ফ্যাশন শোতে চন্দনা দেওয়ানের পোশাক
ফ্যাশন শোতে চন্দনা দেওয়ানের পোশাক

চলতি বছরে দেশে পোশাকের নকশা কোন পথে যাবে, তার একঝলক

ফ্যাশন শোয়ের প্রথম দিন দেশের ১৮ ও ভারতের ৬ জন ফ্যাশন ডিজাইনার প্রথম দিন তুলে ধরেন তাঁদের কাজ

১৬ ও ১৭ মার্চ তেজগাঁওয়ের আলোকি কনভেনশন সেন্টারে হয়ে গেল ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশের ফ্যাশন শো। সেখানে ডিজাইনাররা তুলে ধরেন চলতি বছরের নকশার একঝলক। ঈদে তো বটেই, গরমেও আরাম দেবে পোশাকগুলো। রং, কাট আর কারুকাজে উঠে এসেছে নতুন সব ধারণা। নিজস্ব উপকরণের ওপর ভিত্তি করে পোশাকগুলো নকশা করেছেন বাংলাদেশের ১৮ ও ভারতের ৬ জন ফ্যাশন ডিজাইনার। প্রথম দিন ১২ জন ডিজাইনার তুলে ধরেন তাঁদের কাজ।

প্রথমেই তাঁদের নতুন সংগ্রহ প্রদর্শন করে ফ্যাশন সপ্তাহের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পাওয়ার পার্টনার অ্যাপেক্স। জাটারিয়া নামে নারীদের পোশাকের নতুন এক সংগ্রহের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁরা। পোশাকের সঙ্গে ছিল অ্যাপেক্সের অপর ব্র্যান্ড মুচি ও নিনো রসির জুতা। দ্বিতীয় পরিবেশনকারী হিসেবে মডেলরা মঞ্চে উঠে আসেন ব্র্যান্ড উজ্জ্বলা কেয়ারের বিভিন্ন পণ্যের প্ল্যাকার্ড নিয়ে।

পয়লা বৈশাখ নিয়ে চন্দনা দেওয়ান

চন্দনা দেওয়ানের পোশাক দিয়ে শুরু হয় ফ্যাশন সপ্তাহের ফ্যাশন শো। মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগ্রহটি করেছেন তিনি। সিল্কের শাড়ির ওপর প্রাধান্য পায় ব্লক আর অ্যাপ্লিকের কাজ।

চন্দনার কাজে প্রাধান্য পায় প্যাঁচা, ঘোড়া, মানুষ, পাখা ইত্যাদি দেশীয় প্রতীক।দেখা যায় উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর রঙের ব্যবহার।

শাড়ি নিয়ে ভারতীয় ডিজাইনার

এরপর ভারত থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন গুঞ্জন জৈন। দেশীয় তুষার ও মালবেরি সিল্কের বুননে তৈরি শাড়ি তুলে ধরেন তিনি।

নদীর গল্প নিয়ে আফসানা ফেরদৌসী

ডিজাইনার আফসানা ফেরদৌসীর সংগ্রহের নাম ছিল ‘নীল নদীর গল্প’। পোশাকের ওপর সুই-সুতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন নদীর গল্প।

ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা সেলাইয়ের মাধ্যমে নদীর সৌন্দর্য ও পরিবর্তনশীল রংকে তুলে ধরতে ব্যবহার করেছেন প্রাকৃতিক নীল রং।

নদীর ও জলজ জীবনের গল্প তুলে ধরেন আফসানা ফেরদৌসী

রিফাত রহমানের পোশাকে রঙের ঝলক

প্রদর্শনীর চার নম্বর কিউতে বসন্ত/গ্রীষ্ম ২৩ সংগ্রহটি তুলে ধরেন রিফাত রহমান। চলতি ধারার সঙ্গে যায় এমন রংগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আধুনিক কাটের পোশাকগুলো মূলত তরুণদের জন্যই বানানো হয়েছে।

রিফাত রহমানের পোশাকে দেখা গেছে জ্যাকেটের প্রাধান্য

মায়ের পোশাক থেকে প্রেরণা

রাতের পঞ্চম ডিজাইনার ছিলেন তাসফিয়া আহমেদ। মায়ের পোশাক থেকে অণুপ্রেরণা নিয়েছেন তিনি। ব্লকের নকশায় ফুটিয়ে তোলেন ৯০ দশকের রোমান্টিক ও ক্ল্যাসিক ধারা। আনারকলি, সুতির শাড়িতে ছিল জারদৌসির কাজ।

চিঠি আর স্ট্যাম্পের নকশা

সব কাপড়ই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগৃহীত।

ডিজাইনার সাদিয়া রুপার সংগ্রহে দেখা যায়, হাতে লেখা চিঠি আর স্ট্যাম্পের নকশা। পুরোনো ধারাটিকে আধুনিক কাটের পোশাকে তুলে ধরেন সুন্দরভাবে।কাপড়ের ওপর স্ট্যাম্প সেট, প্যাচওয়ার্কসহ পাট, লিনেন ও চেক কাপড় ব্যবহার করেছেন রুপা। পোশাকে ছিল উঁচু-নিচু কাট।

গরমে আরামের পোশাক

ভারতের মেঘালয়ের ডিজাইনার ইবা মাল্লাইয়ের সংগ্রহের নাম ছিল ‘কিনিহো’। এতে ছিল আধুনিক নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ। পোশাকে ব্যবহার করেছেন ইরি সিল্ক। তুলে ধরা হয়েছে পূর্বপুরুষের বুননজ্ঞান এবং মেঘালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ।

টাইডাই নিয়ে নওশীন খায়ের

নওশীন খায়ের উপস্থাপন করেন তার সংগ্রহ ‘অরেঞ্জ ব্লুম’। কমলা ও কালো রঙে প্রাকৃতিক ডাই প্রিন্ট ফুটিয়ে তুলেছিলেন নতুন শেড আর কৌশল অবলম্বন করে ‘অরেঞ্জ ব্লুম’ সংগ্রহটি তুলে ধরেছে রেশম এবং হাতে ডাই করা কাপড়ে ছাপা জ্যামিতিক প্যাটার্নের বিবর্তন।

পোশাকে কমলা ও কালো রঙে প্রাকৃতিক ডাই

ইমাম হাসানের রিসোর্ট ওয়্যার কালেকশন

সৈকত আর দাওয়াতে পরার উপযোগী পোশাক নিয়ে আসেন ডিজাইনার ইমাম হাসান। প্রায় প্রতিটি পোশাকেই ছিল ফুলের ছাপা নকশা। প্লিট, প্যাচ এবং হাতে সেলাই করা অলংকরণ আর সমসাময়িক আধুনিক ডিজাইনে উপস্থাপন করেছেন পরিবেশবান্ধব পোশাক।

ইমাম হাসানের প্রায় প্রতিটি পোশাকেই ছিল ফুলের ছাপা নকশা

সাগরের রঙে রাঙানো পোশাক

ডিজাইনার তানহা শেখ তাঁর ‘রাইডিং দ্য ওয়েডস অব লাইফ’ শিরোনামের সংগ্রহে নীল রং ব্যবহার করেছেন। রিসোর্ট কালেকশনের বৈশিষ্ট্যযুক্ত ফ্যাশন ধারাটি আশা এবং নবায়নের ধারণা তুলে ধরে। সাগরের রঙে অনুপ্রাণিত হয়ে কাপড়ের বুননে বন্দী করেছেন তরঙ্গের শক্তি ও চপলতাকে।

রাইডিং দ্য ওয়েডস অব লাইফ সংগ্রহের পোশাক

পোশাকে প্রকৃতি

ভারতের রিমি নায়কের ‘বোটানিক্স’ শিরোনামের গ্রীষ্ম/রিসোর্ট ২০২৩ সংগ্রহটিতে প্রাধান্য পায় প্রকৃতির প্রাণবন্ত ভাব। রঙিন ফুল, উদ্ভিদ ও প্রাণী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে তাঁর সংগ্রহ।

মসলিনের ভালোবাসা

কুহু প্লামন্ডনের শাড়িতে মডেল

রাতের শেষ ডিজাইনার ছিলেন কুহু প্লামন্ডন। সাধারণ বর্গাকার এবং বক্ররেখার সাহায্যে মসলিনের শাড়িগুলোকে করে তোলা হয়েছে এক একটি ক্যানভাস।

অনুষ্ঠানটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক অ্যাপেক্স। অংশীদার ছিল হুন্দাই বাংলাদেশ। ব্যাংকিং অংশীজন ছিল কমিউনিটি ব্যাংক। দুই দিনব্যাপী ফ্যাশন সপ্তাহটি আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাই হেয়ার নাও, এমটিবি, স্ট্রিক্স, মায়া, উজ্জ্বলা কেয়ার, নেচুরাকেয়ার লিমিটেড। অনুষ্ঠানটির কলেবর সাজাতে সহায়তা করেছে অনুষ্ঠান আয়োজক শ্রেয়া ডিজিটাল ৩৬০, আতিথেয়তায় হোটেল দ্য ওয়ে ঢাকা এবং ভেন্যু সহযোগিতায় ছিল আলোকি কনভেনশন সেন্টার।