কে এই ফ্যাশনিস্তা রাজকুমারী?

রাজকন্যার রাজকীয়সব ব্যাপার স্যাপারের কি কেবল রূপকথার গল্পের বইতেই মেলে! বাস্তবেও এখনো দেখা মেলে রাজকন্যাদের। যদিও সংখ্যায় তাঁরা খুবই নগন্য। ভারতের ধনকুবের আর রাজপরিবারের অনেকেই ফ্যাশনিস্তা হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন। আম্বানি পরিবারের নারীরা তো জনপ্রিয়তায় বলিউড তারকাদেরও পেছনে ফেলতে পারবেন! ভারতের ফ্যাশনে বারবার উঠে আসছে আরেক তরুণীর নাম। তিনি সরাসরি রাজপরিবারের সদস্য। রাজস্থানের রাজকুমারী গৌরবী কুমারী। ‘হারপারস বাজার’ (ইন্ডিয়া), ‘ফেমিনা’সহ ভারতের বিভিন্ন ফ্যাশন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে দেখা গেছে ২৪ বছর বয়সী এই রাজকুমারীকে। প্যারিস ফ্যাশন উইকসহ আন্তর্জাতিক নানা ফ্যাশন উৎসবেও অতিথি হিসেবে নেমন্তন্ন পান গৌরবী। সম্প্রতি খুলেছেন নিজের ক্লোদিং ব্র্যান্ড। আর সেই প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীই ভারতের রাজস্থানের জয়পুরের স্থানীয় নারীরা। ফ্যাশনিস্তা ও ফ্যাশন ব্যবসায়ী এই রাজকুমারী সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

গৌরবী কুমারীর পুরো নাম রাজকুমারী শ্রী গৌরবী কুমারী লাল সাহিবা। তিনি মহারাজকুমারী শ্রী দিয়া কুমারী সাহিবার একমাত্র কন্যা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
গৌরভী কুমারীর মা দিয়া কুমারী রাজপরিবারের সদস্য হয়েও একজন সাধারণ মানুষকে বিয়ে করেছিলেন। ১৯৯৪ সালের সেই বিয়ে ২০১৮ সালে ভেঙে যায়। দিয়া কুমারী ভারতের সংসদ সদস্য। সেই সঙ্গে তিনি রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী। গৌরবীর মায়ের মোট সম্পদের পরিমাণ ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৩০ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা! ছবিতে ফেমিনার প্রচ্ছদে মা–মেয়ে
জয়পুরের রাজমাতা মহারানি গায়ত্রী দেবী তাঁর নানির মা। রাজমাতা পদ্মিনী দেবী তাঁর নানি
ফ্যাশনে রাজকীয় ঐতিহ্য আর আধুনিকতা—উভয়কেই ধারণ করেন গৌরবী কুমারী
ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীসংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২ লাখ ৬৪ হাজার (২১ এপ্রিল পর্যন্ত)
বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘হ্যালো’র ভারতীয় সংস্করণের এপ্রিল সংখ্যায় ভারতের সবচেয়ে সুন্দর ২৮ মানুষের একজন হয়েছেন গৌরবী
মাত্র ১১ বছর বয়সেই গৌরবী বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে কেউ তাঁর পরিচয় জানত না। ফলে অন্য সবার মতোই স্বাভাবিক শৈশব পেয়েছেন এই রাজকুমারী
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন’ নিয়ে স্নাতক করেন গৌরভী
স্নাতক শেষে গৌরবী নিউ ইয়র্কের পেপার ম্যাগাজিনে শিক্ষানবিশী করেন। ফটোশুটের স্টাইলিং করাতেন। তখন থেকেই তিনি ফ্যাশন ব্যবসাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন
ইতিমধ্যে গৌরবী চালু করেছেন তাঁর নিজের ক্লোদিং ব্র্যান্ড পিডিকেএফ (প্রিন্সেস দিয়া কুমারী ফাউন্ডেশন)। এটা তাঁর মা দিয়া কুমারীর সমাজসেবামূলক কাজের প্রতিষ্ঠানের একটা অংশ। ছবিতে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে
এখানে রাজস্থানের স্থানীয় নারীরাই কাজ করেন। তাঁদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়
গৌরবী তাঁর ফ্যাশন ব্র্যান্ডকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যেতে চান। সেই সঙ্গে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে স্থানীয় নারীদের ভাগ্যের পরিবর্তন চান। ইতিমধ্যে ফরাসি ও মার্কিন দুটি প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যাচ্ছে গৌরবীর ব্র্যান্ডের পোশাক
ছবিতে বলিউড তারকা কারিনা কাপুরের সঙ্গে
গৌরবী নিজেও রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরতে ভালোবাসেন। আর ব্যক্তিগত জীবনকে আড়ালে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন
রাজকুমারী বলে যে তিনি শরীরে রাজকীয় পোশাক চাপিয়ে ঘুমাতে যান বা ঘুম থেকে ওঠেন তা নয়। গৌরবী বলেন, ‘আর সব তরুণীর মতো আমিও প্রিন্টের পায়জামা আর আরামদায়ক টপ পরেই ঘুম থেকে উঠি।’
গৌরবী ঘুম থেকে উঠে কফি দিয়ে দিন শুরু করেন। জিমে যান। সকালের নাশতা সেরেই তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী নারীদের সঙ্গে দেখা করেন। মিটিং সারেন
প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও পিডিকেএফ স্টোরে গিয়ে সময় কাটান। ছবিতে পিডিকেএফ স্টোরের কর্মজীবী নারীরা
গৌরভী প্রতিদিন পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়েন। টেলিভিশনও দেখেন। অবসরে তিনি প্রকৃতি আর পোষা প্রাণীদের সঙ্গে সময় কাটান
ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন এই রাজকুমারী
গৌরবী নিজের প্রতি সৎ থাকা, দুশ্চিন্তামুক্ত ইতিবাচক জীবনযাপন, অন্যকে সাহায্য করা আর প্রতিদিন একটু একটু করে নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়া—এই বিষয়গুলোর ওপর জোর দেন