বড় পর্দার তারকা নন তাঁরা, ছোট পর্দাও তাঁদের ক্ষেত্র নয়—ইনফ্লুয়েন্সারদের জগৎ আলাদা। তাঁরা ইনস্টাগ্রাম, টিকটক বা ফেসবুক দুনিয়ার বাসিন্দা। সাধারণ একজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী প্রথম দিকে নিজের ব্যক্তিগত স্টাইলটাই তুলে ধরেন। সবার সঙ্গে ভাগ করে নেন পোশাক, ঘুরে বেড়ানো, খাওয়া, পছন্দ-অপছন্দ বা রূপচর্চার তথ্য। তিলে তিলে গড়ে ওঠে ভক্তকুল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম ছবিটি দেওয়ার সময় তাঁরা হয়তো ভাবতেও পারেননি যে একসময় তাঁরাই হয়ে উঠবেন ইনফ্লুয়েন্সার।
সাহার আবেদীন
ইনস্টাগ্রামে পরিচিত: Boomeraanga
কিশোর বয়স থেকেই দ্বিধায় ভুগতেন সাহার আবেদীন। লেখাপড়ায় ভালো না হওয়ার কারণে পরিবার থেকেও শুনতে হতো নানা কথা। একপর্যায়ে আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। সে সময়ে মা–বাবার বিচ্ছেদও ছিল বিষণ্নতার বড় আরেকটা কারণ। ইন্টারনেটের পর্দায় ঘুরতে ঘুরতে ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ শব্দটিতে একদিন চোখে আটকে যায়, শুরু করেন এই বিষয়ে খোঁজখবর। ২০১৭ সালে ইনস্টাগ্রামে পাবলিক প্রোফাইল খোলেন। ২০১৮ সালে সাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌন্দর্যচর্চা কেন্দ্র প্রিভে স্যালন। চুলের ওপর শুট ছিল। কাজ পছন্দ হওয়ায় পরে আবার তাঁকে কাজ করার জন্য অনুরোধ করে তারা। পরের বিষয় ছিল কনের সাজ। এই শুটটি করার পরপরই নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলটিকে আরও ভালোভাবে গুছিয়ে নেন সাহার। ছোটবেলা থেকেই ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে পছন্দ করতেন, সেটা এখন এসে বেশ কাজ দিচ্ছে। সাহার প্রথম থেকেই পরিশীলিত, অভিজাত ও রুচিসম্পন্নভাবে সাজতে পছন্দ করতেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় মা আমাদের সুন্দর করে কাপড় সেলাই করে পরিয়ে দিতেন। ওখান থেকে পোশাকের প্রতি একটা আগ্রহ জন্মে।’
সাহার আবেদীন নিজে যখন কোনো ব্র্যান্ডের ওপর কাজ করেন, আইফোন ১২ দিয়েই ছবি তোলেন। তবে বেশ কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখেন। কাজ করতে করতে শিখেছেন ভালো ছবি তোলার কৌশল, অ্যাঙ্গেল, ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড, আলো, পোশাকের স্টাইলিং। পরে ছবি ও ভিডিও এডিটিংও শিখে নেন। কামিজের ছবি যখন তোলেন, পোশাকের প্রতিটি বিষয় যেন আসে, খেয়াল রাখেন সেদিকে। না হলে তো গ্রাহকেরাও বুঝতে পারবে না। ছয় বছর ধরে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন সাহার। ৫০টির বেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু ইনস্টাগ্রাম যখন খোলেন, কখনো ভাবেননি এর মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতে পারবেন। ব্র্যান্ডগুলোর মাধ্যমে মাসে এখন এক লাখের মতো টাকা আয় করেন।পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান, জানতে চাইলে সাহার বলেন, ‘কানের রেড কার্পেটে যেতে চাই। প্রমাণ করতে চাই, কনটেন্ট ক্রিয়েটিংকে ছোট নজরে দেখার কিছু নেই। আপনি যদি জীবনে কিছু চান, সেটা পূর্ণ করা সম্ভব। লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য থাকতে হবে। এই দুটি ছাড়া জীবনে কিছু অর্জন করা যায় না।’ ডিজাইনার জুহায়ের মুরাদের পোশাক পরার স্বপ্ন দেখেন।
‘বুমেরাঙা’ নামটি বেছে নেওয়ার পেছনেও আছে মজার কাহিনি। আদর করে দাদি তাঁকে ডাকতেন রাঙা। ইনস্টাগ্রামে বুমেরাং অ্যাফেক্ট পছন্দ করতেন। দুটি মিলিয়ে বুমেরাঙা। ইনস্টাগ্রাম সাহার আবেদীনের জীবনটা বদলে দিয়েছে। নিজে যেহেতু অনুপ্রাণিত হয়েছেন, চেষ্টা করেন এই মাধ্যম দিয়ে অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করতে। অনুসরণকারীদের জন্য ছোট্ট একটি টিপস দিয়ে সাক্ষাৎকার শেষ করলেন। জানালেন, নিজেকে সাজাতে দামি ব্র্যান্ডের পেছনে ছুটতে হবে না। অনেক দামি পোশাক বা ব্যাগ আপনাকে আত্মবিশ্বাস এনে দিতে পারবে না। বরং রুচি থাকলে অনেক কম দামি পণ্য দিয়েও সাজিয়ে তুলতে পারবেন নিজেকে।
নিবিড় আদনান
ইনস্টাগ্রামে পরিচিত: nibirnahid
নিবিড় আদনানের আসল নাম আদনান ইবনে হারুন। দেশে কিংবা বিদেশে বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের বিলবোর্ড, ম্যাগাজিন আর পোস্টারের পরিচিত এক মুখ তিনি। ২০০৯ সালে ২১ বছর বয়সে শুরু করেন মডেলিং। ছবি তোলার প্রতি ভালোবাসা আর মনের মতো ছবিগুলো বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতেই ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার শুরু করেন এই তরুণ।
নিবিড় বলছিলেন, বর্তমানে মডেলদের জন্য ইনস্টাগ্রাম একটা পোর্টফোলিওর মতো কাজ করে। ফলে কোম্পানি ও মডেলদের মধ্যে আগের চেয়ে যোগাযোগ অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলো মডেল ও অভিনেতাদের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল অনুসরণ করে। তাই আজকাল নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুকের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রামেও বেশ সক্রিয় এই তরুণ। সেখানে রয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার অনুসরণকারী।কথায় কথায় জানালেন প্রাচ্যনাট থিয়েটারে ডুমুরখেকো মানুষ নামে একটি নাটকে অভিনয়ও করেছেন নিবিড়। মডেলিং ও অভিনয়—দুটিতেই নিজেকে ভারতীয় তারকা হৃতিক রোশনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। সে জন্য অবশ্য নিজেই নিজেকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন।
রুবাইয়াৎ তাসনিম
ইনস্টাগ্রামে পরিচিত: Lamuuu_
ইনস্টাগ্রামে রুবাইয়াৎ তাসনিমের অনুসরণকারী ১ লাখ। মডেলিং দিয়ে শুরু করেছিলেন পেশাগত জীবন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকের জন্য ফটোশুট করেন। সেসব ছবির পাশাপাশি নিজের তোলা ছবিও পোস্ট করতেন ইনস্টাগ্রামে। অনেকেই জানতে চাইতেন পোশাক বা সাজের বিষয়ে। ধীরে ধীরে যখন বুঝতে পারলেন, আসলেই সবাই জানতে চাইছে বিষয়গুলো নিয়ে, টিউটোরিয়াল করা শুরু করেন। কোথাও বেড়াতে গেলে ভিডিও করতেন, ভাগ করে নিতেন সবার সঙ্গে। এভাবেই ইনস্টাগ্রামে যাত্রা শুরু। ইতিমধ্যে ৭০টির বেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইনস্টাগ্রাম আমার জীবনের অনেক বড় একটা ইতিবাচক দিক। একজন মানুষ হিসেবে আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
আমি এখন আর্থিকভাবে স্বাধীন। এটা আমার জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আমি আমার মত প্রকাশ করতে পারি। মানুষ যেন আমার জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে, নিজেকে পাঁচ বছর পর সে রকম একটা জায়গাতেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’ এখন আগের মতো আর গতানুগতিক মডেল হিসেবে কাজ করেন না। বিভিন্ন ব্র্যান্ড পোশাক পাঠিয়ে দেয়। নিজের মতো করে শুট পরিচালনা করেন রুবাইয়াৎ তাসনিম লামিয়া। ফটোগ্রাফার ভাড়া করেন। এক লাখের মতো উপার্জন করে থাকেন মাসে। উৎসবের সময় ওপরে উঠে যায় এ অঙ্ক।