আবার ফিরে এসেছে বেল বটম ডেনিম, ব্যাগি প্যান্ট। এ ছাড়া র সিল্ক, কাতান, অরগেঞ্জার দেশীয় ধাঁচের পোশাকে রেশম হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, ভারী জারদৌসি কাজ দেখা যাবে বছর জুড়ে
মুম্বাইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড গার্ডেনে চার দিন ধরে মহাসমারোহে হয়ে গেল ‘এফডিসিআই ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ২০২৩’। আগামী শীত পর্যন্ত কী ধরনের পোশাক, নকশা আর ধারা থাকবে, সেটারই ধারণা পাওয়া গেল।
নবীনের আয়োজন
প্রতিবারের মতো এবারও একঝাঁক নবাগত ডিজাইনারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল ল্যাকমে। তরুণদের জন্য প্যান্টের পাশাপাশি এ বছর ডেনিমে জ্যাকেট, ড্রেসসহ অনেক কিছুই তৈরি হবে। সাটিন কটন, ক্রেপ, পিওর আর র সিল্ক, সুতি তো থাকবেই গরমের সংগ্রহে। বাঁধনি, অ্যাপ্লিক, কুরুশের কারুকাজ মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করেছেন ডিজাইনাররা। ঐতিহাসিক আর্ট ম্যুরাল আর ছবির কাজ তুলে ধরেছিলেন কুনাল খায়ান। নবীন ডিজাইনার অনুগ্রহ চন্দ্রা ইকো বোটানিকাল প্রিন্টিং, ডাবু, শিবোরির আধারে ফ্লোরাল প্রিন্টের বাহার নিয়ে এসেছিলেন। ডিজাইনার রুদ্রাক্ষ দ্বিবেদি জানিয়ে দিলেন এ বছর পোশাকে হাতে আর মেশিনের সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারি কাজ দেখা যাবে।
মোটিফের বাহার
ল্যাকমের আসরে এবার মোটিফ হিসেবে ধরা পড়েছে নানা প্রাকৃতিক উপাদান। ডিজাইনার অনাভিলা মিশ্রা তাঁর ‘ডাবু’ কালেকশনের মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে লতাপাতা, ফুল, ঝরনা তুলে ধরেছেন। আর ‘যাযাবর’-এর দুই ডিজাইনার কনিকা সচদেব ও নীলাঞ্জন ঘোষের আয়োজনে ছিল বাংলার ছোঁয়া। তাঁদের পোশাকে মোটিফ হিসেবে বাঘ, মাছ দেখা গেছে। এ ছাড়া চান্দেরি সিল্ক, অরগেঞ্জা, টেক্সচারড কটন, সিল্ক, ভেলভেটের ওপর ইন্দোনেশিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এঁকেছেন তাঁরা। ডিজাইনার অভিষেক শর্মা ‘কোরাল রিফস’ সংগ্রহে মোটিফ হিসেবে মেলে ধরেছেন নানা সামুদ্রিক প্রাণী, প্রবাল। আরও কিছু ডিজাইনার সামুদ্রিক প্রাণী, নানা সামুদ্রিক উদ্ভিদকে মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
আসরজুড়ে বেশি দাপট দেখিয়েছে রংবেরঙের ফ্লোরাল প্রিন্ট। এ ছাড়া জাপানের জনপ্রিয় নৃত্যধারা কাবুকি, জ্যামিতিক নানা আকার, শব্দছক, পোস্টকার্ড, দেবনাগরী এবং ইংরেজি ভাষা, বাঘ, হাতি, ময়ূর, পাখি, সমুদ্রপারে ব্যবহৃত ছাতা, লেবু, দোদুল্যমান ফুল ইত্যাদি মজাদার জিনিসকে মোটিফ হিসেবে তুলে ধরেছেন ডিজাইনাররা। এ বছর পোশাকের ওপর প্রাণী, প্রকৃতি এবং পরিবেশের গল্প প্রাধান্য পাবে।
উৎসবের আমেজ
ডিজাইনার অনুশ্রী রেড্ডি তাঁর ‘অহল্যা’ শীর্ষক সম্ভারে ইতিহাসকে আধুনিক মোড়কে পরিবেশন করেছিলেন। র সিল্ক, কাতান, অরগেঞ্জার ওপর রেশম হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, ভারী জারদৌসি কাজ নজর কেড়েছে। ল্যাকমের আসরে সবচেয়ে নজর কেড়েছে পুণিত বালানার ‘উৎসব’ কালেকশন। তাঁর এই সংগ্রহ রাজস্থানের কালবেলিয়া কমিউনিটি দ্বারা অনুপ্রাণিত। পুণিত তাঁর ‘উৎসব’ ক্যানভাসে সুরখলাল, গুলাবি, গুলাল এবং পিকেল গ্রিন নিয়ে খেলা করেছেন। তিনি মারোডি, গোটা, রেশম, কয়েন, মিরর কারুকাজের সঙ্গে ব্লক প্রিন্ট আর বাঁধনির মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।
ডিজাইনার ভূমিকা শর্মা লেহেঙ্গা চোলি, আনারকলির ওপর ফিরিয়ে এনেছেন সাবেকি শিল্পকলা ডাবকা আর টিলা কাজ। ডিজাইনার তরুণ তাহেলিয়ানির চকচকে শাড়ি বেশ নজর কেড়েছে। এ ছাড়া তিনি লেহেঙ্গা-চোলি, সারারার ওপর এমব্রয়ডারি, চিকনকারি, সিকুয়েন্সের কারুকাজের বাহার এনেছেন। খ্যাতনামা এই ডিজাইনার জাম্প স্যুট, কোট-প্যান্ট, গাউনসহ আরও পাশ্চাত্য পোশাককে সাবেকি রূপে মেলে ধরেছেন।
পশ্চিমের রকমারি
বেশ কিছু ডিজাইনারের সংগ্রহে ছিল পাশ্চাত্য পোশাকের রকমারি। আবার ফিরে এসেছে বেল বটম ডেনিম, ব্যাগি প্যান্ট। এবারের আসরে কো-অর্ডিনেশন পোশাকের দাপট ছিল বেশি। ডিজাইনার সিদ্ধার্থ টিটলার পুরুষদের জন্য বক্সার প্যান্ট, জাম্প স্যুট, অফ-শোল্ডার টপ উইথ হট প্যান্ট, ক্রপ টপ, কার্গো প্যান্ট, মাল্টিকালার জ্যাকেট, এমব্রয়ডারি করা নেটের জ্যাকেট এনে চমক দিয়েছেন। ডিজাইনার ধ্রুব ভয়েইশ আর সাহিল আনেজা পুরুষদের জন্য নিয়ে এসেছিলেন নানান কাটের শার্ট আর কোট। ডিজাইনার অবনি আনেজা ভ্রমণকালীন আরামদায়ক পোশাক হিসেবে প্রদর্শন করেন ঢিলেঢালা জিনসের সঙ্গে ওভার সাইজ রিসোর্ট শার্ট। অন্বিতা শর্মা জাপানি স্ট্রিট ওয়্যারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। হাঁটু পর্যন্ত ঝোলা রোব, ব্যাগি প্যান্ট, অতিরিক্ত ঢোলা জ্যাকেটের বাহার এনেছিলেন তিনি। ডিজাইনার আকৃতি এনেছিলেন বিচ ওয়্যারের বৈচিত্র্য। এই রঙিন আয়োজনে ছিল বাহারি বিকিনিসহ নানান আমেজের বিচ পোশাক।