সাধারণ গয়নাতেই সাজে এসেছে অসাধারণ ভাব
সাধারণ গয়নাতেই সাজে এসেছে অসাধারণ ভাব

দেশীয় গয়নায় এমন নতুনত্ব আগে কি দেখেছেন

সামনে আসছে অনুষ্ঠানের মৌসুম। ঠান্ডা আবহাওয়ায় সাজের সঙ্গে মিলিয়ে গয়নাও পরা যাবে নানা ঢঙে। দাওয়াত কিংবা ক্যাজুয়াল, গয়নার স্টাইলে সাজ হয়ে উঠুক আরও ফ্যাশনেবল।

গয়নার কাজ কী? ব্যক্তিত্ব তুলে ধরা? সাজে বাড়তি আবেদন আনা? নাকি চলতি ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। কয়েকজনকে প্রশ্নগুলো করেছিলাম। উত্তরে প্রথম দুটির পক্ষেই রায় এসেছে বেশি। আর যাঁরা নিয়মিত গয়না পরেন, চলতি ধারার বিষয়টি যেন এমনিতেই চলে আসে। কারণ, সোনা, রুপার না হলেও অন্য ধরনের গয়না তো কিছুদিন পরপরই কেনা হয়। আর সেখানে দেখা যায় চলতি ধারাটাই প্রাধান্য পায় বেশি।

প্যাচওয়ার্কের জ্যাকেটের সঙ্গে সুতার তৈরি ঝোলানো দুল

সামনে কয়েকটা মাস যেন সাজের জন্য আদর্শ। ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় গয়নাও পরা যাবে জমকালো করে। দাওয়াত কিংবা ক্যাজুয়াল, পরিবেশ আর স্থান অনুযায়ী স্টাইলিং করার সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলুক।

আন্তর্জাতিক বাজারে চলছে গয়নার এক রকম ধারা। তবে গয়নায় আমাদের দেশীয় ধারার আকর্ষণই যেন বেশি। খুঁতের ডিজাইনার ঊর্মিলা শুক্লা জানালেন, ‘বাইরের ধারা নয়, বরং নিজেদের মতো করেই তাঁরা বানাচ্ছেন গয়না। পুঁতি, কড়ি, কাঠ, তামা, রুপা ব্যবহার করা হয় বেশি।’

বিডসের তৈরি গয়নায় স্মার্ট এবং ক্যাজুয়াল লুক

বাজার ঘুরে দেখা গেল, গয়না বানাতে সুতা থেকে শুরু করে তামা, পুঁতি, কাঠ, রুপা, কাগজ, মাটি, কাপড়, কাচ ইত্যাদি উপকরণ বেছে নেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন ভাবনা যেমন আসছে, তেমনি পুরোনো ধারাও কিন্তু আছে। মুক্তার গয়না, কাটা নকশার কাজ করা গয়না, ফুলের কাজ, হাতে মোটা বালা পরা, স্তর করে পরা, গলার সঙ্গে লাগানো মালা, ঝোলানো কানের দুল, রুপালি আর সোনালি ধাঁচের গয়না মিলিয়ে পরা কিংবা চেইনে ঝোলানো ছোট একটা লকেট সব সময়ই পরা হচ্ছে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, গয়নার চলতি ধারাতেও এ বিষয়গুলোই দেখা যাচ্ছে।

গয়নাকে কীভাবে অলংকরণ করা উচিত, ডিজাইনারদের ভাবনায় সেটা সব সময়ই ঘুরপাক খেতেই থাকে। ক্যানভাস–এর ডিজাইনার এবং স্বত্বাধিকারী উম্মে হাফসা তন্বী কবির জানালেন, ‘গয়নায় যে ঐতিহ্যবাহী নকশাগুলো আছে, সেটা নিয়ে তো সব সময়ই কাজ করি। তবে তরুণদের জন্য সেগুলোকে নতুনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করি। হাঁসুলি যদি আগের নকশাতেই রেখে দিই, তাহলে তো এই প্রজন্ম আর সেটা পরবে না। গয়না বানানোর সময় আকার আর মোটিফ নিয়ে কাজ করি। হাঁসুলির ওপর আমাদের দেশের ফুল, লতাপাতা, পাখি যখন বসছে, দেশীয় ধাঁচ এমনিতেই চলে আসছে।’

সাদা ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে সোনালি রঙের গয়না। গয়নায় পুরোনো আমলের নকশার ছোঁয়া থাকলেও সাজে চলে এসেছে এখনকার ধারা

শুধু প্রকৃতি নয়, বাসনকোসন, চামচ সবই আছে এখনকার গয়নায়। তবে ছোট আকারে। স্টাইলিং করার সময় ছোট–বড় মিলিয়েও পরতে পারেন। স্টাইল করার সময় পছন্দ না মানানসই, কোনটাকে প্রাধান্য দেবেন, সেটা পুরোপুরি যিনি পরছেন, তাঁর ওপর নির্ভর করা উচিত, মনে করেন ঊর্মিলা শুক্লা। যাঁরা সব সময় ছোট গয়না পরে থাকেন, তাঁদের যে বড় গয়না মানায় না, বিষয়টি কিন্তু তা নয়। কিন্তু দিন শেষে ঘুরেফিরে হয়তো ছোট ছোট গয়নাগুলোই তাঁদের বেশি আকর্ষণ করে। এ ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যটাই প্রাধান্য পায়। আবার অনেকে সৌন্দর্য বিষয়টিকে এগিয়ে রাখার জন্য, সাধারণত পরা হয় না, এমন গয়নাও বেছে নিচ্ছেন। হতে পারে সেটা ছোট কিংবা বড়।

হালকা রঙের পাশাপাশি খুব উজ্জ্বল রঙের গয়নাও নজর কাড়ছে এখন। আবার অনেকে ব্রাসের সোনালি রংকেই তুলে ধরতে চাইছেন। মাটির মূল রঙের গয়নাও আছে, কাগজের রঙিন নকশা থেকেও চোখ সরানো যাচ্ছে না।

বোহিমিয়ান গয়নার স্টাইলে সাজ হয়ে উঠতে পারে ফ্যাশনেবল

কাপড় এবং সুতা পুনরায় ব্যবহার করে নানা ধরনের গয়না আর বেণি ফিতা বানাচ্ছেন তাশার স্বত্বাধিকারী আর ডিজাইনার সঙ্গীতা ওয়াহিদ। টেকসই ফ্যাশন নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন সঙ্গীতা। বোহেমিয়ান স্টাইল বেছে নেওয়ার কারণ, প্রকৃতির রং আর নকশার কাছাকাছি থাকা যায়। শাড়ি, কামিজ, স্কার্টের সঙ্গে গয়না পরার সময় কোনো হিসাব-নিকাশ করার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন ডিজাইনাররা। পাশাপাশি এখন চুলে ক্লিপ, ফিতা লাগানোর ধারাও দেখা যাচ্ছে। এসব উপকরণ ব্যবহার করেও সাজে নিয়ে আসা যায় ভিন্নতা।