গতানুগতিক ফ্যাশন শোর গড্ডলিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে ভিন্নধর্মী এক শোয়ের আয়োজন করেছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার ফায়জা আহমেদ। পোশাকের চাকচিক্য কিংবা গয়নার জাঁকজমক নয়; বরং তার এই শোতে নারীত্বের অনুভবকে শৈল্পিক রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে ‘আত্মবল জিরো পয়েন্ট জিরো ওয়ান’ শিরোনামের এই আয়োজনে নিজের নকশা করা ১০টি পোশাক উপস্থাপন করেন তিনি।
ফায়জা আহমেদ এই আয়োজনের নাম দিয়েছিলেন ‘আত্মবল’। নারীর জীবনের স্বাভাবিক ঘটনাপ্রবাহ, যা এ দেশের সামাজিক পরিসরে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপিত হয়, তার সবটাই যে একজন নারীর শক্তি, সেটাই এই শোয়ের মাধ্যমে বলতে চেয়েছেন তিনি। ঋতুস্রাব, গর্ভধারণ, বিবাহবিচ্ছেদ—কোনো কিছুই নারীর নিজস্ব শক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারে না; বরং নারী সব সময়ই আত্মশক্তিতে বলীয়ান। এই অনুভবকে অন্তরে ধারণ করেন ফায়জা। সেই অনুভবকেই নিজের কাজে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।
তাঁর নকশা করা ১০টি পোশাক পরে দুই ধাপে হেঁটেছেন মডেলরা। তবে তা কোনো উচ্চশব্দের দ্রুত লয়ের গানের সঙ্গে নয়। বরং ধীরলয়ের সংগীতের সঙ্গে ধীরগতিতে হেঁটে অতিথিদের সামনে নীরবে নারীত্বের গল্প বলে গেছেন তাঁরা। দ্বিতীয় ধাপে তানভীর আলমের গান, রাশিদ খানের আবৃত্তির সঙ্গেই হাঁটেন মডেলরা। উপস্থাপনের পুরোটাই হয়েছে আলো-আঁধারির মাঝে। অনুষ্ঠানে কিছুটা সময় ছিল নিস্তব্ধতার মাঝে জলপতনের শব্দতরঙ্গের খেলা। প্রথাগত ফ্যাশন শোর চেয়ে প্রশান্তিদায়ক একটি আয়োজন করতে চেয়েছিলেন ফায়জা আহমেদ।
ভবিষ্যতে এমন আয়োজন আরও করার ইচ্ছা তাঁর রয়েছে। পোশাকের সাদা, মেটে আর ছাই রং তুলে ধরেছে আমাদের দেশের ভূগোল, কালো রঙে সমাজের নেতিবাচকতা আর সোনালি রং নারীশক্তির প্রতীক। মাসিক এবং মাতৃত্বের স্বাভাবিক বিষয়গুলোকে লালের ছোঁয়ায় বোঝানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন করপোরেট ব্যক্তিত্ব রুবাবা দৌলা মতিন, ঢাকা গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি মুস্তাফা খালিদ, বাউল দেবোরা জান্নাত ও ফায়জা আহমেদ। ফায়জা আহমেদের প্রয়াত পিতা ফোরকান উদ্দীন আহমেদের নামে আয়োজনটি উৎসর্গ করা হয়েছে। পোশাকগুলোর নিলাম থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৬০ শতাংশ একটি বৃদ্ধাশ্রমে প্রদান করা হবে। কেউ চাইলে ফ্যাশন হাউস মানাস থেকেও তা সংগ্রহ করতে পারবেন।
অতিথি আপ্যায়নেও ছিল ভিন্নতা। খাবারের আয়োজন ছিল ভেগান অর্থাৎ পুরোপুরিভাবে উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে তৈরি। সেখানে তালের পিঠা, ঢ্যাপের খইয়ের মোয়ার মতো সুস্বাদু কিন্তু অবহেলিত দেশজ খাবারকে সামনে নিয়ে এসেছিলেন ফায়জা আহমেদ। খাবার পরিবেশন করা হয়েছে কলাপাতায়, মাটির পাত্রে দেওয়া হয়েছিল চা।