এবারের ছুটিতে কোথায় যাচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকে বলেন, ‘যেদিকে দুই চোখ যায়, সেদিকেই চলে যাব,’ কিন্তু ফেসবুকে পরে যখন তাঁদের ভ্রমণের ছবিগুলো দেখবেন, তখন কোনো দিক থেকেই তেমন অপরিকল্পিত মনে হবে না। উল্টো বোঝা যায় যে থাকার জায়গা থেকে শুরু করে ভ্রমণের পোশাক-আশাকের প্রস্তুতিতে আগে থেকেই ছিল বেশ তোড়জোড়। তাই তো তাঁদের ছবিগুলোও হয় চোখজুড়ানো!
সামনেই ঈদ এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে মিলবে লম্বা সময়ের বিরতি। এ সময়টাকেও কাজে লাগাবেন ভ্রমণপিপাসুরা। কেউ যাবেন পাহাড়ে আর কেউ যাবেন সমুদ্রে। ইতিমধ্যে সবকিছু হয়তো ঠিকঠাকও করে ফেলেছেন অনেকে। এখন চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। অর্থাৎ পোশাক নির্বাচন ও কেনাকাটা। শুধু ফেসবুকের ছবির জন্যই নয়, ঘুরে বেড়ানোর স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ভ্রমণে পোশাক বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ভ্রমণে কেমন পোশাক বেছে নেবেন—এ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনার আফসানা ফেরদৌসী এবং টুকিটাকি শপিংয়ের স্বত্বাধিকারী অনন্যা ইসলাম।
একে তো ভীষণ গরম, তার ওপর ঘর থেকে বের হলেই আছে ঘেমে যাওয়ার সম্ভাবনা। যদিও শহরের বাইরে তাপমাত্রা কম, তবু গরমের কথা মাথায় রেখে মিনিমাল নকশার পোশাক বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার আফসানা ফেরদৌসী। তিনি বলেন, সুতি, লিনেন এবং ভিসকস—এই তিন ধরনের কাপড় হালকা এবং বাতাস চলাচলে কোনো রকম বাধা দেয় না।
পাহাড়ে বেড়াতে গেলে এই তিন ধরনের কাপড়ের তৈরি পোশাক বেছে নিতে পারেন কিংবা চাইলে কাপড় কিনে ইচ্ছেমতো নকশায় তৈরি করিয়েও নিতে পারেন। নকশার ক্ষেত্রে খুব বেশি লেয়ারিং করলে কাপড় যেমনই হোক গরম লাগবে। তাই এক স্তরের অস্বচ্ছ কাপড় দেখে কিনুন। যেকোনো মার্কেটেই এখন মিলবে চলমান ফ্যাশনের কো অর্ড-সেট (এক রং ও ছাপের নকশার জামা-প্যান্ট) পোশাক। এগুলো পাহাড়ের জন্য বেশ উপযোগী। দেখতেও সুন্দর। এ ছাড়া রঙিন সব পকেট-প্যান্টের সঙ্গে ঢিলেঢালা শার্ট ও টপ খুব ভালো মানায়।
ভ্রমণের মৌসুমে ব্যস্ত সময় কাটান টুকিটাকি শপিংয়ের স্বত্বাধিকারী অনন্যা ইসলাম। কেননা তাঁর ব্যবসার মূল আকর্ষণই হচ্ছে নারীদের জন্য ভ্রমণ উপযোগী, রুচিসম্মত ও চলতি ফ্যাশনের সব আধুনিক পোশাক। অনন্যা বলেন, পাহাড় ভ্রমণে পোশাক নির্বাচনে মাথায় রাখা উচিত সবুজের সঙ্গে কোনো রংগুলো ফুটবে। হতে পারে টকটকে লাল, গোলাপি কিংবা একদম হালকা ধূসর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক রঙের পোশাকগুলো পাহাড়ে সুন্দর লাগে। পাহাড়ের উঁচু–নিচু পথ বেয়ে চলাফেরায় যেন অস্বস্তি না হয়, সে জন্য স্কার্ট এবং মিডি-জামা না পরার পরামর্শ দেন অনন্যা।
যাঁরা রিসোর্টে বেড়াতে যাবেন, কোনো রকম হাঁটা-চলার কাজ নেই, তাঁরা যেকোনো পোশাকই নিতে পারেন। তবে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা থাকলে প্যান্টের সঙ্গে শার্ট, টি-শার্ট, টপই ভালো। গয়নার ক্ষেত্রে ভারী কিছু একেবারেই নয়। কানে ছোট্ট টপ, গলায় হালকা চেইন আর খুব বেশি হলে হাতে ব্রেসলেট পরা যেতে পারে। অনেকেই মনে করেন পাহাড়ে টুপির দরকার নেই। এটি ভুল। পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় টুপি কিছুটা হলেও ত্বক এবং চুলকে রোদ থেকে রক্ষা করবে।
অনেকেই মনে করেন, সমুদ্রের সঙ্গে মিলিয়ে পরবেন নীল জামা কিংবা শাড়ি। এতে ক্ষতি নেই, কিন্তু নীলে নীলে মিশে আপনাকেই আর দেখাই যাবে না, বলেন আফসানা ফেরদৌসী। একেবারে সমুদ্রের নীলের চেয়ে নীলের বিভিন্ন শেড বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। বলেন, ‘হালকা কিংবা গাঢ় দুই ধরনের রংই সমুদ্রের সঙ্গে মানায়। তবে একেবারে সমুদ্রের নীল না পরাই ভালো। স্টাইলের সঙ্গে আরামটাও নিশ্চিত করা চাই। তাই পরতে পারেন ক্রসেট, এ-লাইন ফ্রক এবং টায়ার ড্রেস।’
সমুদ্রে বেড়াতে যাওয়ার পোশাক কিনতে এলে ক্রেতাদের স্কার্ট এবং মিডি-ড্রেস নেওয়ার পরামর্শ দেন অনন্যা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘খুব রঙিন পোশাক দৈনন্দিন জীবনে সচরাচর পরা না হলেও সমুদ্রে ঘুরতে গেলে পরাই যায়। খুব রঙিন কিছু না চাইলে দিনের বেলায় বেড়ানোর জন্য সাদা রঙের পোশাক পরতে পারেন। ফ্লোয়িং (ছড়ানো) পোশাকে ফুলের ছাপ খুব ভালো লাগে। ছবিও সুন্দর হয়। কালো রংকে একেবারেই না বলুন। আর পরলেও রাতে পরতে পারেন। তা ছাড়া বড় বড় সামার হ্যাট বা টুপি তো সমুদ্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে রাখতে পারেন রোদচশমা। এ ছাড়া হালকা গয়না পরা যেতে পারে। খেয়াল রাখবেন, পুরো সাজপোশাকটা যেন আরামদায়ক এবং সারা দিনের ঘুরে বেড়ানোর উপযোগী হয়।’