আপনি কি জানেন, প্রথম দেখায় আপনার ভেতরে একটা মানুষ সম্পর্কে চট করে যে ধারণাটা তৈরি হয়, সেটা কিসের ভিত্তিতে? তিনি যে রঙের পোশাক পরে আছেন, সেই রং আপনার ভেতরে যে ধারণাটা তৈরি করে, তার ওপর ভিত্তি করে। ভোক্তারা ৯৩ শতাংশ ক্ষেত্রে পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নেন রং দেখে। তাই বলাই যায়, রং দেখে যায় চেনা।
আর এ কারণেই প্রতিবছর ফ্যাশনে কোন রংগুলোর আধিপত্য থাকবে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত রুচির পাশাপাশি সংস্কৃতির প্রভাবের সঙ্গে বিশ্বায়নের প্রভাব মিলেমিশে তৈরি হয় রঙের ধারা (ট্রেন্ড)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে তারকা ইনফ্লুয়েন্সাররাও ফ্যাশনের রদবদলে কলকাঠি নাড়েন।
মহামারিকালের পর হঠাৎ করেই ‘ফ্যান্সি রং’ হিসেবে ট্রেন্ডে উঠে আসে গোলাপির বিভিন্ন শেড। ২০২১ ও ২০২২ সালের প্রায় সব ফ্যাশনের লালগালিচায় দাপটের সঙ্গে ছিল গোলাপি। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি মুক্তি পেল ‘বার্বি’ সিনেমা। সেই জ্বরে এখনো পুড়ছে বিশ্ব। ফলে গোলাপির আর ট্রেন্ড থেকে নামার কোনো লক্ষণ নেই।
২০২৪ সালেও ট্রেন্ডে থাকবে গোলাপি। রং মনস্তত্ত্ব অনুসারে, যাঁদের প্রিয় রং গোলাপি, তাঁরা মানুষ হিসেবে আবেগপ্রবণ, নরম প্রকৃতির হন। তাঁরা সংবেদনশীল, কল্পনাপ্রবণ, শিশুতোষ মনের অধিকারী। তাঁরা যত্নশীল, ভালোবাসতে ভালোবাসেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী বা বৈষয়িক নন। জীবনের জয়–পরাজয় নিয়ে বিশেষ ভাবেন না।
রঙের ভেতর দিয়ে এ রকম মনস্তত্ত্বের যাতে জয় হয়, সেটা ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল গোলাপিকে ট্রেন্ডে নিয়ে আসার মূল লক্ষ্য। গোলাপির সঙ্গে হলুদ আর কমলাও সূর্যের রং, শক্তির রং, আশার রং হিসেবে ছিল আলোচনায়।
সব সময়ের ট্রেন্ডি একটা রং হলো কালো। একটা কালো টপ কতভাবে স্টাইলিং করে পরা যায়, সেটা নিয়ে রীতিমতো একটা ফ্যাশন–বিপ্লব ঘটে গেছে। এদিকে কমলাকে বলা হচ্ছে দ্য নিউ ‘ব্ল্যাক’। আসলে মহামারিকালের আগে যেমন ন্যুড রংগুলোই ট্রেন্ডি ছিল, মহামারির পর দীর্ঘ সময় জীবন রংহীন থাকায় মানুষ নিজেকে দেখতে চাচ্ছেন ঝলমলে সব রঙিন রঙে। কমলা, হলুদ আর সাদার মিশ্রণে তৈরি পিচও কম যায় না।
পোশাকে কালোর মতোই লালের আবেদন চিরন্তন। তবে বলিউডের বিয়ের প্রভাবে লাক্সারি বিয়ের পোশাকে এখন ট্রেন্ডে আছে সাদা আর হলুদের মিশ্রণের আইভরি (হাতির দাঁতের রং)। পার্টি সংগ্রহেও রয়েছে আইভরির দাপট। বাদামির সবচেয়ে হালকা শেড বিজ রংও আছে ট্রেন্ডে। পার্টি লুকে ধাতব রঙের চাহিদাও আছে ওপরের দিকে। বসন্তের সংগ্রহেও চলছে গাঢ় মিষ্টি পিচ রং।
গুলশান–তেজগাঁও লিংক রোডের আলোকি কনভেনশন সেন্টারে ঈদের সংগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশের অনলাইনভিত্তিক ফ্যাশন উদ্যোক্তাদের মেলায় গিয়ে দেখা গেল হালকা রঙের দাপট। গাঢ় রংগুলোর মধ্যে নজর কাড়ল মেরুন আর বটল গ্রিন।
‘রোজ বাই নিঝু’র স্বত্বাধিকারী নিঝু জানান, বিশ্বজুড়ে যেকোনো রঙের প্যাস্টেল কালার প্যালেট ভালো চলছে। যেকোনো রঙের সঙ্গে সাদা মেশালে যে হালকা টোনটা তৈরি হয়, সেটি প্যাস্টেল। আর চলছে সবুজের বিভিন্ন শেড, সঙ্গে ফুলেল আর অ্যানিমেল প্রিন্ট। মহামারিকালের পর প্রকৃতি রক্ষার আকুতি থেকে স্লো ফ্যাশন মুভমেন্ট, টেকসই ফ্যাশনের ধারায় এই রংগুলো উঠে এসেছে।
এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় রং নীল ও নীলের বিভিন্ন শেডের পাশাপাশি অভিজাত রং বেগুনি ও ল্যাভেন্ডারও আছে বহাল তবিয়তে। দেখা গেছে, অভিজাত ধনীরা সাধারণত মনোক্রোম হালকা রঙের পোশাক পরেন। হালকা মনোক্রোম রঙের পোশাকে সহজে দাগ পরে, ‘মেইনটেইন’ করা কঠিন। হালকা পোশাকে অন্যদের নজর পোশাকের ওপর কম, ব্যক্তির ওপর বেশি পড়ে। এ কারণেই হালকা একরঙা পোশাকে রুচি, আভিজাত্য ভালোভাবে ফুটে ওঠে। গয়নার দামি পাথরের ঝলকানির ওপরে নজর পড়ে। তবে গাঢ় আর অভিজাত রঙের ভেতর গাঢ় বেগুনি, বটল গ্রিন, ডার্ক ব্রাউন, রয়্যাল ব্লু আর মেরুন অন্যতম।