ছবিতে আপনাকে বেখাপ্পা লাগছে, বিশেষ করে যে ছবিটা নিয়ে আপনার সবচেয়ে বেশি ‘আশাভরসা’ ছিল, সেখানে আপনাকে ‘ওকে’ও লাগছে না! এমন মন তেতো করা অনুভূতির ভেতর দিয়ে আমরা অনেকেই একবার হলেও গিয়েছি। গ্রুপ ছবিতে সবাই ঠিক আছেন, কেবল আপনি বেমানান। মনে হয়, সবাই লুকিয়ে ‘হাউ টু লুক ইয়োর বেস্ট’ বিষয়ে কোর্স করেছেন, কেবল আপনিই মিস করে গেছেন। ‘পারফেক্ট’ একটা প্রোফাইল পিকচার নেই, ক্যান্ডিডেরও একই অবস্থা, আর গ্রুপ ছবির প্রসঙ্গটা তোলা থাকলেই ভালো—আপনার অবস্থা যদি হয় এ রকম, তবে লেখাটি আপনার জন্যই! রিডার্স ডাইজেস্ট অনুসারে জেনে নিন, ছবিতে সুন্দর দেখানোর ১০ উপায়।
১. আগে জানুন, ভালো ছবি কী
পোট্রেট আলোকচিত্রী ডন ওরকস্কির মতে, একটা ভালো ছবির তিনটা বৈশিষ্ট্য। ছবিতে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী লাগবে, ছবিটি আপনার বারবার দেখতে ইচ্ছা করবে আর মনে হবে, আপনি নিজেকে যতটা সুন্দর ভাবেন, আপনি আসলে তার চেয়েও সুন্দর। অনেকেই আছেন, এমনিতে সব ঠিকঠাক, কিন্তু ক্যামেরার সামনেই কেমন যেন হয়ে যান! এটার একটা টার্মও আছে, ‘ক্যামেরা–নার্ভাসনেস’। ক্যামেরার সঙ্গে দোস্তি পাতান, অর্ধেক কাজ ওখানেই হয়ে যাবে।
২. নিজের অ্যাঙ্গেল জানুন
কমবেশি সবাইকেই নির্দিষ্ট একটা অ্যাঙ্গেলে বেশি ভালো লাগে। তাই নিজের অ্যাঙ্গেল জানাটা জরুরি। আপনার ক্যামেরা ফেস কোন দিকে, সেটি আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া কিছু সহজ মেকআপ টিপস ক্যামেরায় আপনার সেরাটা বের করে আনতে পারে। একটু ফাউন্ডেশন, ব্লাশআপ আপনার বয়স ঢেকে ফেলার জন্য যথেষ্ট। আর হেয়ারস্টাইলে আনুন নতুনত্ব। নিজেকে বিভিন্নভাবে দেখুন। হেয়ারস্টাইল, পোজ পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজের লুক ‘এক্সপ্লোর’ করুন।
৩. আপনার পছন্দের ছবিটি দেখুন
আপনার একটা পছন্দের ছবি তুলে নিন। কেন ছবিটি আপনার পছন্দ? সেগুলো টুকে রাখুন। পরেরবার ছবি তোলার সময় এগুলো মাথায় রাখুন। ইনস্টাগ্রামে যাদের ছবি দেখতে আপনার ভালো লাগে তাদের প্রোফাইল ভিজিট করুন। সময় নিয়ে লক্ষ্য করুন ছবিগুলো।
৪. পাশে রাখুন প্রিয় বন্ধুকে
সম্ভব হলে আপনার প্রিয় বন্ধু বা এ রকম কাউকে ছবি তোলার সময় আশপাশে রাখুন। সে আপনার মুড ভালো রাখবে, হাসাবে, রিল্যাক্সড রাখবে, ক্যামেরার সামনে আপনার সেরাটা বের করে আনতে সাহায্য করবে।
৫. ফটোজেনিক আউটফিট
আপনি যদি একটা সাদা পোশাকে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে ছবি তোলেন, তাহলে মনে হবে, আপনি একটা ভাসমান মাথা! এমন পোশাক বেছে নিন, ছবিতে আপনাকে যাতে চমৎকার লাগে। কোথায়, কখন, কেন, কোন আলোয় ছবি তুলছেন—এই সবকিছু বিবেচনায় রেখে পোশাক নির্বাচন করুন। এমন পোশাক পরুন, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড বা পরিবেশ যেটাকে আরও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলে আর আপনিও ভেতর থেকে আত্মবিশ্বাসী বোধ করেন। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রিন্টের ছড়ানো গাউন, শাড়ি বা স্কার্টে বেশ লাগবে।
৬. হাতগুলো নিয়ে যে কী করি!
অনেক সময় ছবি দেখলে মনে হবে, হাত দুটি কী করবেন, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। হাতের পোজ ঠিক করুন। হাতগুলোকে কীভাবে ব্যবহার করবেন, ভাবুন। অন্যদের ছবি দেখুন।
৭. শেষ মুহূর্তে চুলগুলোকে উড়িয়ে দিন
আপনি যদি একটা স্বতঃস্ফূর্ত, ক্যান্ডিড মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দী করতে চান, ঠিক ক্লিকের মুহূর্তে চুলগুলো উড়িয়ে দিতে পারেন, চুলগুলোকে সামনে আনতে পারেন বা ঠেলে দিতে পারেন পেছনের দিকে।
৮. প্রাকৃতিক আলোর সদ্ব্যবহার
পৃথিবীর কৃত্রিম কোনো আলো প্রাকৃতিক আলোকে হারাতে পারবে না। তাই ভালো ছবির জন্য নির্ভর করুন প্রাকৃতিক আলোর ওপরে। জানালার গ্লাস সরিয়ে দিন। বারান্দা বা খোলা জায়গায় দাঁড়ান। নরম আলোয় ছবি সবচেয়ে ভালো আসে। তাই ভোর বা বিকেলের কনে–দেখা আলোয় (সূর্য ডোবার আগমুহূর্তের নরম লালচে আলো) চলতে পারে ফটোশুট। কটকটে রোদ এড়িয়ে ছবি তুলুন! প্রকৃতিক সৌন্দর্যকেও আমন্ত্রণ জানান আপনার ছবিতে।
৯. হেলান দিন
দেয়াল, দরজা, গাছ বা চেয়ার—আশপাশে যা কিছু আছে, সেখানে একটু হেলান দিতেই পারেন। এতে আপনি অনেকটাই নির্ভার হতে পারবেন, আর পোজের ওপর ফোকাস করতে পারেন। আশপাশে যা আছে, সেগুলোকে ব্যবহার করে ছবি তুলুন।
১০. আপনার ব্যক্তিত্বকেই ফুটিয়ে তুলুন
আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় না, আপনি যদি এমন কিছু ট্রাই করেন, তাহলে আপনাকে বেখাপ্পা লাগার আশঙ্কা থেকেই যায়। এমন কিছু করুন, যা আপনার ব্যক্তিত্বকেই ফুটিয়ে তোলে। আর এটিই আপনার ছবিটাকে অন্য সবার চেয়ে আলাদা করবে। সেই সঙ্গে নতুন কিছু ট্রাই করতেও ভুলবেন না। বিভিন্ন পোশাক, লোকেশন, আলো, পোজ, হেয়ারস্টাইল...ট্রাই করতে থাকুন। একসময় নিজেই বুঝে যাবেন, কীভাবে ছবিতে ফুটে উঠবে আপনার সেরাটা!