হীরা, নীলকান্তমনি, রুবি, পান্না, স্ফটিকে তৈরি গয়না হরহামেশাই তারকাদের গলায়, হাতে, কানে চোখে পড়ে। তবে এই সব বহুমূল্য রত্ন আর পাথরের পোশাক সচরাচর চোখে পড়ে না। হীরাসহ অন্যসব মণি–মুক্তা, পাথর আর স্ফটিকের পোশাকে একের পর এক চোখ ধাঁধাচ্ছেন মুকেশ আম্বানির স্ত্রী নীতা আম্বানি, বড় পুত্রবধূ শ্লোকা মেহতা, হবু ছোট পুত্রবধূ রাধিকা মার্চেন্ট ও একমাত্র কন্যা ইশা আম্বানি। প্রাক্বিবাহের বিভিন্ন আয়োজনে পরা তাঁদের প্রতিটি পোশাকের মূল্য কোটি কোটি টাকা। আর পোশাকগুলোর বেশীরভাগই তৈরি করেছেন ভারতের তথা বলিউডের জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার মনীশ মালহোত্রা।
যদিও ভারতের আরেক গুণী ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের কোনো পোশাকই কোনো আয়োজনে পরেননি আম্বানি বাড়ির নারীরা। অথচ ভারতের প্রথম সারির ও আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ডিজাইনারদের ভেতর এই দুজনের নাম থাকবে তালিকার একেবারে প্রথম দিকে।
আম্বানিরা বিয়ের বিভিন্ন আয়োজনে দেশি ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়িকে গুরুত্ব দিয়েছেন। আর ভারতের ফ্যাশন ডিজাইনাররা এ বিষয়ে একমত হবেন যে সেখানে শাড়ির সবচেয়ে ভালো নকশা করেন কলকাতার বাঙালি ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়। আলিয়া ভাট নিজের বিয়েতে, শেষ মেট গালায়ও পরেছেন সব্যসাচীর শাড়ি। আনুশকা শর্মা, দীপিকা পাড়ুকোনও নিজেদের বিয়েতে সব্যসাচীর নকশা করা পোশাক পরেছেন। তাহলে কেন আম্বানি বাড়ির নারীরা বিয়ের আয়োজনে সব্যসাচীর কোনো পোশাক, গয়না পরছেন না?
এর পেছনে রয়েছে ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’। মনীশ মালহোত্রার ব্র্যান্ডের ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক রিলায়েন্স ব্র্যান্ড। ফলে মনীশ মালহোত্রাকে ‘প্রমোট’ করা মানে আদতে নিজেদের ব্যবসারই প্রসার ঘটানো। এদিকে মনীশ মালহোত্রার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম যে সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়। আর তাই বিয়ের কোনো আয়োজনেই সব্যসাচীর পোশাকে দেখা দেননি আম্বানিদের কেউ।
প্রথম প্রাক্বিবাহের অনুষ্ঠানে গাইলেন পপ তারকা রিহানা। রিহানার বিউটি ব্র্যান্ডের নাম ‘ফেন্টি বিউটি’। ভারতে ‘ফেন্টি বিউটি’ কাজ করছে নাইকার সঙ্গে। আর রিলায়েন্স–নাইকার অধীনে রয়েছে ফেন্টি বিউটির মতো আরও বেশ কিছু নামকরা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। এদিকে রিহানাও ফেন্টি বিউটির নতুন পণ্য বাজারে আনার আয়োজনে দেখা দিয়েছেন মনীশ মালহোত্রার গয়নায়। ফলে রিয়ানাকে তুলে ধরা মানে নিজেদের ব্যবসারই প্রসার ঘটানো।
দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, অনন্ত-রাধিকার প্রথম প্রাক্বিবাহের আয়োজনের বাজেট ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি রুপির বেশি। দ্বিতীয় প্রাকবিবাহের আয়োজনের খরচ জানা যায়নি। বিয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলছে। আগামীকাল ১২ জুলাই থেকে শুরু হবে মূল বিয়ের আয়োজন। ফলে এই বিয়ে বাবদ আম্বানিদের মোট খরচের পরিমাণ যে কত দাঁড়াবে, তা ভেবে কারও চোখ কপালে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মুকেশ আম্বানি ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। এশিয়ার শীর্ষ ধনী। আর এই মুহূর্তে বিশ্বের নবম ধনী। ধনীদের বিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। তবে আম্বানি বাড়িতে যেভাবে বিয়ের আয়োজন চলছে, তা কেবল বিয়ের ‘খরচ’ নয়, বরং আম্বানি পরিবার ও তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘রিলায়েন্স’–এর ব্র্যান্ডিংও বটে!