নতুন পোশাক আর নতুন সাজ, কখনো র্যাম্পে তো কখনো ক্যামেরার সামনে, প্রতিদিনই যেন নিজেকে নতুন রূপে পাওয়া। ম্যাগাজিনের পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায় কিংবা রাস্তার ধারের বড় বড় বিলবোর্ডে শোভা পায় মডেলদের ছবি। শোবিজ দুনিয়ার ঝলমলে এই স্বপ্নের জগৎ নিয়ে কমবেশি সবারই আগ্রহ আছে। যদি আপনার মনেও এই সুপ্ত ইচ্ছা থেকে থাকে, তাহলে এই লেখা আপনার জন্য।
মডেল হতে চান, কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন? গ্ল্যামার অঙ্গনে পা রাখতে চাওয়া আপনার মনের খুব সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই মডেল মাশিয়াত রহমান ও সাবরিনা জামান রিবা।
যেভাবে শুরু করবেন
লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টারের মঞ্চ থেকে অভিনয় জগতে পা দিয়েছেন মেহ্জাবীন, মম, নাজিফা তুষিরা। অভিনয়ে না এলেও মডেলিংয়ে মাশিয়াতের শুরুটা হয়েছিল সেই একই মঞ্চ থেকে। ২০১০ সালে এই কনটেস্টে অংশ নিয়ে চতুর্থ হয়েছিলেন তিনি। মাশিয়াত বলেন, ‘এ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক মঞ্চ থেকে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়, তা সত্যিই অসাধারণ। অভিনয় থেকে শুরু করে হাঁটা ও শিষ্টাচার, মডেলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় সব প্রশিক্ষণ সেখান থেকেই পেয়েছি।’
সম্পূর্ণ নিজ ইচ্ছায় মডেল হিসেবে যাত্রা শুরু করেন সাবরিনা জামান রিবা। শুরুতে ছিল না র্যাম্পের ঝলমলে কোনো লাইমলাইট। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো ‘প্রথম আলো’র ‘নকশা’র মডেল হন তিনি। এরপর আর থেমে থাকেননি। মডেলিং ক্যারিয়ারে পেরিয়ে গেছে প্রায় ১৪ বছর।
নতুন মডেলদের মধ্যে দারুণ কাজ করছেন অন্তরা। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে র্যাম্পে হাঁটেন তিনি। বলছিলেন, সেদিনই নিজের মডেল সত্তা প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করেন। এরপর একে একে কাজ করেছেন নানা ব্র্যান্ডের হয়ে। প্রাথমিক কোনো প্রশিক্ষণ নিয়ে না এলেও কাজের অভিজ্ঞতা থেকে মডেলিংয়ের মূল বিষয়গুলো আত্মস্থ করেছেন এই মডেল।
যোগ্যতা কি শুধুই সৌন্দর্য?
শুধু দেখতে সুন্দর হলেই মডেল হওয়া যাবে, এ ধারণাকে ভুল মনে করেন রিবা। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সৌন্দর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে মডেল হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে জ্ঞানী ও গুণী হতে হবে। নিজের কাজের জায়গা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কোথায় কাজ করছেন, কী কাজ করছেন এবং কাদের সঙ্গে কাজ করছেন—এসব বিষয়ে জানতে ও বুঝতে হবে। তাই এই পেশায় আসতে হলে শিক্ষিত ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়া বেশ জরুরি।
মাশিয়াত বলেন, ‘একজন ফ্যাশন মডেলকে বাহ্যিকভাবে হতে হবে পরিপাটি। সে ক্ষেত্রে শরীরের ফিটনেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া, ক্যামেরা ও ক্যামেরার বাইরে নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। মডেলিং শুরুর আগে গ্রুমিং বা প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে নিতে পারেন। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার মনোভাব থাকতে হবে। ধীর-স্থির হতে হবে এবং অবশ্যই সময়নিষ্ঠ হতে হবে।’
র্যাম্পে হাঁটলেই মডেল?
ফ্যাশন মডেলদের জন্য স্বপ্নের মঞ্চ হলো র্যাম্প। কিন্তু, এমনটি ভাবা একেবারেই ঠিক নয় যে শুধু র্যাম্পে হাঁটলেই মডেল হওয়া যায়, বলেন রিবা। তবে নিজেকে মডেল হিসেবে তুলে ধরার জন্য র্যাম্পের চেয়ে ভালো কিছুই হতে পারে না। ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলেন মাশিয়াত, র্যাম্প শোগুলোয় মডেলরা অন্য নানা ব্র্যান্ডের নজরে আসেন এবং পরবর্তী সময়ে কাজ পাওয়ার সুযোগ বাড়ে।
পুরোদস্তুর র্যাম্প মডেল হতে না চাইলেও রয়েছে অন্য অনেক পন্থা। তবে সে জন্য আগেই ভেবেচিন্তে ঠিক করতে হবে, আপনি কোন ধরনের মডেল হতে চান। অনেকে শুধু ম্যাগাজিনের পাতার জন্য ছবি তোলেন, কেউ শুধু হাত বা পায়ের মডেলিং করেন, কেউ বা করেন চুলের।
আজকাল কিশোর–কিশোরীদের নিয়ে নানা সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা আয়োজিত হচ্ছে। ‘বিষয়টি খারাপ না’, বলেন অন্তরা। তবে যেকোনো পেশায় আসার আগে প্রাপ্ত বয়স হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর মডেলিং এমন একটি জায়গা, যেখানে কাজ করতে চাইলে অনেক ধৈর্য থাকা চাই। তাই একটি নির্দিষ্ট বয়স পেরোনোর পাশাপাশি যা করতে চান, সে বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে।
মডেলরা আয় করেন যেভাবে
আমাদের দেশে মডেলিং এজেন্সি বা সংস্থাভিত্তিক কাজের সুযোগ কম হওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মডেলদের ফ্রিল্যান্স কাজ করতে হয়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কাজ ছাড়া পোশাক ও পণ্যের ফটোশুট, ভিডিও শুট, ফ্যাশন শো, টিভি শো ইত্যাদি নানা সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে আয় করেন মডেলরা।
মডেলিং ও পোর্টফোলিও
পোর্টফোলিও হচ্ছে একজন মডেলের সিভি। নানা ভঙ্গিমায় ছবিসহ এতে থাকতে হবে নানা তথ্যও। যেমন উচ্চতা, পোশাকের মাপ, চুল ও চোখের রং, পূর্ব অভিজ্ঞতা ইত্যাদি। মডেলিং শুরু করতে চাইলে অবশই একটি পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে, বলেন মাশিয়াত।
ছবি কোথায় এবং কাকে পাঠাবেন
মডেলিং করতে চাইলে যাঁরা এই পেশায় আছেন এবং ফ্যাশন, ব্র্যান্ড ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে আজকাল যা সহজেই করা সম্ভব, বলেন রিবা। আর প্রাথমিকভাবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইলে বিউটি কনটেস্ট হতে পারে খুব ভালো সুযোগ, নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলেন মাশিয়াত। সেখান থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ড আপনাকে সহজেই নিজেদের পণ্যের মডেল হিসেবে বেছে নিতে পারবে।
মডেলিংয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশি মডেলরা আজকাল কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে নেই। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্র্যান্ড, ননব্র্যান্ড, র্যাম্প, ম্যাগাজিন এমনকি দেশের বাইরে বাংলাদেশি মডেলরা কাজ করছেন। অন্তরা বলেন, ‘অনেক প্রাক্তন মডেল এখন মডেলিং ছাড়াও ফ্যাশন, গ্রুমিং, ডিজাইনিংসহ নানা কিছুতে কাজ করছেন। অভিনয় করছেন অনেকে। তাই ভবিষ্যতের বিষয়টি আসলে সম্পূর্ণ নিজের হাতে।’ এ বিষয়ে মাশিয়াত বলেন, যেহেতু সুযোগ আছে, সেহেতু আগ্রহ থাকলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে, সব কর্মক্ষেত্রের মতো শোবিজ অঙ্গনেও টিকে থাকার লড়াই করতে না জানলে এ পথে না এগোনোই ভালো, বলেন রিবা। নতুনদের নতুন কিছু নিয়ে আসার পরামর্শ দিলেন তিনি। বলেন, পরিশ্রম করতে জানলে এই পেশার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুটোই খুব সুন্দর।