ভারতীয় তারকা সামান্থা রুথ প্রভু তাঁর অভিনয়প্রতিভা আর খোলামেলা কথাবার্তার ধরন ও ব্যক্তিত্বের জন্য দারুণ জনপ্রিয়। টেকসই ও প্রকৃতিবান্ধব ফ্যাশন নিয়ে তাঁর সচেতনতার কথা কে না জানেন। সম্প্রতি ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘এলে’ তাঁকে ‘লিডারস অব চেঞ্জ’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। ২৭ এপ্রিল তারা–ঝলমলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নিজেকে মেলে ধরতে তিনি বেছে নিয়েছিলেন কালো চকমকে ককটেল ড্রেস।
মজার ব্যাপার হলো, এটি কোনো সাধারণ ককটেল ড্রেস নয়। বরং একে ‘প্রতিশোধের পোশাক’ (রিভেঞ্জ ড্রেস) নামে ডাকলেও বাড়াবাড়ি হবে না।
৩৭ বছর বয়সী সামান্থা ২০১৭ সালের অক্টোবরে খ্রিষ্টীয় রীতিতে বিয়ে সেরেছিলেন। বিয়ের দিন পরেছিলেন সাদা গাউন। সেই গাউনই আপসাইকেল করে বানানো হয়েছে এই পোশাক। ২০২১ সালে সাবেক জীবনসঙ্গী নাগা চৈতন্যের সঙ্গে পাকাপাকিভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যায় সামান্থার। আরও দুই বছর আলাদা থাকছিলেন এই জুটি। বিচ্ছেদের পর সামান্থা ‘ফিল্ম কমপ্যানিয়ন’–এর এক সাক্ষাৎকারে সাবেক সঙ্গীর সঙ্গে তিক্ততার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘আমাকে আর ওকে (নাগা চৈতন্যকে) এক ঘরে রাখবেন না। রাখলেও সেই ঘরে কোনো ছুরি, কাঁচি রাখবেন না। এতে খুনোখুনি হয়ে যেতে পারে।’
সামান্থা ইনস্টাগ্রামের পোস্টে এই পোশাকের দুটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আমরা এখন আর টেকসই ফ্যাশনকে আগ্রাহ্য করার মতো পরিস্থিতিতে নেই। একসময় টেকসই ফ্যাশন কেবলই একটা বিকল্প ছিল, আমরা সে সময় অনেক আগেই পার করে এসেছি। পৃথিবীর জন্য এখন এটা জরুরি। আজ আমি যে পোশাক পরেছি, একসময় এটা ছিল আমার সবচেয়ে পছন্দের গাউন। পুরোনো পোশাক আপনি নানাভাবে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে পারেন। আমি কেবল একটি পদ্ধতি (আপসাইকেল) বেছে নিয়েছি। আমি এমন জীবনযাপনে আগ্রহী, যাতে পৃথিবীর কোনো কিছু ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ছোট ছোট অভ্যাস, সিদ্ধান্তগুলো দিন শেষে বড় পরিবর্তন এনে দেয়। তাই সেসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারাও এ রকম ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে বিশ্বকে বাসযোগ্য রাখতে অবদান রাখুন।’
সামান্থার পোশাকটি রিসাইকেল করেছেন ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনার কৃষা বাজাজ। এর আগের পোস্টে কৃষা কীভাবে পোশাকটি বদলে ফেলেছেন, সেটির একটি ভিডিও পোস্ট করেন সামান্থা। সেখানেই দেখা মেলে সামান্থার বিয়ের গাউনের, যেটি ভক্তদের খুবই চেনা। আর পোশাকটির রং ও নকশার সঙ্গে মিল আছে ব্রিটিশ রাজবধূ ও সমাজকর্মী ডায়ানার রিভেঞ্জ ড্রেসের। তাই ইনস্টাগ্রামে সামান্থার এই পোস্টের নিচে ভক্তরা আর ভারতীয় গণমাধ্যম পোশাকটির নাম রেখেছে রিভেঞ্জ ড্রেস।
প্রিন্সেস ডায়না ১৯৯৪ সালের ২৯ জুন ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’ ম্যাগাজিনের আয়োজনে এক তহবিল সংগ্রহের পার্টিতে কালো অফ শোল্ডার একটি পোশাকে দেখা দেন। এই দাওয়াত প্রথমে গ্রহণ করেননি ডায়ানা। পরে জনসম্মুখে পরোক্ষভাবে হলেও প্রিন্স চার্লস ক্যামিলা পার্কারের সঙ্গে পরকীয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন। আদতে চার্লস ও ক্যামিলার প্রেম ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’। পার্টিতে ডায়ানার অন্য একটি পোশাক পরার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে মত বদলে কালো ককটেল মিনি ড্রেসটি গায়ে চাপিয়েছিলেন ডায়ানা।
অনুষ্ঠানের তিন বছর আগে পোশাকটি বানিয়েছিলেন ডায়ানার ডিজাইনার ক্রিস্টিনা স্ট্যাম্বোলিয়ান। তখন ডায়ানা পোশাকটি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘অতিরিক্ত সাহসী’, কেননা রাজপরিবারের নারী সদস্যের পোশাক হিসেবে সেটি ছিল যথেষ্ট ‘খোলামেলা’। এদিকে সামান্থাও একাধিকবার জানিয়েছেন, তাঁর শ্বশুরবাড়ি ছিল যথেষ্ট রক্ষণশীল। সামান্থার পোশাক, কোন সিনেমা করা উচিত—এসবের বিষয়ে হস্তক্ষেপ চলত। এমনকি সামান্থার জন্য ‘আইটেম গান’ ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই বিচ্ছেদের পরই ‘ও আন্তাভা মাওয়া’ গানে দেখা দিয়ে রীতিমতো ঝড় তোলেন সামান্থা।
সূত্র: সামান্থার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া