আর কয়েক দিন পরই আফরোজা শারমিনের বোনের মেয়ের বিয়ে। বিয়ের সবকিছু একদম ঠিকঠাক করতে নানা প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। এর আগে এক আত্মীয়ের বিয়েতে আলোকচিত্রী দিয়ে তোলা সব ছবি নষ্ট হয়েছিল। সবারই খুব মন খারাপ হয়েছিল। এবার যেন কোনো ভুল না হয়, সে জন্যই তাঁর বিয়ে উৎসবে আসা।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ ওয়েসিসে চলছে আয়ুশ-নকশা বিয়ে উৎসব। এই উৎসব থেকে নতুন পরিকল্পনা নিতে স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে এসেছেন আফরোজা শারমিন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই জানা গেল এসব তথ্য। ওয়েসিসে গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত চলে বিয়ে উৎসবের মেলা। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আয়ুশ-নকশা বিয়ে উৎসবের দ্বিতীয় ও শেষ দিন আজ। মেলায় বিয়ের সাজ, খাবারদাবার, পোশাক, আসবাবসহ বিয়ে আয়োজনের সব অনুষঙ্গ নিয়ে স্টল সাজিয়েছে দেশসেরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিয়ে উৎসবের সম্প্রচার সহযোগী হিসেবে রয়েছে নাগরিক টেলিভিশন।
আফরোজা বলেন, ‘নতুন কোনো আইডিয়া পাওয়া যায় কি না, সে জন্য এই উৎসবে আসা। ফুল দিয়ে যেভাবে গাড়ি সাজানো হয়েছে, তা আমার কাছে খুবই অভিনব মনে হয়েছে।’ ফটোগ্রাফির জন্য উৎসবে অংশ নেওয়া এম আর রানার সঙ্গে পরিচয় ও কথা বলেছেন। মনে হয়েছে এবার কাজের কাজ হবে।
দুই বছর আগে বিয়ে করেছেন পেশায় ফটোগ্রাফার দীপময় চৌধুরী। স্ত্রী মিটমিটি চক্রবর্তী নভোএয়ারে মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত। শীতের সকাল বলে মিটমিটি চক্রবর্তী প্যান্ট এবং একটি জ্যাকেট গায়ে দিয়ে উৎসবে এসেছেন। তবে অ্যাথেনাস ফার্নিচারে ঢুকে তিনি সেই পোশাকেই আবার নতুন করে বউ সাজতে শুরু করেন। আর এ কাজে সহায়তা করছিলেন দীপময় চৌধুরী। তারপর দুজনে বর-বউ সেজে ছবি তুললেন। অ্যাথেনাস ফার্নিচার স্টলে পাগড়ি, বউয়ের ওড়না, টিকলি ও টানা নথ রেখেছে। দোলনাকে ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। আর ছবি তুলে অ্যাথেনাস ফার্নিচারের ফেসবুক পেজে পোস্ট করার পর যে ছবি বেশি লাইক পাবে তাঁদের জন্য যেকোনো আসবাব উপহার রয়েছে।
মিটমিটি চক্রবর্তী বলেন, ‘আবার বউ সাজতে গিয়েও অন্য রকম অনুভূতি হলো। দোলনায় বসে ছবি তোলার কত দিনের শখ ছিল। যখন সত্যিকারের বউ সেজেছিলাম, তখন তা সম্ভব হয়নি। তবে উৎসব ঘুরে মনে হয়েছে কিছু কিছু জিনিস মিস করেছি। বিশেষ করে ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িটি। আগে এ আইডিয়া মাথায় থাকলে নিজের বিয়েতে করতে পারতাম।’
তবে মিটমিটি চক্রবর্তী খুব বেশি হতাশ নন, কেননা যে বন্ধুদের বিয়ে হয়নি, তাঁদের নিয়ে এসেছেন উৎসবে। ফলে এরপর কোনো বিয়েতে এ আইডিয়া কাজে লাগানো যাবে।
সকাল থেকে আসছেন নানা বয়সী দর্শনার্থী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শক সমাগমও বাড়ছে। ২০০৭ সালে অবসরে যাওয়া সচিব মো. লুৎফর রহমান মেয়ের ঘরের দুই নাতনিকে নিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন, নাতনিদের নিয়ে ছবি তোলেন। মালিবাগে বাসা। লুৎফর রহমান জানালেন, আগে মেয়েদের নিয়ে ঘুরতেন, এখন আর তাঁরা আসতে চান না, তাই নাতনিদের নিয়ে সময় কাটানোর জন্য এসেছেন।
উত্তরা থেকে এসেছেন স্কুলশিক্ষক নাসরিন আক্তার। তাঁর সঙ্গে এইচএসসি পড়ুয়া মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস আর ভাইয়ের পুত্রবধূ জেবা খানম এসেছেন। সকালে প্রথম আলো পত্রিকা পড়ে মেয়ে বায়না ধরেছে এ উৎসবে আসার। মেয়ে যেহেতু বায়না ধরেছে, তাই তা পূরণ করতেই নাসরিন আক্তার আসা-যাওয়া বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা গাড়ি ভাড়া করে উৎসবে এসেছেন বলে জানালেন।
সকাল থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সায়েম খোলা আকাশের মঞ্চে গান গেয়ে মাতিয়ে রেখেছে দর্শকদের। তার কণ্ঠে ‘জীবন মানে যন্ত্রণা, বেঁচে থাকতে বোধ হয় শেষ হবে না’, গানটি আপ্লুত করেছে দর্শকদের। আজ ঢোল বাজিয়ে গান গাইছে সে। এমনিতে কলসকে বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে গান করে সায়েম। গান নিয়ে অনেক দূর যেতে চায় সে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে চোখে কম দেখতে শুরু করে সায়েম। চোখে একবার অস্ত্রোপচার হয়েছে, আবার অস্ত্রোপচার করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন কণ্ঠশিল্পী ইমরান। তিনিই শিশুশিল্পী সায়েমকে খুঁজে পেয়েছেন এবং সায়েমের জীবনে প্রথমবারের মতো মঞ্চে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতাও হলো এ মুক্ত মঞ্চেই।
দুপুর ১২টার দিকে শুরু হয় রংপুরের বিয়ের গীত। এতে অংশ নিয়েছেন লালমনিরহাটের আরশিনগর বাংলাদেশ দলের শিল্পীরা। একটি গীতের উপজীব্য ছিল, ‘চম্পক বালার বিয়ে, চম্পক বালার খেলার সাথি, মা সবাইকে ছেড়ে দূরদেশে চলে যাবে।’ বিয়ের আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে এক হাহাকার খেলার সাথিদের কণ্ঠে।
মডেল ও অভিনেত্রী মুমতাহিনা টয়াও এসেছেন বিয়ে উৎসবে। কাছের বন্ধুরা বিয়ে করেছেন, সামনে অন্য বন্ধুদের বিয়ে আছে। মুক্তমঞ্চে এসে বন্ধুদের বিয়ের অভিজ্ঞতা জানালেন তিনি।