ফ্যাশনধারা যতই বদলাক, মূল কিছু স্রোত কিন্তু রয়েই যায়। ফ্যাশন–দুনিয়ায় ব্লক প্রিন্ট আর স্ক্রিন প্রিন্ট তেমনই দুটি ধারা। ৩৫০০ থেকে ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভেতর, অর্থাৎ সিন্ধু সভ্যতার আমলে ব্লক প্রিন্টের খোঁজ পাওয়া যায়। পরে মোগল পৃষ্ঠপোষকতায় উপমহাদেশে ব্লক প্রিন্ট বিকাশ লাভ করে। যুক্ত হয় ফুলের মোটিফ। স্ক্রিন প্রিন্ট অবশ্য তুলনামূলক ‘নতুন’। ২২১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চীনে সর্বপ্রথম এর ব্যবহার হয়েছে বলে জানা যায়। এরপর জাপানেও সহজ এক পদ্ধতিকে কাজে লাগানো হয়। সপ্তদশ শতকে ফ্রান্সে রেশমের স্ক্রিন ব্যবহার করে স্ক্রিন প্রিন্ট করা হয়। এভাবে যুগ যুগ ধরেই ব্লক প্রিন্ট আর স্ক্রিন প্রিন্ট টিকে আছে, খালি সময়ের সঙ্গে বদলেছে ডিজাইন আর প্যাটার্ন।
ফ্যাশনে নিজস্বতা
তিন যুগ আগে এই ব্লক আর স্ক্রিন প্রিন্ট নিয়ে কাজ শুরু করে ফ্যাশন হাউস চৈতি। এই সুদীর্ঘ সময়ে বহুবার বদলেছে ফ্যাশনের পালা। কিন্তু ফ্যাশন হাউসটি এই মাধ্যম দুটিতেই কাজ করে চলেছে। শুরুর সময় ভাবনাটা ছিল ভিনদেশি পণ্যের ভিড়ে একেবারেই আলাদা কিছু করা, যাতে থাকবে নিজস্বতা। সেই শুরু। আরামদায়ক সুতি কাপড়ে ব্লক আর স্ক্রিন প্রিন্টে তিন যুগ ধরে অনন্য নকশা ফুটিয়ে তোলার কাজটি করে চলেছেন চৈতির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ডিজাইনার মো. সাইদুর রহমান। শুরু থেকেই তিনি চেয়েছেন, বাজারে বিদ্যমান নকশার চেয়ে আলাদা কিছু করতে। সেই অনন্যতাই হয়ে উঠেছে চৈতির পরিচয়। তবে শুরুতে নিজেও ভাবেননি, ক্রেতাদের মধ্যে এমন সাড়া ফেলবে চার ভাইয়ের সম্মিলিত এই উদ্যোগ।
উপস্থাপনে নতুনত্ব
ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফটের পরিচালক খালিদ মাহমুদ খান বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্লক প্রিন্ট এবং পরে স্ক্রিন প্রিন্ট মাধ্যমে অলংকরণের চর্চা হয়ে আসছে বহু বছর। কিছু কিছু বিষয় কখনো পুরোনো হয় না, বরং নতুন ভঙ্গিতে ফিরে ফিরে আসে। আমাদের কাছে ব্লক প্রিন্ট এবং স্ক্রিন প্রিন্ট তেমনি প্রিয় মাধ্যম।’ এমন মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় কাজের সুযোগ পান একজন ডিজাইনার। তা ছাড়া হাতের কাজ বা এমব্রয়ডারি যোগ হলেও সাদামাটা পোশাকে আসে ভিন্ন মাত্রা।
সাদামাটায় আভিজাত্য
ব্লক প্রিন্ট বা স্ক্রিন প্রিন্টে নেই বাড়তি চাকচিক্য। কিন্তু তাতে কি আর পোশাকটাকে ম্রিয়মাণ দেখায়? একদমই না। বরং হালকা নকশাতেই ফুটে ওঠে আভিজাত্য। সাদামাটা নকশার এসব পোশাক নিত্যদিন ব্যবহার করা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে, আভিজাত্য বজায় রেখে। গ্রীষ্মপ্রধান এই দেশে হালকা কাজ করা সুতি কাপড়ের পোশাক বছরজুড়েই সমাদৃত। ঘরে কিংবা বাইরে দিব্যি ব্যবহার করা যায় এসব পোশাক। উঠতি বয়সীরা যেমন পছন্দ করেন, তেমনি বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির জন্যও এমন নকশা মানানসই। অর্থাৎ এটি সব বয়সী নারী-পুরুষের জন্যই উপযুক্ত এক ধারা।
রঙে, নকশায় বৈচিত্র্য
ঐতিহ্যবাহী মোটিফ থেকে নকশায় নতুনত্ব সৃষ্টি করেন এ ধারার ডিজাইনাররা। ফুলের মোটিফ, জ্যামিতিক মোটিফ কিংবা শঙ্খজাতীয় নকশার ব্যবহার যেমন হতে পারে, তেমনি হতে পারে বিমূর্ত নকশা । একরঙা কাপড়ের ওপর বৈচিত্র্যময় নানা রং দিয়ে হতে পারে নকশা। কোনো একটি রঙের কাপড়ের ওপর বিপরীত ধরনের (কন্ট্রাস্ট) রং দিয়ে হতে পারে কারুকাজ। আবার কাপড়ের রঙের কাছাকাছি রঙের প্রিন্টেও ফুটে ওঠে সুন্দর নকশা। উৎসব-আয়োজনে পরার উপযোগী ভারী নকশাও হয় এসব প্রিন্টে।
ভিন্ন কাটের পোশাকে
শাড়ি কিংবা প্রথাগত কাটের সালোয়ার-কামিজ তো বটেই, আধুনিক ধারার পোশাকেও ব্লক প্রিন্ট এবং স্ক্রিন প্রিন্টের নকশা মানানসই। খাটো কামিজ, কুর্তা, ফতুয়া কিংবা কটিতে যেমন এই মাধ্যমের কাজ ফুটে ওঠে, তেমনি একেবারেই ভিন্নধারার কাট, চওড়া ঘেরের আনারকলি কামিজও করা যেতে পারে। পাশ্চাত্য ধাঁচের কাটে দেশজ নকশায় ফিউশনও হতে পারে। দেশীয় কাপড় কিনে পছন্দসই কাটে পোশাক বানানোর সুযোগ তো রয়েছেই।
যত্ন–আত্তি
এ ধরনের কাপড় উল্টো করে ধোয়া উচিত। মৃদু ডিটারজেন্ট দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই ধুয়ে ফেলতে হয়। ডিটারজেন্টে ভিজিয়ে রেখে দেওয়া উচিত না। সফটেনার কিংবা ব্লিচজাতীয় উপকরণ রয়েছে, এমন ডিটারজেন্ট বাছাই করা যাবে না। গরম পানি বা গরম বাতাসে কাপড়ের ক্ষতি হতে পারে। তাই যন্ত্রের সাহায্যে শুকাবেন না। ড্রাই ক্লিন করবেন না। আলাদাভাবে ধোয়া ভালো। জোরে চিপে নিংড়াবেন না, বাড়ি দেবেন না। ছায়ায় বা হালকা রোদে দিতে পারেন। ইস্ত্রি করুন উল্টো করে।