এই বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর নাম কীভাবে এল?

বিলাসপণ্যের কথা উঠলেই সবার আগে মাথায় আসে কয়েকটি নাম। বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ড বিলাসপণ্যের সঙ্গে এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যে সেগুলো ছাড়া বর্তমান দুনিয়ার হাই ফ্যাশন কল্পনা করাও কঠিন। বর্তমান বিলাসপণ্যের ব্র্যান্ডগুলো অবশ্য এক দিনে তৈরি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের ইতিহাস। কোত্থেকে কীভাবে এল বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর নাম, তা নিয়েই আজকের লেখা।

লুই ভুঁতো


আইকনিক ফ্রেঞ্চ ফ্যাশন হাউস লুই ভুঁতো প্রতিষ্ঠা পায় ১৮৫৪ সালে। ফ্রেঞ্চ ফ্যাশন ডিজাইনার লুই ভুঁতো নিজের নামেই প্রতিষ্ঠা করেন ব্যাগের ব্র্যান্ড। ধীরে ধীরে ফ্যাশনের বিভিন্ন দিকে ব্যবসা সম্প্রসারণ করলেও লুই ভুঁতোর সূচনা হয়েছিল ট্রাভেল ব্যাগ দিয়েই।

আইকনিক ফ্রেঞ্চ ফ্যাশন হাউস লুই ভুঁতো প্রতিষ্ঠা পায় ১৮৫৪ সালে

গুচি

১৯২১ সাল থেকে ইতালিয়ান ফ্যাশন হাউস গুচির পথচলা শুরু। ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত গুচি পরিবারের সন্তান গুচিও গুচির হাত ধরে শুরু হয় গুচির যাত্রা। শুরুতে কেবল চামড়ার ব্যাগ বিক্রি করতেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্যবসায় কিছুটা বদল আনলেও মানের সঙ্গে আপস করেননি। আর এ কারণেই তাঁর ব্যবসার প্রসার হতেও সময় লেগেছে অনেক বছর।

প্রায় ৭০ বছর গুচির মালিকানা ধরে রেখেছিল গুচি পরিবার। ১৯৯৫ সালে মাউরিসিও গুচির হত্যাকাণ্ডের পর গুচির সম্পূর্ণ মালিকানা হারায় গুচি পরিবার। ফ্যাশন ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল মাউরিসিও গুচির হত্যাকাণ্ড। ২০২১ সালে এ ঘটনা নিয়েই মুক্তি পায় সিনেমা ‘হাউস অব গুচি’।

প্রায় ৭০ বছর গুচির মালিকানা ধরে রেখেছিল গুচি পরিবার

রোলেক্স


ঘড়ি আর রোলেক্স, বিলাসপণ্যের জগতে নাম দুটিকে সমার্থক শব্দ বললেও ভুল হবে না। সুইস এই ঘড়ির কোম্পানির সূচনা হয়েছিল কিন্তু যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। ১৯০৫ সালে আলফ্রেড ডেভিস ও হ্যান্স উইলসডর্ফের হাত ধরে এই ঘড়ি কোম্পানির সূচনা। তবে প্রথমে এর নাম ছিল উইলসডর্ফ অ্যান্ড ডেভিস কোম্পানি।

রোলেক্সের ঘড়ি হাতে আনুশকা শঙ্কর

১৯০৮ সালে কোম্পানির নাম বদলে ‘রোলেক্স’ রাখেন তিনি। তারা এমন একটা নাম চেয়েছিলেন যেটি যেকোনো ভাষায় সহজেই উচ্চারণ করা যাবে। ১৯২৬ সাল থেকে তৈরি হওয়া প্রতিটি রোলেক্সে রয়েছে একটি ইউনিক কোড নম্বর, যা দিয়ে চিহ্নিত করা যাবে যে কবে, কখন, কোথায়, কীভাবে তৈরি হয়েছে ঘড়িটি। স্মার্টফোন, ডিজিটাল ঘড়ির যুগেও রোলেক্স তার মেকানিক্যাল ঘড়ির জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে তাদের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি দিয়ে।

ব্যালেন্সিয়াগা

ফ্যাশন দুনিয়ার আরেকটি বড় নাম ব্যালেন্সিয়াগা। ১৯১৮ সালে স্পেনের সান সেবাস্তিয়ানে ক্রিস্তোবাল ব্যালেন্সিয়াগার হাত ধরে কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে স্প্যানিশ রাজা-রানিদের জন্য রাজকীয় পোশাক তৈরি করতেন তিনি। স্পেনের ছোট্ট এক শহর থেকে যাত্রা শুরু করলেও বছর দুয়েকের মধ্যেই মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মতো শহরে নিজের ব্যবসার সম্প্রসারণ করেন তিনি। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের জন্য স্পেন থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে আসেন ফ্রান্সে। সেখানে নতুন করে খোলেন নিজের ব্যবসা। আধুনিক ব্যালেন্সিয়াগার সূচনা তাই ফ্রান্স থেকেই।

১৯১৮ সালে স্পেনের সান সেবাস্তিয়ানে ক্রিস্তোবাল ব্যালেন্সিয়াগার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ব্যালেন্সিয়াগা

শ্যানেল

বিশ্ব ফ্যাশনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ডিজাইনারদের কথা এলে শুরুতেই থাকবে গ্যাব্রিয়েল কোকো শ্যানেলের নাম। আধুনিক স্টাইল ও ডিজাইনের জন্য পুরো বিশ্বেই সমাদৃত ছিলেন কোকো। ১৯১০ সালে প্যারিসে শ্যানেলের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকায় সমালোচিত হন। জার্মানির হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন, ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরও তিনি সাজা থেকে মুক্ত হন। কেননা, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব কাজে দেয়। গুপ্তচরবৃত্তির সাজা মওকুফ হয় চার্চিলের হস্তক্ষেপে।

শ্যানেল ৫ হাতে মডেল

প্রাডা

১৯১৩ সালে ফ্যাশন ডিজাইনার মারিও প্রাডার হাত ধরে ফ্যাশনের রাজধানীখ্যাত মিলানে শুরু হয় প্রাডার পথচলা। কাটিং-এজ ফ্যাশন ও লাক্সারির আরেক নাম প্রাডা। তাদের মিনিমালিস্ট অ্যাপ্রোচের কারণে শত বছর পরও প্রাডা সমান জনপ্রিয়।

কাটিং-এজ ফ্যাশন ও লাক্সারির আরেক নাম প্রাডা

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া