বিশেষ কী থাকছে শিশুদের ঈদ পোশাকে দেখে নিন

ঈদের দিন সবচেয়ে আনন্দে থাকে শিশুরা। নতুন পোশাক পরে প্রজাপতির মতো উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াবে তারা। তাদের ঈদপোশাকের খোঁজখবর জানাচ্ছেন শিল্পী রানী কুন্ডু

এই গরমে শিশুদের পোশাক জবরজং না হওয়াই ভালো। মডেল : বৃন্তিকা ও অগ্নিলা পোশাক: টুয়েলভ ক্লথিং
ছবি : কবির হোসেন

বাড়ির আর কারও জন্য কিছু কেনা হোক বা না হোক, বাজার ঘুরে সবার আগে কেনা চাই শিশুর পোশাক। এবারও নিশ্চয়ই এর ব্যতিক্রম হবে না। ঈদ সামনে রেখে তাই আকর্ষণীয় সব রঙে আর ব্যতিক্রমী নকশায় শিশুদের পোশাকের পসরা সাজিয়েছে ছোট–বড় সব ফ্যাশন হাউস।

স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে দেশাল সব সময় সুতি কাপড়েই শিশুদের পোশাক তৈরি করে, এবারও তার ব্যত্যয় ঘটছে না। দেশালের প্রধান ডিজাইনার ও স্বত্বাধিকারী ইশরাত জাহান বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে মেয়েশিশুদের জন্য সুতি কাপড়ে ব্লক, লেয়ার ফ্রক তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি রঙের খেলা রয়েছে। আর আছে বেশ মজার মজার কম্বিনেশন। লেয়ার ফ্রকগুলোতে একেক লেয়ারে একেক রং দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাকে ব্লক প্রিন্ট ও সেলাইয়ের কাজ আছে।’ দেশালের ঈদসংগ্রহে আরও আছে শিশুদের টু–পিস ও থ্রি–পিস।

ছেলেশিশুদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি ও কাবলি সেট। মডেল : নুহফায়ের, পোশাক : ক্লাব হাউস

ছেলেমেয়ে সব শিশুর জন্য রয়েছে টি-শার্ট। ছেলেশিশুদের জন্য পাঞ্জাবি আর ফতুয়াও এনেছে দেশাল।

শিশুদের পোশাক তৈরির সময় দেশাল যে বিষয় সবচেয়ে বেশি মাথায় রাখে, তা হলো সিম্পলিসিটি। যেটা পরে শিশুরা আরাম পাবে, সেটাই তারা তৈরি করে। ইশরাত জাহান আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, শিশুরা এমনিতেই সুন্দর। তাই তার পোশাকটা যে সব সময় খুব জবরজং আর জমকালো হতে হবে, ব্যাপারটা সে রকম নয়। শিশুরা সব ধরনের পোশাকই ক্যারি করতে পারে। তাই ড্রেস যতটা সিম্পল হবে, তাদের দেখতে তত ভালো লাগবে।’

শিশুরা আরাম পাবে এমন পোশাক বেছে নিন। মডেল : রিয়াদ, পোশাক: সেইলর

হ্যান্ডলুম, পাওয়ারলুম, ভয়েল কাপড়ে বেশি কাজ করেছে এবার দেশাল। ইশরাত জাহান বলেন, ‘বিভিন্ন রঙের পোশাক বানানো হয়েছে। রয়েছে স্কিন প্রিন্টে করা মজার কিছু মোটিফের কাজ। বিভিন্ন প্রাণী, বিড়াল, মুরগি, তিতির পাখি—এসব রয়েছে। হয়তো পোশাকে মোরগের একটা ছবি, তার নিচে চারটি লাইন। আরেকটি পোশাকে ইলিশের ছবি, তাতে লেখা, “ইলিশ ভাজা খেতে মজা, গরম–গরম হলে।” দেশাল এ বছর এভাবেই সাজিয়েছে শিশুদের কালেকশন।

পার্টিওয়্যারে থাকছে হালকা রঙের প্রাধান্য। পোশাক: সেইলর

টি–শার্টেও বাঘ, সিংহ, মাছ বা অনেক রকমের পাখি, প্যাঁচা—এসব মোটিফ রয়েছে, যা দেখে শিশুরা বেশ মজা পাবে। আবার হয়তো কোনো প্রাণীর চোখ দুটি বড় বড় করেও বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। দেখে মনে হবে, সেগুলো আপনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ’আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে শিশুদের কিছু পোশাক সুতি কাপড়ে তৈরি করেছে টুয়েলভ ক্লোদিং। পাশাপাশি এনেছে কিছু পার্টিওয়্যার। তাদের সংগ্রহে পাবেন ছেলেশিশু, মেয়েশিশু ও নবজাতকের জন্য আলাদা আলাদা পোশাক। মেয়েশিশুদের জন্য রয়েছে থ্রি–পিস সেট, লেহেঙ্গা, টিউনিক, ফ্রক। পোশাকগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করতে যুক্ত করা হয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, লেইসওয়ার্ক, এমব্রয়ডারি, কারচুপিসহ নানা কিছু। আর ছেলেশিশুদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি ও কাবলি সেট। এসব পোশাকে এমব্রয়ডারি করে যেমন নতুনত্ব আনা হয়েছে, তেমনি ব্যবহার করা হয়েছে বিপরীত রঙের কাপড়ও (কন্ট্রাস্ট ফেব্রিক)। টুয়েলভ ক্লোদিংয়ের নিজেদের তৈরি করা কিছু প্রিন্টও রয়েছে। নবজাতকদের পোশাকে সুতি কাপড় বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানেও ছোট ছোট এমব্রয়ডারি করা চেক কাপড়ের পোশাক এবং কিছু পার্টিওয়্যার আছে।

শিশুদের পোশাকেও থাকছে লেয়ারিং। পোশাক : শৈশব

টুয়েলভ ক্লোদিং লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ডিজাইনার হুমাইয়ারা নূর বলেন, ‘ছোটদের ঈদপোশাকের চলতি ধারায় আছে থ্রি–পিস। এবারই আমরা পার্টি ড্রেস নিয়ে কাজ করেছি। ফিডব্যাকও বেশ ভালো। ছেলেদের কাবলি সেট এখন খুব জনপ্রিয়। আমাদের পোশাকে সুতি কাপড়, নেটের কাপড়ের সঙ্গে ফ্যান্সি কিছু উপকরণ ব্যবহার করেছি। কিছু লেইস আর ব্লেন্ডেড ফেব্রিকের ব্যবহারও চোখে পড়বে।’

টুয়েলভ ক্লোদিংয়ের শিশুদের পোশাকে রং ব্যবহার করা হয়েছে হাত খুলে। হুমাইয়ারা বলেন, ‘এবারের পোশাকে খুব বেশি রঙের ব্যবহার করা হয়েছে। শিশুদের পোশাকগুলো আকর্ষণীয় সব রঙে সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আছে লাল, পিচ, নীল, সাদা, কালো রং। দিনে ও রাতে ব্যবহারের উপযোগী আলাদা আলাদা পোশাক রয়েছে। কিছু টু–পিস রয়েছে খুবই হালকা, সেসব দিনের বেলায় পরে ঘোরাফেরা করবে শিশুরা। আর ফ্যান্সি পোশাকগুলো রাতের আয়োজনে পরার জন্য।’

ট্রেন্ডি থিম প্রাধান্য পেয়েছে শিশুদের ঈদ কালেকশনে

বিভিন্ন ধরনের কাট ও ট্রেন্ডি থিমে শিশুদের ঈদ কালেকশন সাজিয়েছে সেইলর। সংগ্রহে পার্টি ড্রেস থেকে শুরু করে বাসায় পরার আরামদায়ক পোশাক—সবই রয়েছে। পাশাপাশি মেয়েশিশুদের এথনিক লুকে সাজাতে থ্রি–পিস, টু–পিস আর কুর্তি নিয়ে এসেছে সেইলর। ছেলেশিশুদের জন্য তাদের কালেকশনে রয়েছে ফিউশন কুর্তা, পোলো টি-শার্ট, টুইন টপ, কাবলি সেট ও পাঞ্জাবি।

রং নিয়েও এবার বেশ নিরীক্ষা করেছে সেইলর। মেয়েশিশুদের পোশাকে নিয়ন রঙের সঙ্গে লাইট টোন ও ডিপ টোনের মিশ্রণ ঘটিয়েছে তারা। আর ছেলেশিশুদের পোশাকে মেরুন, কালো ও টিল গ্রিন রং ব্যবহার করা হয়েছে।

দেশালের কালেকশনে থাকা শিশুদের পোশাকের দাম পড়বে ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। আর টুয়েলভ ক্লোদিংয়ে নবজাতকের পোশাক পাবেন ৫৯০ থেকে ৮৯০ টাকার মধ্যে, মেয়ে ও ছেলেশিশুদের জন্য পছন্দসই পোশাক পাবেন ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। সেইলরে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় মিলবে শিশুদের পোশাক। অন্য ফ্যাশন হাউসে শিশুদের টি-শার্ট ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। থ্রি–পিস ১ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা, সিঙ্গেল ফ্রক ৫০০ থেকে ২ হাজার, শিশুদের শার্ট ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।