বেশ কয়েক বছর পর ‘ভোগ’-এর প্রচ্ছদে দেখা মিলল অস্কারজয়ী হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলির। তাঁর নামের আগে কত–না বিশেষণ বসাতে হয়! অভিনেত্রী তো বটেই; প্রযোজক, পরিচালক, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সাবেক শুভেচ্ছাদূত ও ফ্যাশন উদ্যোক্তা হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। সর্বশেষ পরিচয়ে পরিচিত করাতেই ‘ভোগ’ তাঁকে প্রচ্ছদকন্যা বানাল। ‘ভোগ’-এর ছবিগুলো তোলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ৫৭ গ্রেট জোনস স্ট্রিটের একটি আর্ট গ্যালারিতে। অবশ্য এখন আর সেটি শিল্পপ্রদর্শনীর স্থান নয়, বরং সেখানে এখন চলবে ফ্যাশনের বিকিকিনি। নাম ‘আটোলিয়ে জোলি’। অ্যাঞ্জেলিনা জোলির নয়া ফ্যাশন হাউস।
জোলি জানান, তিনি নাকি হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় ওস্তাদ। জীবনের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন ঝোঁকের বশে। তাঁর ১৮ বছর বয়সী কন্যা শিলোহ আবার উল্টো। ভেবেচিন্তে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয় সে। তবে বিপরীত চরিত্রের মা-মেয়ে দুজনেরই যখন এক দেখায় নতুন ফ্যাশন হাউসের প্রথম আউটলেট হিসেবে জায়গাটি মনে ধরল, জোলি বুঝলেন, তিনি যা খুঁজছিলেন, পেয়েছেন। জোলি বলেন, ‘দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বিশ্বের নানা প্রান্তের ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। আমি চাই, তাঁরা যেন তাঁদের সম্ভাবনা বিকশিত করে জীবনে এগিয়ে যান। আমি কোনো ফ্যাশন ডিজাইনার বা উদ্যোক্তা হতে চাই না। আমি চাই, আমার একটা বাড়ি থাকবে, সেই বাড়ি এই মেধাবী-পরিশ্রমী মানুষদের যথাযথ স্থানে পৌঁছে দেবে। আমি চাই, বড় ফ্যাশন ডিজাইনার আর ফ্যাশন উদ্যোক্তাদের পাশে এই তরুণদের নাম যুক্ত হোক।’
স্বাভাবিকভাবেই ‘ভোগ’-এর এই ফটোশুটে জোলির প্রতিটা পোশাক তাঁর ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘আটোলিয়ে জোলি’র। এখানে পোশাকের দাম ৩০০ ডলার থেকে শুরু। আর পোশাকটি কোথাও ছিঁড়ে গেলে ১০ ডলার খরচ করেই রিফু করে নেওয়া যাবে। এখানকার ডিজাইনারদের সঙ্গে কথা বলে নিজের পছন্দ-অপছন্দ জানিয়ে কাস্টমাইজ পোশাকও বানানো যাবে বলে জানান বিশ্বখ্যাত এই ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার। যদিও ইনফ্লুয়েন্সার শব্দটিতে বিশেষ আপত্তি আছে জোলির৷ বললেন, ‘আমি ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী নই। প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিত্ব যেমন আলাদা, তাঁর ফ্যাশন সেন্সও আলাদা। কেননা, একটা মানুষের ফ্যাশন তাঁর ব্যক্তিত্বেরই বহিঃপ্রকাশ।’
ছয় সন্তানের ‘সিঙ্গল মাদার’ জোলি আরও জানান, তিনি কোনো দিন তাঁর সন্তানদের পোশাকের ব্যাপারে প্রভাবিত করেননি। তারা নিজেদের পছন্দ আর স্বাচ্ছন্দ্যমতো পোশাক পরেছে। পোশাকের মাধ্যমেই তাঁরা নিজেদের পছন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। যদিও গত এক দশক জোলি নিজেকে খুঁজে ফিরছেন। নিজের মনের কথা নিজেই কান পেতে শোনার মতো মানসিক অবস্থায় তিনি ছিলেন না। আরেক হলিউড তারকা ব্র্যাড পিটের সঙ্গে সম্পর্ক, মাতৃত্ব, বিবাহ, বিচ্ছেদ, সন্তানদের অভিভাবকত্বের মতো ব্যক্তিগত সব বিষয় তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।
‘ভোগ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জোলি বিচ্ছেদের বিষয়টি ইঙ্গিত করে জানান, সম্প্রতি তিনি জীবনের চরম অন্ধকার অধ্যায় গভীরভাবে স্পর্শ করেছেন। নিজেকে সামলে নিতে তাঁর অনেকটাই সময় লেগেছে। এই যে বহুদিন পর তিনি মেধাবী শিল্পী, উদ্যোক্তা, ডিজাইনারদের সঙ্গে তাঁর ফ্যাশন উদ্যোগ নিয়ে কথা বলছেন, এই প্রক্রিয়াটা তাঁর কাছে অনেকটা সেরে ওঠার মতো। জোলি জানান, কেউ চাইলে নিজের শরীরের ট্যাটুর ছবিও কাপড়ে ফুটিয়ে তুলে পোশাক বানিয়ে দেবে তাঁর ফ্যাশন ব্র্যান্ড। কেননা, পোশাকও নিজের একটা বাহ্যিক রূপ।