বাইরে যাওয়ার আগে রোজ রোজ পোশাক বদলাতেই যদি সময় চলে যায়, তবে কাজ করব কখন? তাই এমন পোশাক চাই, যা পরা সহজ, পরে আরাম আবার চলাফেরাও করা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে—সর্বোপরি দেখতেও হয় ফ্যাশনেবল।
ইজি টু ওয়্যার এমন পোশাক নিয়েই এখন কাজ করছে ফ্যাশন হাউসগুলো। প্যান্ট বা চাপা কাটের সালোয়ারের সঙ্গে কখনো লম্বা শার্ট, কখনোবা টপসের ছাঁটে বানানো হচ্ছে কুর্তি। শুধু কাপড়েই নয়, কাটছাঁটে আরামের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়ায় ফ্যাশনসচেতনদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এ ধরনের পোশাক।
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনকে প্রায়ই দেখা যায়, প্যান্ট কাটের সালোয়ারের সঙ্গে লম্বা শার্টের আদলে কুর্তির মতো পোশাক পরছেন। জানালেন, সুতি কাপড়ের হালকা নকশার আরামদায়ক এ ধরনের পোশাক পরে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য পান। সন্তানকে স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার সময় কিংবা নিজের কোনো মিটিংয়ে যাওয়ার সময়, পোশাক সামলানোটা যাতে বাড়তি চাপ হয়ে না পড়ে, তাই রোজকার পোশাকের তালিকায় থাকে এ ধরনের কাপড়।
কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কনার সঙ্গে কথা বলেও জানা গেল, পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সব সময় আরামের দিকটা মাথায় রাখেন তিনি। রোদেলা সকাল, মেঘলা বিকেল কিংবা বর্ষণমুখর রাতে, চট করে কাজের প্রয়োজনে বা কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় এমন ঢিলেঢালা কাটের কুর্তা-সালোয়ার বেছে নেন। বিশ্বজুড়ে আরামদায়ক পোশাকের ছাঁটের যে ধারা চলছে, সেই ধারাই অনুসরণ করছেন কনা।
লা রিভের ডিজাইন অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ সেকশনের ডেপুটি ম্যানেজার মারুফা ইয়াসমিন বলছিলেন, তাঁদের আনা ‘নাইন টু নাইন’ পোশাকগুলো এমন, যা পরে অফিসে যাওয়া যায়, আবার অফিস সময়ের পর বেড়াতে যাওয়াও চলে। নামেই তো আছে, সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা, সব সময়েরই উপযোগী। এসব পোশাকে আছে পরিশীলিত ও অভিজাত লুক, কিন্তু পোশাকে কারুকাজ থাকে খুব কম। প্রশান্তিদায়ক রংগুলোই বেছে নিয়েছেন তাঁরা। এ-লাইন কিংবা টেন্টের মতো তীক্ষ্ণ প্যাটার্নের পোশাক এ সময়ের উপযোগী। আরামের দিক বিবেচনায় রেখে এসব পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে ভিসকস, পলিয়েস্টার আর রেয়ন কাপড়। অনেকে পলিয়েস্টারকে ঠিক মানসম্মত কাপড় মনে করেন না। তবে মারুফা ইয়াসমিন জানালেন, এখনকার সময়ে উন্নত মানের পলিয়েস্টার ব্যবহার করেছেন তাঁরা। এ ধরনের কাপড় ধোয়া ও শুকানো খুবই সহজ। ইস্তিরি করার ঝামেলাও নেই।
অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ রঙিন পিরানের স্বত্বাধিকারী সিলভিয়া খান বললেন, হুটহাট যাঁদের বাইরে যেতে হয়, তাঁদের কথা মাথায় রেখেই কাজ করেন তিনি। কাপড় যদি হয় খসখসে কিংবা পরে হাঁসফাঁস লাগে, তাহলে কাজকর্ম কি আর ঠিকঠাক করা যায়? গরমে কাজের সময় আরামটা যাতে নিশ্চিত হয়, সেটা বিশেষভাবে খেয়াল রাখেন। পাশাপাশি পোশাকে টার্সেল, কড়ি কিংবা পমপমের মতো অনুষঙ্গের যোগে আনেন দেশীয় আমেজ। ছিমছাম, পরিপাটি লুক আনতে পোশাকের কাটের ওপর গুরুত্ব দেয় রঙিন পিরান। পোশাকের নিচের দিকটায় একটু ঢিলেঢালা কাট রাখা হলে আরাম পাওয়া যায় বেশ আর বৈচিত্র্যময় কাটে দেখায়ও অনন্য। সুতি কাপড় দিয়েই তৈরি করা হয় এসব পোশাক।
ওয়্যারহাউসের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার তাসনিম ফেরদৌস মনে করেন, এই সময়ের জীবনধারায় ঢিলেঢালা কাটের আরামদায়ক পোশাক বেশ উপযোগী। হালকা রঙের পোশাকে থাকতে পারে ডুডল নকশা। হালকা রং আর উপকরণের কাপড়ের সঙ্গে করা যায় চলতি ধারার ডিজাইনের সমন্বয়। সুতি আর নরম লিনেন হতে পারে এমন পোশাকের উপকরণ।
১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে ফ্যাশন হাউসগুলোতেই পাবেন এ ধরনের পোশাক। কেউ চাইলে পছন্দমতো পোশাক বানিয়েও নিতে পারেন। বেশি বহরের (৫৮-৬০ ইঞ্চি) কাপড় নিলে আড়াই থেকে তিন গজের মধ্যেই এমন পোশাক তৈরি করা সম্ভব। আড়াই হাত বহরের কাপড় হলেও এই পরিমাণ কাপড়েই হয়ে যাবে, যদি পোশাকের নকশাটা হয় তেমন। তবে নকশাভেদে পাঁচ গজ পর্যন্তও লাগতে পারে। নিজের পছন্দমতো হালকা কিছু অনুষঙ্গও যোগ করে নিতে পারেন। চাইলে এই পোশাকেও কিন্তু কাপড়ের উপযোগী রং কিংবা সুতার কাজ করে নিতে পারেন।