাকা একালের তরুণও ঈদের কেনাকাটায় পাঞ্জাবি রাখেন। ঈদের দিন অন্য বেলা গায়ে যেটাই উঠুক, সকালটা থাকে পাঞ্জাবির দখলে। আর এই পাঞ্জাবি প্রতিবছর আসে ভিন্ন ভিন্ন ধারা নিয়ে। কখনো সেটা লম্বা, কখনো খাটো, একবার দেখা যায় ভারী কাজ তো আরেকবার হালকা। অল্প কয়েকবার পরার জন্য পাঞ্জাবি কিনলেও সেই সময়ের ট্রেন্ডটা জানা জরুরি। কারণ, গত বছর যে পাঞ্জাবি বেশি চলেছে, এবার সেটা ট্রেন্ডে না–ও থাকতে পারে।
অল্প পরা হয় বলে গত বছরের পাঞ্জাবিটা এবার পরতে গিয়ে আবার বিপত্তিতে পড়তে পারেন। রং চটে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় তো আছেই, আবার এ বছরের ট্রেন্ডে পাঞ্জাবির ঝুল কিছুটা খাটো হয়ে গেছে। তাই পুরান পাঞ্জাবি পরে ট্রেন্ডে থাকতে চাইলে আপনাকে লম্বায় কিছুটা বাড়তে হবে। এই সুবিধা অবশ্য কিশোর বয়সের ছেলেরা ছাড়া পাবে না। কারণ, চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, টিনএজ বয়সের পর আর কেউ লম্বা হয় না।
খাটো বলতে ‘ঠিক কতটা খাটো হয়েছে পাঞ্জাবি?’ উত্তরে ফ্যাশন ডিজাইনার সায়েম হাসান বলেন, ‘হাঁটু বরাবর। গত বছরও হাঁটুর বেশ খানিকটা নিচ পর্যন্ত লম্বা পাঞ্জাবি পরার ট্রেন্ড ছিল, এবার সেটা কমে গেছে। হাঁটুর ওপরে বা হাঁটু বরাবর এসে দাঁড়িয়েছে সেই ঝুল।’
ভাবনায় গরমে আরাম
শুধু ঝুল নয়, পাঞ্জাবির নকশাতেও নানা রকম পরিবর্তন এসেছে। ওটুর ফ্যাশন পরামর্শক আসিফ ইকবাল বলেন, ‘গ্রীষ্মে ঈদ, তাই আরামের বিষয়টা প্রাধান্য দিয়ে নকশা করা হয়েছে। তবে এবার বিশ্ব ফ্যাশনে হাতের কাজের নকশা জনপ্রিয় আর আমাদের এই অঞ্চলের হাতের কাজ যেহেতু বিশেষ, তাই পাঞ্জাবিতেও সেটা ধরা পড়েছে। হাতা, কলার বা বাটনপ্লেটের মতো জায়গাগুলোতে হাতের কাজের চল বেড়েছে।’
সাধারণ চেইন স্টোর থেকে বুটিক শপের নকশা আলাদা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে ধরনগুলো প্রায় কাছাকাছি হাতের কাজের নকশায়। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে ঢুঁ মারলেও দেখা যাবে এমব্রয়ডারির নকশা বেশি। জামান ফ্যাশন নামে পাঞ্জাবির দোকানের ব্যবস্থাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো সারা বছরই এমব্রয়ডারি করা পাঞ্জাবি বেচি। সাদা আর ঘিয়ে রং বেশি চলে মুরব্বিদের জন্য। আর ইয়াংরা পছন্দ করে লাল, নীল রং। আমাদের পাঞ্জাবিগুলোর কাটিং করার সময় চওড়া কিছুটা বেশি রাখা হয়, যাতে পেটের অংশ ঢিলেঢালা থাকে।’
সুতি, ভিসকস, জ্যাকার্ড কাপড়ের বাইরেও সিল্কের পাঞ্জাবির একধরনের চাহিদা আছে। বিশেষ করে যাঁরা ঈদে আত্মীয়স্বজনকে উপহার দেন, তাঁদের কাছে সিল্কের কদর বেশি। ঈদের দিন রাতের দাওয়াতে পরতে পারেন সিল্কের পাঞ্জাবি।
নকশা ও রং যেমন
হাতের কাজের কথা তো শুরুতেই বলা হলো। এর বাইরে ছাপা নকশার ধারা এবারও চলছে। ছাপা নকশার ক্ষেত্রে ফুলেল মোটিফ দেখা যাচ্ছে। আছে নানা রকম পাতা, লতা, নৌকা, প্রজাপতি ও জ্যামিতিক নকশাও। সেলফ কালারের নকশা যেমন আছে, কন্ট্রাস্টও চোখে পড়বে। কাঁথার ফোঁড়ে করা নকশা এবারও আছে পাঞ্জাবিতে।
রং হিসেবে সাদা, চাপা সাদা, ক্রিম, লালচে, হালকা বেগুনি, জলপাই, সামুদ্রিক নীল, কুসুম হলুদ, পেস্টাল শেড, ধূসর ইত্যাদি আছে চলতি ধারায়। তবে বিকেলের পর যাঁরা পাঞ্জাবি পরার কথা ভাবছেন, তাঁরা কিছুটা গাঢ় রঙে যেতে পারেন। এই যেমন কালো, খয়েরি, বেগুনি রঙের পোশাক হতে পারে এই সময়ের জন্য আদর্শ।
ফ্যাশন হাউস অঞ্জনসের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার শাহীন আহমেদ বলেন, ‘এক ছাঁটের রেগুলার ফিটের পাঞ্জাবি আর কলিদার পাঞ্জাবি—এই দুই ধরন এবার বেশি দখা যাবে। গরমের কারণে পাঞ্জাবির নকশায় আরামের প্রসঙ্গ এসেছে ঘুরেফিরে। রঙের বিষয়টাও তা–ই, আরামদায়ক যেকোনো রং এবার পরা যাবে পোশাকে।’
সঙ্গে কী
পাঞ্জাবি কেনার পর তার সঙ্গে কী পরবেন, সেটা নিয়েও ভাবা জরুরি। পাঞ্জাবির সঙ্গে পায়জামা ছাড়াও প্যান্ট পরেন অনেক তরুণ। পায়ে দুই ফিতার স্যান্ডেল পরেন কেউ, অনেকে আবার বেল্টযুক্ত স্যান্ডেল বেছে নেন। যাঁরা বাইক বা গাড়ি চালাবেন, তাঁরা বেল্টযুক্ত স্যান্ডেল পরতে পারেন। হাই ফ্যাশন হিসেবে পাঞ্জাবির সঙ্গে জুতাও পরতে দেখা যায় আজকাল। মোকাসিন বা স্নিকার নয়, পুরোপুরি চকচকে শু পরেও ঘুরতে দেখা যায় ফ্যাশনসচেতন তরুণদের।
পাঞ্জাবির সঙ্গে চকচকে সু! অনেকের চোখ কপালে উঠলেও, ফ্যাশনের যে কোনো স্থায়ী নিয়ম নেই সেটাই যেন প্রমান পায় এই ফ্যাশনে।