কিউয়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে রানওয়ের রং। কখনো ধূসর প্রকৃতি আবার কখনো সবুজ প্রকৃতির প্রাণবন্ততার প্রতিফলন ছড়াচ্ছে মঞ্চে। শীতের তীব্রতা যেমন বাড়ছে, তেমনি রানওয়ে ধরে হেঁটে আসা মডেলদের পোশাকের কিউয়ে দেখা যাচ্ছে শীত ফ্যাশনের চলতি ধারার একটা রূপ।
গত অক্টোবরে মস্কো ফ্যাশন সপ্তাহের শেষে রুশ ডিজাইনাররা তাঁদের নকশা করা পোশাকের এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। রাশিয়ার মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ, নাল চিক, ইয়েকাতেরিনবার্গ এবং ইয়াকুটস্কর ব্র্যান্ডগুলো তাঁদের সর্বশেষ সংগ্রহ তুলে ধরে দর্শকের সামনে।
পোশাকে ফুটে ওঠে মানুষের ব্যক্তিত্ব। সেই পোশাককে ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ার উপযোগী করে তৈরি করা হলে তো কথাই নেই। সেন্ট পিটার্সবার্গের ব্র্যান্ড এলিসাবেটার পোশাকগুলোতে তেমনটাই দেখা গেল। উল, কাশ্মীরি সুতা, মোহেয়ার (চীনে তৈরি একধরনের সুতা), তুলা এবং সিল্কের শীতপোশাকের সংগ্রহ তুলে ধরে তারা। মিনিমালিস্ট নকশার এসব কোটে কালো ও ধূসর রঙের প্রাধান্য দেখা যায়। শীতের আবহাওয়ায় এই পোশাকগুলো যেন আলাদা স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে একেক দেশের আবহাওয়ায় যেমন বৈচিত্র্য থাকে, তেমনি বৈচিত্র্য আসে পোশাকেও। যেমন মস্কোর ব্র্যান্ড এরমির পোশাকে ছিল তাদের স্থাপত্য নকশার প্রাধান্য।
এখানকার ডিজাইনার দল রাশিয়ার প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করে প্রতিটি পোশাকের নকশা করেন। মূলত ১৮ থেকে ২০ শতকের ভিনটেজ নকশা প্রাধান্য পায় তাঁদের পোশাকে।
আধুনিক নারী বলতে আপনার চোখে কী? এই ধারণা কেন্দ্র করে মস্কোর ফ্যাশন ব্র্যান্ড স্ভেল তাদের পোশাকের সংগ্রহ উপস্থাপন করেছে। হালকা শীতে পরার উপযোগী করে তাদের পোশাকের সংগ্রহ সাজিয়েছে তারা।
শীতপোশাক মানেই জবুথবু কিছু নয়, বরং তাতেও থাকতে পারে রক স্টাইল—বাখতিন ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা আর্টেম বাখতিন তাঁর নকশা করা পোশাকে তো তা–ই প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন। অবশ্য তিনি তাতে ব্যর্থ হননি। রক সংগীত থেকে তাঁর পোশাকগুলোর নকশা করার অনুপ্রেরণা পান বলে জানান। সংগীতের সঙ্গে নিজের চিন্তার সমন্বয় করে তিনি পোশাকের নকশা করেন।
তাঁর তৈরি পোশাকগুলোর কাঁধের নকশায় ছিল বৈচিত্র্য। আলট্রা ভলিউমিনাস অর্থাৎ পোশাকের কাঁধের নকশা বিভিন্ন ধরনের প্যাটার্ন চোখে পড়ে। তবে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল সংবাদপত্রের কাটিং সমন্বিত প্রিন্টের পোশাকের নকশা।
সাহসী নেকলাইনের লম্বা জ্যাকেট, নিচে আরামদায়ক ট্রাউজার—এই হলো ডিজাইনার আলেকজান্দ্রা সেরোভার ডিজাইনের বৈশিষ্ট্য। তাঁর ব্র্যান্ডের নাম এপোনেমিয়াস। তিনি সব সময় এমন নকশাই করেন, যাতে পোশাকটি দেখলেই একধরনের ভালো লাগার আবহ তৈরি হয়। প্রেট-এ-পোর্টার (সহজে পরা যায়) এবং সন্ধ্যাকালীন পোশাক—এই দুটি ধারায় তিনি তাঁর পোশাকের নকশা করেছেন। বেলুন স্কার্ট, কাঁচুলি এবং মিনি স্কার্টের নকশাগুলোও বেশ মজার।
মস্কোর চেরভনোস্কি ব্র্যান্ডটি তাদের সর্বশেষ সংগ্রহ উপস্থাপন করেছে এই শোতে। বোর্শ নামের এই সংগ্রহে বিট ও বাঁধাকপির প্রাণবন্ত রঙের টোন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে পোশাকগুলোয় রঙের ব্যবহার করা হয়। মখমল থেকে তৈরি পোশাকগুলোয় টার্টলনেক ব্যবহার করা হয়। সবজি রাখার জন্য যে স্ট্রিং ব্যাগের ব্যবহার করা হয়, নিট কাপড়ের নকশার পোশাকগুলো সে কথাও মনে করিয়ে দেয়।
রাশিয়ার ইয়াকুটস্কর ব্র্যান্ড ইনিকি চামড়ার তৈরি আনইভেন কাটের পোশাকের নকশা প্রদর্শন করেন। সাধারণ কাটে আরামদায়ক এবং দৈনন্দিন পরিধেয় উপযোগী এমন নকশা প্রাধান্য পেয়েছে তাঁর পোশাকে।
‘আপনার তৈরি প্রতিটি পোশাক অবশ্যই কারও জন্য প্রয়োজনীয় হতে হবে; নয়তো পোশাক নকশা করার পেছনে কেন এত শ্রম ব্যয় করবেন?’ মস্কোর ডিজাইনার সের্গেই সিসোয়েভ এই দর্শন নিয়ে তাঁর পোশাকের নকশা করেন। তাঁর নকশায় প্রধান অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে প্রকৃতি। প্রকৃতির নিস্তব্ধতা থেকে প্রাণবন্ত পরিবেশ—সবকিছু থেকেই তিনি পোশাক নকশার ধারণা নেন। সবুজ, বেজ ও বাদামি টোনের ব্যবহার বেশি দেখা যায় তাঁর পোশাকে।
প্রতিটি শো শেষে তাই সবার মনেই গেঁথে যায় এই ভাবনা—পোশাক মানেই শুধু নিত্য পরিধেয় বস্তু নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আরও অনেক গল্প, ভালো লাগা এবং কারও কারও একান্ত নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন।