৮ বছর বয়সেই নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের মঞ্চে যে চমক দেখালেন এই শিশু

বয়স মাত্র আট। এর মধ্যেই পৌঁছে গেছেন নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের মঞ্চে। শিশু মডেল হিসেবে নয়, একেবারে পুরোদস্তুর ডিজাইনার। নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে এমনই এক চমক দেখালেন মার্কিন ডিজাইনার ম্যাক্স অ্যালেকজেন্ডার, আলো কেড়ে নিলেন নামীদামি ডিজাইনারদের কাছ থেকে। নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে এক ঘণ্টার স্লট পাওয়া আট বছর বয়সী এই ম্যাক্স কে?

ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ম্যাক্সের আগ্রহ শুরু হয় মাত্র চার বছর বয়সে। আগ্রহ বললে ভুল হবে, রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনের কাজ শুরু করেন ম্যাক্স। ডিনার টেবিলে হঠাৎই একদিন ঘোষণা করেন, মা, কাল থেকে আমি পোশাক বানাব। তুমি আমাকে একটা ম্যানেকুইন তৈরি করে দেবে। শুনে মা–ও অবাক। হুট করে পোশাক বানানোর ভূত মাথায় চেপে বসল কোত্থেকে? তবুও ছেলের জোরাজুরিতে কার্ডবোর্ড দিয়ে একটি ম্যানেকুইন তৈরি করে দেন।

বড় বোনের জন্য বানানো পোশাক দিয়ে ম্যাক্সের হাতেখড়ি। চার বছরের বড় বোনের সাইজে একটি কার্ডবোর্ডের ম্যানেকুইন তৈরি করে দেন মা শেরি ম্যাডিসন। সেখানেই বোনের জন্য পোশাক বানানো শুরু করে ম্যাক্স। প্রথম প্রথম মায়ের কাছ থেকে সাহায্য নিতেন। সেলাইয়ের হাতেখড়িও মায়ের কাছ থেকেই। কিন্তু যত বড় হতে লাগল, তত কমতে থাকল মায়ের সাহায্য।

চট দিয়ে ম্যাক্সের নকশা করা পোশাকে মডেল

সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার বেসরকারি একটি স্কুলে পড়াশোনা করে ম্যাক্স। পড়াশোনার পাশাপাশি চলে ফ্যাশন ডিজাইনিং। তাতে অবশ্য পড়াশোনার তেমন ক্ষতি হয় না। ছুটির দিনে কিংবা রাতে পড়াশোনা শেষে পোশাক নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে।

মা–বাবা মিলে পাঁচজনের সংসার। বাবা ফাইন্যান্সে চাকরি করেন। আর মা শখের আর্টিস্ট। ম্যাক্সের বড় এক বোন আর ছোট এক ভাই আছে। ম্যাক্সের পোশাক তৈরিতে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তার মা।

করোনার সময় জনপ্রিয়তা লাভ করেন ম্যাক্স। সবাই তখন ঘরবন্দী, ম্যাক্সের নামে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খোলেন তার মা। ম্যাক্সের দুষ্টুমি, খেলার ছলে পোশাক বানানো—সব ভ্লগ আকারে প্রকাশ করতে থাকেন তিনি। রাতারাতি ইন্টারনেট সেনসেশন হয়ে উঠেন ম্যাক্স।

বর্তমানে ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারী প্রায় ৩৩ লাখ। এখনো তার ইনস্টাগ্রাম দেখাশোনা করেন তার মা শেরি ম্যাডিসন। ম্যাক্সের অনুসারীদের মধ্যে হলিউডের নামীদামি অভিনেত্রীও আছেন।

মডেল ও ম্যানিকুইনের পরনের দুটি পোশাকই ম্যাক্সের নকশায়

হলিউড অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন ও ডেবরা ম্যাসিং ম্যাক্সের ভক্ত। ইনস্টাগ্রামেই ম্যাক্সকে খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। তার প্রতিভায় এতটাই মুগ্ধ হয়েছেন যে নিয়মিতই তাঁদের ম্যাক্সের পোশাক পরতে দেখা যায়।

নিজের ডিজাইন করা পোশাকের ফটোশুটে মডেলের সঙ্গে খুনশুটি

ইনস্টাগ্রামে ম্যাক্সের শিশুতোষ স্বভাবের দেখা মেলে পোশাকের উপকরণ বেছে নেওয়ার সময়। উপকরণে বেছে নেন নিজের তৈরি করা ‘ফ্লুফ’ পদ্ধতি। পোশাকের উপকরণ উপরে ছুড়ে দিয়ে তার নিচ দিয়ে দৌড়ে যান ম্যাক্স। বাথটাবে পানি ভরে তাতে উপকরণ ভাসিয়ে দেন। এরপর সেখান থেকে বেছে নেন পছন্দের জিনিসগুলো। এসব কর্মকাণ্ড অবশ্য ভিডিওতে আরও ভিউ বাড়াতেও সাহায্য করে।

ফ্যাশন ইউকের জন্য নকশা করা পোশাকের সামনে ম্যাক্স

তবে ম্যাক্স লাইমলাইটে এসেছেন এবারের নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে। নিউইয়র্কের ডাউনটাউন হোটেলে বসেছিল এবারের আসর। সেখানে একে একে নিজের বানানো ছয়টি পোশাক প্রদর্শন করেন ম্যাক্স।

নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে তাক লাগিয়েছে ম্যাক্সের তৈরি ফুলেল পোশাকটি। ম্যাক্সের নিজেরও এটি সবচেয়ে পছন্দের পোশাক। কয়েকটি রংয়ের ফুল দিয়ে তৈরি করা গাউনটির নিচের অংশ বানানো হয়েছে নেটের কাপড়ে।

টাই দিয়ে তৈরি করা পোশাকটিও নজর কেড়েছে। পোশাকটিতে রিসাইকেলড কফি বিন ব্যাগও ব্যবহার করা হয়েছে।

নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের ক্রিয়েটরের সঙ্গে ম্যাক্স

নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে ফ্যাশন জগতের নামীদামি ডিজাইনারদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তার কাজ দেখে তাকে ডাকনামও দিয়েছেন মার্কিন ডিজাইনার কেন ডাউনিং। ডাউনিংয়ের কাছে ছোট্ট ম্যাক্স এখন ‘ম্যাক্সিমালিস্ট’।

ম্যাক্সের নকশা করা পোশাক

‘নিউইয়র্ক টাইমস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেন ডাউনিং বলেন, ‘ম্যাক্সের মতো আমিও ছয় বছর বয়স থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের প্রতি আগ্রহী হই। মায়ের আলমারি থেকে কাপড় বের করে নতুন পোশাক বানাতাম।’

অল্প বয়সে খ্যাতি মানেই যেন উড়ে এসে জুড়ে বসা বিড়ম্বনা। তবে শক্ত হাতে তা সামলেছেন ম্যাক্সের মা। ‘ইনস্টাগ্রামে ভক্তদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিতই যোগাযোগ হয়। ম্যাক্সকে আমরা ওর মতো বড় হতে দিচ্ছি।’ পোশাক বিক্রি ও ইনস্টাগ্রাম থেকে প্রাপ্ত অর্থের বেশির ভাগই জমিয়ে রাখা হচ্ছে ম্যাক্সের ভবিষ্যতের জন্য।

ফ্যাশন রানওয়েতে ডিজাইনার

দুনিয়ার সর্বকনিষ্ঠ রানওয়ে ডিজাইনার হিসেবে গিনেস বুকেও নাম তুলেছেন ম্যাক্স অ্যালেকজেন্ডার।

তথ্যসূত্র: দ্য পিপল ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমস