টেকসই ফ্যাশন এখন আর কোনো নতুন ধারণা নয়। এটা নিয়ে কাজ করলে ক্রেতারা আকর্ষণ বোধ করে কেনাকাটা বেশি করবেন, বিষয়টি তেমনও নয়। বরং ফাস্ট ফ্যাশনের দুনিয়ায় টেকসই ফ্যাশন নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা সাহসের পরিচয়ই দিচ্ছেন, এমনটাই জানালেন মস্কো ফ্যাশন উইকের কয়েকজন ডিজাইনার। পরিবেশের রক্ষক হয়ে কাজ করছেন তাঁরা। চোখধাঁধানো কাজ নয়, চাকচিক্যহীন কাজই যেন তাঁদের স্টাইল।
লুম বাই রোদিনা রাশিয়ার একটি পরিচিত ব্র্যান্ড। এর ডিজাইনার সাতলানা রোদিনা আদিতে ছিলেন মডেল। তখন থেকেই পোশাকের প্রতি ভালোবাসা। ফেমিনিটির মধ্যে ম্যাসকুলিনিটি, পুরোনো ধারাকে নতুনরূপে আনা আর টেকসই ফ্যাশন—তিনটি বিষয় তাঁর বানানো পোশাকে নিয়ে আসতে চান। তাঁর পোশাকের কাটে, নকশায় প্রাধান্য পেয়েছে সূক্ষ্ম হাতের কাজ, ফুলের নকশা, ঝালরের প্রয়োগ আর এ-লাইন কাট। এ ধরনের পোশাক কেডস, বুট বা শুর সঙ্গে পরার পরামর্শ দিলেন তিনি। জানালেন, হিলের সঙ্গে পরলে নষ্ট হয়ে যাবে এর মূল সৌন্দর্য। এ ছাড়া পোশাকে তিনি তুলে ধরতে চান নারীত্বের শক্তিশালী রূপ। তাঁর নকশা করা লাল রঙের একটি পোশাক দেখিয়ে বলছিলেন, পুরো পোশাকের নকশাটিতেই আছে নমনীয়তা। কিন্তু রঙে ধরা দিয়েছে কমিউনিস্ট আদর্শ ও প্রতীক। নারীরা যে কোনো অংশেই কম না, এটা তিনি তাঁর পোশাক ও স্টাইলিংয়ের মাধ্যমেই তুলে ধরছেন বছরের পর বছর।
পাশাপাশি তিনি মনে করেন, ফ্যাশন হওয়া উচিত ধীরগতির। এর মাধ্যমে জীবনের অনেক কিছুই উপলব্ধি করা সম্ভব। টেকসই ফ্যাশনকে এ কারণেই ভালোবাসেন তিনি। এমন উপকরণ ব্যবহার করা উচিত, যেটা প্রকৃতিকে বাঁচাবে, তাহলে প্রকৃতিও আমাদের বাঁচাবে। রোদিনা বলেন, ‘আমার সব পোশাক এ ধরনের উপকরণে বানানো। রিসাইক্লিং পলিয়েস্টার।’
মস্কো ফ্যাশন উইকে লারিসা সুরোভায়ার সঙ্গে কথা হলো। ২০২০ সালে বাজারে আসে তার ব্র্যান্ড সুরোভায়া। নিজের সন্তান প্রসবের পর মানসিক ও শারীরিক বিপর্যস্ততার সঙ্গে লড়াই করে যাওয়ার সময়ই তাঁর মাথায় আসে ব্র্যান্ডটি তৈরির ভাবনা। তিনি পোশাককে এমনভাবে উপস্থাপন করতে চান, যেন অভ্যন্তরীণভাবেই নিজেকে সুরক্ষিত বোধ করে নারী।
নারীত্বকে শক্তিশালী রূপে উপস্থাপন করার চিন্তাটি এবার মস্কো ফ্যাশন উইকের মঞ্চেও ছড়িয়ে দিয়েছেন লারিসা। পোশাকে ব্যবহার করেছেন টুইড, সুতি, অরগাঞ্জা, ভিসকস, নাইলন । টুইডের বানানো স্কার্ট, ব্লেজারের ওপর শক্ত, অমসৃণ রূপ যেকোনো নারীকেই দেবে আলাদা আভিজাত্য ও আত্মবিশ্বাস। এ বছরের গ্রীষ্মের এই সংগ্রহ তাঁদের জন্য আদর্শ, যাঁরা মনে করেন, কোনো অংশেই তাঁরা পুরুষদের চেয়ে কম নন। মস্কো ফ্যাশন উইকে সপ্তাহজুড়েই ডিজাইনারদের পোশাকে এমন ধরন দেখা গেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও পোশাকে ইউনিসেক্সের বিষয়টি এখন আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পোশাক এমনভাবে বানানো হচ্ছে, যেন পুরুষ ও নারী দুজনেই পরতে পারবেন। পোশাকের বাহ্যিকরূপে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ।