স্কুলে বি প্রসাদ দাসকে নিয়ে সহপাঠীরা হাসাহাসি করত। হ্যাংলা-পাতলা গড়ন, গায়ের রং, ইংরেজি বলার ধরন—এসবই ছিল সহপাঠীদের হাসির কারণ। এ বছর মিস্টার ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের দ্বিতীয় আসরের শিরোপা উঠেছে সেই বি প্রসাদ দাসের মাথায়। এ মুহূর্তে তিনি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন মিস্টার ওয়ার্ল্ডের ১১তম আসরে, ভিয়েতনামে। জেনে নেওয়া যাক ২৪ বছর বয়সী, ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার এই তরুণ সম্পর্কে।
বি প্রসাদ দাসের জন্ম পুরান ঢাকায়। মা গৃহিণী, বাবা চাকরিজীবী। দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রসাদ বড়। ছোট ভাই চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েপ্রসাদ পড়াশোনা করছেন রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ও মার্কেটিংয়ে তৃতীয় বর্ষেছোটবেলা থেকে ক্রিকেট ভালোবাসেন। ফিটনেস কোচ ও পুষ্টিবিদ হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস সায়েন্স অব অ্যাসোসিয়েশনের (এইএসএসএ) সনদও আছে বি প্রসাদের দখলেঅনলাইনে বিভিন্ন ধরনের পডকাস্ট, মোটিভেশনাল স্পিচ শুনতে শুনতে হঠাৎ করেই একদিন রোহিত খান্ডাওয়ালের একটি সাক্ষাৎকার চোখে পড়ে বি প্রসাদের। রোহিত খান্ডাওয়াল ছিলেন মিস্টার ওয়ার্ল্ড ২০১৬-এর বিজয়ী। সেই ভিডিও দেখে প্রসাদ এত উদ্দীপিত হন যে তাঁর মনে হয়েছিল, তিনিও একদিন মিস্টার ওয়ার্ল্ড হবেন। একে একে রোহিতের সব সাক্ষাৎকার, শো দেখে ফেলেনএর পর থেকেই বি প্রসাদ মডেলিংয়ে আগ্রহী হন। ফ্যাশন, নিজের লুক, ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন, ফিটনেস, আত্মবিশ্বাসী হওয়া, ভালো করে কথা বলা, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া—এসব নিয়ে পডকাস্ট, বিভিন্ন ভিডিও দেখতে থাকেন। নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন মিস্টার ওয়ার্ল্ডের জন্যঢাকায় কোথায় মডেলদের গ্রুমিং, অর্থাৎ ঘষেমেজে তৈরি করা হয়, এ বিষয়ে সার্চ দিয়ে পান ‘লিনাস গ্রুমিং স্টুডিও’। ২০১৮ সালে একদিন বাসে করে প্রথমবারের মতো যান নিকেতনে, সেই স্টুডিওতে, আর নবম ব্যাচে ভর্তি হয়ে যানস্টুডিও থেকে মডেলিং ইন্ডাস্ট্রির অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয় বি প্রসাদের২০২১ সালে বি প্রসাদ ‘ফেস অব বাংলাদেশ’-এ অংশ নেন। তবে সেবার সেরা ১০-এ থাকতে পারেননি২০২৩ সালে আবারও ‘ফেস অব বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। সেবার ঠিকই সেরার মুকুট ওঠে বি প্রসাদের মাথায়একই বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় আরেকটি বিউটি পেজেন্টে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনিদক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফিরে পেশাদার মডেল হিসেবে কাজ করা শুরু করেন২০২৪ সালে জানতে পারেন, মিস্টার ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। ভাবলেন, এই তো সুযোগ। সুযোগটা কাজে লাগাতে পেরেছিলেন বি প্রসাদ। বললেন, ‘একদিন ইউটিউব স্ক্রল করতে করতে একটা ভিডিও দেখে ভেবেছিলাম, আমিও একদিন মিস্টার ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হতে চাই। সেই স্বপ্নটা সত্যি হয়েছে। তার মানে আপনি স্বপ্ন দেখলে, লেগে থাকলে সেটা সম্ভব। একদিন না একদিন স্বপ্নটাকে ঠিকই ছুঁয়ে ফেলতে পারবেন।’স্ট্রাইডের স্যুট-প্যান্টে বি প্রসাদ। কালো অক্ষরে জুলাই-আগস্টের ছাত্রজনতার বিক্ষোভে শহীদদের নাম লেখা বাংলাদেশ থেকে স্ট্রাইড, জেন্টালম্যানস ওয়ার্ডরোব, বিট, ইংমিয়া বাই মলিসহ বিভিন্ন ডিজাইনার্স কালেকশন (পোশাক, জুতা ইত্যাদি) নিয়ে গেছেন বি প্রসাদভিয়েতনামে দারুণ সময় কাটছে বি প্রসাদের ভিয়েতনামের হ্যানয় থেকে বললেন, ‘এখানকার লোকজন খুব অমায়িক। বিশ্বের ৮০টি দেশ থেকে সেরা প্রতিযোগীরা অংশ নিয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত নানা কিছু শিখছি। প্রতিদিন হরেক রকমের চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। নিজের সেরাটা ঢেলে দিচ্ছি। নিজের সেরা সংস্করণ হয়ে ওঠার জন্য এর চেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম আর হয় না।’