বাঙালির আজ অপরিমেয় আনন্দের দিন। দেশজুড়ে আজ উদ্যাপিত হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের জন্য এটা সৌভাগ্যেরই বিষয়। তা–ও আবার উদ্যাপিত হচ্ছে স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সঙ্গে। এ উদ্যাপন আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তাঁদের কথা, যাঁদের বীরত্ব আর ত্যাগে জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ড।
তাঁদের অনেকের রণাঙ্গন থেকে কিংবা আত্মগোপনকালে লেখা চিঠিতে ফুটে ওঠে দেশকে স্বাধীন করার আকুতি, পরাধীনতার প্রতি ঘৃণা, বিজয়ী হওয়ার আত্মবিশ্বাস আর পরিবারের প্রতি দায়িত্ব, মমতা ও আবেগ। জীবন বাজি রেখে লড়তে যাওয়া এসব অকুতোভয় সূর্যসন্তানের মানসিক অবস্থাও ফুটে উঠেছে তাঁদের হাতের লেখা চিঠিগুলোয়। প্রতিটি অক্ষরে যেন থমকে আছে সময়। সেসব চিঠি নিয়ে প্রথমা প্রকাশন প্রকাশ করে অনন্য এক সংকলন ‘একাত্তরের চিঠি’।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সেই পত্রলেখকদের, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করার প্রয়াস পেয়েছে দেশের নবীন লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড কিউরিয়াস। এ ব্র্যান্ডের বনানী আউটলেটের প্রতিটি ফ্লোর সাজানো হয়েছে লাল-সবুজ নানা উপাদানে। তবে শো-উইন্ডোতে দৃষ্টি দিলে স্পষ্ট হয় মাটির পাত্রে রাখা সব চিঠি। ঠিক সেই চিঠিগুলোই সুন্দর করে রেপ্লিকা করা হয়েছে। ম্যানিকিনগুলোয় পতাকার রঙের পোশাক আর অন্যান্য অনুষঙ্গ পুরো আবহকে বদলে দিয়েছে। শুরুতেই প্রথমা প্রকাশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়েছে ‘একাত্তরের চিঠি’ বইটির জন্য।
দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলে বাঁ দিকেই দৃষ্টিগোচর হয় স্থায়ী প্রদর্শন কোণ। এখানে বিভিন্ন সময়ে বিষয়ভিত্তিক সব উপাদানে সাজানো থাকে। ক্রেতা-দর্শকেরা কেনাকাটার ফাঁকে চোখ বুলিয়ে নেন। এবার সেখানে স্থান পেয়েছে চিঠির রেপ্লিকা। অনেকটা চিত্র প্রদর্শনীর আদলে ফ্রেমে সাঁটা চিঠিগুলোকে সাজানো হয়েছে দেয়ালজুড়ে। নিচে রয়েছে নানা উপকরণ ও সজ্জানুষঙ্গ, যা কেবল এ অন্দরসজ্জার জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।
টপ ফ্লোরের সিলিং থেকে নিচতলা পর্যন্ত ঝোলানো হয়েছে সাদা মসলিনে স্ক্রিন প্রিন্ট করা চিঠিগুলো। অবিকল সেই হাতের লেখা। সাদা জমিনে সাদায় ছাপা অক্ষরে আলোছায়ার প্রতিসরণে বাঙময় বর্ণমালা। একই জিনিষ ছোট আকারে টাঙানো হয়েছে অন্য ফ্লোরগুলোর বিভিন্ন কর্নারেও। একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে ভিজে উঠবে চোখের কোণ। ৫০ বছর পেরিয়েও সেই আবেগে মথিত করবে। অজান্তেই নুয়ে আসবে মাথা, অনিশেষ শ্রদ্ধায়।
প্রতিটি ফ্লোরের অন্দরসজ্জায় ইউনিফর্মটির পাশাপাশি রয়েছে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সম্ভারসজ্জা। তবে বেশি আকর্ষণ করবে বিভিন্ন প্রোডাক্ট তৈরির উপকরণকে সজ্জার উপাদান হিসেবে রেখে দেওয়া। জামদানি বয়নের নানা অনুষঙ্গ যেমন রয়েছে, তেমনি আছে গয়না তৈরির যন্ত্রানুষঙ্গও। আবার প্রতিটি ফ্লোরেই আছে কোনো একটি বিষয়কে উপজীব্য করে ইনার ভিজ্যুয়াল মার্চেন্ডাইজিং।
যেখানে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সুতা, চামড়া, ছোট–বড় নানা যন্ত্রানুষঙ্গ, ইলাস্ট্রেশন ইত্যাদি। এ বোর্ডগুলো কেবল দৃষ্টিসুখকরই নয়, বরং শিক্ষণীয়ও বটে। ছোট–বড় সবার জন্য।
তবে প্রতিটি তলার একটা অংশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর নানা উপাদান আর উপকরণে সজ্জিত করা হয়েছে। প্রতিটি তলাতেই রয়েছে ফ্রেমে ধরা চিঠির রেপ্লিকা; একই সঙ্গে রয়েছে এই সময়ের সংগ্রহও। এই প্রদর্শনী তথা সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্যাপন চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাত থেকে অনেক উদ্যোক্তাই দেশের বাজারে লাইফস্টাইল পণ্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। সেই ধারায় নতুন সংযোজন কিউরিয়াস। এটি ডেকো লেগাসি গ্রুপেরই একটি প্রতিষ্ঠান। আর লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড কিউরিয়াসের উদ্যোক্তা তথা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এম শাহাদাত হোসেন কিরণ অন্যদের মতো অভিন্ন পথ অনুসরণ করলেও তাঁর ভাবনা ছিল অন্যতর।
তিনি আসলে প্রাধান্য দিয়েছেন শিল্প, সংস্কৃতি এবং সর্বোপরি বাংলাদেশকে। ফলে কিউরিয়াসের অন্দরসজ্জায় বাহুল্যহীন পরিসর স্নিগ্ধতা ছড়ায়। পণ্য উপস্থাপনায় পষ্ট হয় নান্দনিকতার বৈভব। মিনিমালিস্টিক অ্যাপ্রোচ ভোক্তাকে বিক্ষিপ্ত আর বিস্রস্ত করে না। বরং প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে যায়; যা তার পণ্য পছন্দে অনুঘটক হয়।
পণ্যনকশাতেও এ অনন্যতা প্রতীয়মান। যেখানে বিষয়, বৈশিষ্ট্য আর বৈচিত্র্যের সম্মিলন দৃষ্টি কাড়েপণ্যনকশাতেও এ অনন্যতা প্রতীয়মান। যেখানে বিষয়, বৈশিষ্ট্য আর বৈচিত্র্যের সম্মিলন দৃষ্টি কাড়ে। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতা, অতীতের সঙ্গে সাম্প্রতিকের মেলবন্ধনে দৃশ্যমান হয় হৃদয়স্পর্শী সৌন্দর্য। অন্য রকম ভাবনায় জারিত এ আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
উল্লেখ্য, কিউরিয়াসের সজ্জা, পণ্যনকশা, পণ্য–উন্নয়নসহ প্রতিটি পর্যায়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের ডিজাইন কনসালট্যান্ট চন্দ্র শেখর সাহার প্রজ্ঞা, মেধা, নান্দনিকতাবোধ আর অভিজ্ঞতার প্রোজ্জ্বল বর্ণময়তা।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনে অন্দরসজ্জার মাত্রাযোগেও আছেন তিনি। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানোর সময় তাঁর বর্ণনায় মনে হচ্ছিল কোনো জাদুঘরের প্রদর্শনী দেখছি কিউরেটরের সঙ্গে। অবশ্য এ উপস্থাপনাকে প্রদর্শনী বললেও অত্যুক্তি হবে না। আর কিউরেশনও তো তাঁরই। তবে একটি লাইফস্টাইল রিটেইল ব্র্যান্ডের আউটলেটে বিষয়ভিত্তিক সজ্জায়ও যে এভাবে ভাবা যেতে পারে, সেটা তিনি প্রমাণ করলেন।
বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের কাজ তিনি উপহার দিয়েছেন। বিষয়ভিত্তিক প্রদর্শনীগুলোতে তাঁর কিউরেশনের মুনশিয়ানা প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাঁর সৃজন দক্ষতায় মিলেছে সময়কে অতিক্রম করে যাওয়ার প্রয়াস। এখানে আরও একবার সীমাবদ্ধ পরিসরে অনন্য ভাবনার ঝলক দেখালেন বর্ষীয়ান এই ডিজাইনার। বললেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাঙালি জাতির জীবনে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এটা সব সময় আসে না। এ জন্য এভাবেই উদ্যাপন করা, সময়কে ধরে রাখা। আর এর মধ্য দিয়ে সেই সব বীর সন্তানকে স্মরণ করা, যাঁদের ত্যাগে ও বীরত্বে এসেছে মহান স্বাধীনতা।