মস্কোর ফ্যাশন সম্মেলনের তৃতীয় দিনে কেন্দ্রে ছিল ভারত

কুনজিনা ব্র্যান্ডের পোশাকে মডেল
ছবি: লেখক

ব্রিকস+ফ্যাশন সামিটের তৃতীয় দিনে মঞ্চে নিজেদের সংগ্রহ তুলে ধরলেন দুই দেশের চার ডিজাইনার ও ফ্যাশন ব্র্যান্ড। কেউ তুলে ধরলেন শীতের পোশাক, কেউ মডেলকে পরালেন বছরজুড়ে পরার উপযোগী পোশাক। এসব সংগ্রহের প্রতিটিতেই ছিল নিজস্বতা।

ইথিওপীয় ব্র্যান্ড কুনজিনা ও ভারতীয় চার ডিজাইনার নওশাদ জামিল, গৌরব খানিজো, রীতেশ কুমার ও শ্রুতি সঞ্চেতি নিজেদের পোশাক নিয়ে কথাও বললেন। ভারতের চারজনই মূলত খাদি তাঁতের পোশাক প্রদর্শন করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছে ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এফডিসিআই)।

নওশাদ জামিলের পোশাকে মডেল

নওশাদ জামিলের বাড়ি ভারতের পদুচেরিতে। ভারতের সাত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একটি পদুচেরি। এ যেন ভারতের মধ্যে এক টুকরা ফ্রান্স। অতীতে ফরাসিদের উপনিবেশ থাকার রেশ পদুচেরিতে আজও রয়ে গেছে। সেই সঙ্গে আছে তামিলনাড়ুর সংস্কৃতির উপস্থিতি। তাঁর পোশাকে সেই মিশ্র পরিবেশটাই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। কটন ভেলভেট, ওয়াফেল কাপড় কিংবা অবসরে বৃদ্ধ নারীদের হাতে বোনা ত্রুশকাঁটার কাজগুলো যখন আমাকে দেখাচ্ছিলেন, কণ্ঠে এসব ফ্যাশনের প্রতি মমত্ববোধ প্রকাশ পাচ্ছিল। ফ্যাশনকে একটি জায়গায় আবদ্ধ করতে চান না তিনি। পোশাককে নারী-পুরুষনির্বিশেষে লিঙ্গবিভেদের ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে চান। জানালেন, কিছু কিছু পোশাককে এমনভাবে বানিয়েছেন যেন সবাই পরতে পারে।

গৌরব খানিজোর বেজ রঙের প্যান্ট-শার্টের সঙ্গে মেরুন রঙের জ্যাকেট

গৌরব খানিজো গ্রীষ্ম ও শীতে পরার জন্য দুই ধরনের পোশাক উপস্থাপন করেন। ছেলেদের জন্য বানানো এই পোশাকের ওপর নিজের সিগনেচার নকশা দিয়েছেন। প্রাধান্য পেয়েছে হাতে বোনা কাপড়। কথায় কথায় জানালেন, আশা করছেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে সামনে তৈরি হবে নতুন আরও সম্ভাবনা।

রীতেশ কুমারের পছন্দের রং সাদা। শীতের জন্য বানানো পোশাকগুলোর রংও কিছুটা চাপা। হাতে বোনা ভারী খাদি কাপড়ের প্রাধান্য দেখা গেল। ব্যবহার করেছেন সিল্ক। হাতের ডাফেল ব্যাগগুলোও নজর কাড়ে।

রীতেশ কুমার খাদির মতো কাপড় দিয়ে বানিয়েছেন পোশাক

শ্রুতি সঞ্চেতির খাদি, সিল্ক, সুতি কাপড়ের মাধ্যমে বানানো পোশাকগুলো দর্শকদের মুগ্ধ করে। স্কার্ট, কামিজ, লম্বা কাটের জ্যাকেট, টপস—সবকিছুতেই অভিজাত কাটের নকশা। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন সূক্ষ্ম সুতার কাজ।

মস্কোর পাশকভ হাউসে অনুষ্ঠিত ফ্যাশন শোয়ে টারজন ডিজাইনারের পোশাক দেখে মনে হচ্ছিল এটি যেন ফ্যাশনের থিয়েটার। পেছনে লাইভ মিউজিকের ছন্দে মডেলরা হাঁটছিলেন। রীতেশ কুমার, নওশাদ জামিল, গৌরব খানিজো ও শ্রুতি সঞ্চেতি ভারতীয় ফ্যাশন মঞ্চে নতুন ধারা শুরুর অন্যতম কারিগর। গতকালের শোয়ের পর দর্শকদের হাততালি বলে দিচ্ছিল প্রতিটি পোশাকই সবার মন জয় করে নিয়েছে।

শ্রুতি সঞ্চেতির পোশাকে দেখা যায় হালকা রঙের প্রাধান্য

এর আগে বিকেল চারটায় জারইয়াডাই পার্কে কুনজিনা ব্র্যান্ড পরিবেশন করে নিজস্ব সংগ্রহ। কুনজিনা অর্থ সৌন্দর্য। রেডি টু ওয়্যার ২০২৪ সংগ্রহের অধিকাংশ পোশাকের কাপড়ই ইথিওপিয়ার। এখানে হাতে বোনা খাদির মতো একরকমের পোশাক, ডেনিম, সুতির সঙ্গে পলিয়েস্টার মেলানো কাপড় প্রাধান্য পেয়েছে। ব্র্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা কুনজিনা টেসফায়ে জানালেন, সারা বছরই পোশাকগুলো পরা যাবে।

রাশিয়ার মস্কোতে গত ২৮ নভেম্বর শুরু হয়েছে প্রথম ব্রিকস+ফ্যাশন সামিট। ব্রিকসের ৫ সদস্যদেশ ছাড়াও ৫৫টি দেশ থেকে এখানে অংশগ্রহণ করছেন ডিজাইনার, বক্তা, পেশাজীবীরা। আজ ২ ডিসেম্বর শেষ হবে এ আয়োজন।