শার্টের কাটছাঁট থেকে নকশা—সবকিছুতেই দেখা যাচ্ছে ভিন্নতা। যেকোনো বয়সে এবং জায়গায় মানিয়ে যায় এই পোশাক।
করপোরেট পরিবেশের আনুষ্ঠানিক সাজ থেকে চায়ের দোকানের আড্ডায়—সব জায়গাতেই মানানসই শার্ট। সামনেই শুরু হচ্ছে গরম, আরামদায়ক বলে সে সময়ের ফ্যাশনেও রাজত্ব করবে এই পোশাক।
আদিতে শার্ট কিন্তু ছিল অন্তর্বাস। মধ্যযুগ পর্যন্ত মূল পোশাকের নিচেই পরা হতো। ইতালির রেনেসাঁর সময় তাস্কানিতে নারীরা শার্টকে সুন্দর করার জন্য অলংকৃত করা শুরু করেন। আর এই সৌন্দর্যটাকে দেখানোর জন্যই পোশাকটা তাঁরা বাইরে পরতে থাকেন। সরাসরি বাড়িতে তৈরি করা হতো বলে পুরুষদের শার্টের তুলনায় এগুলোর দামও ছিল বেশি। পানিলিনি নামের ভালো মানের লিনেন কাপড় দিয়ে বানানো এই শার্টগুলোতে সোনা, রুপা এবং সিল্কের সুতোর নকশা করা হতো। আস্তে আস্তে সব বয়সীর আরামের পোশাক হিসেবেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে শার্ট। সুতি, লিনেন, সিল্ক, জর্জেট, ক্রেপ, পপলিন—প্রায় সব ধরনের কাপড় দিয়েই বানানো
সামনের দিকটি পুরো খোলা, আটকানো যাবে বোতাম দিয়ে, হাতে কাফ, গলায় কলার থাকবে—এগুলোই শার্টের মূল বৈশিষ্ট্য। শার্টের পুরোনো, মৌলিক নকশার ধাঁচ ভেঙে গেছে অনেক আগেই। প্রতিবছর শার্টের নকশায় যোগ-বিয়োগ হচ্ছে নানা কিছু। এই যেমন দুনিয়াজুড়ে শার্টের নকশায় এখন ঢিলেঢালার জয়জয়কার। ওভারসাইজই এখন ফ্যাশন। শার্ট ড্রেসও এখন জনপ্রিয়। পাশ্চাত্যে লম্বা কাটের এই শার্টের নিচে আর কিছুই পরা হয় না। এ ধরনের ঢিলেঢালা লম্বা শার্টের সঙ্গে চাপা কাটের প্যান্ট মানানসই। গত কয়েক বছরে ক্রপ টপ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই ক্রপ টপ স্টাইলেও শার্ট করা হয়েছে। শার্টের নিচের অংশে ঘের, গোল, উঁচু–নিচু ইত্যাদি কাট প্রাধান্য পাচ্ছে এখন।
নজর কাড়ছে শার্টের হাতাও। ডিজাইনাররা নকশার বাক্স খুলে মন উজাড় করে শার্টের হাতাকে সাজাচ্ছেন। ফ্রিল, বেলুন কাট, প্রজাপতি ইত্যাদি হাতা শার্টের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। শার্টের ওপরের নকশা তো আছেই। দৈনন্দিন এবং ছুটিতে পরার শার্টগুলোতে গাঢ় প্রিন্ট, গভীর কাট এবং ট্যাসেল, বোতাম, এমব্রয়ডারি, স্কার্ফ নানা কিছু রয়েছে।
একটা সময় ছিল, যখন বয়স বেঁধে দিত পোশাকের স্টাইল। সেই ধারণা সেকেলে হয়ে গেছে। বরং আত্মবিশ্বাস আর স্টাইল করার ইচ্ছেটাই এখন মুখ্য। ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহিন খান জানালেন, বয়স নয়, শারীরিক ফিটনেসের ওপর সবাই এখন পোশাক বেছে নিচ্ছেন। ৪০ বছরের পর শার্টের নকশায় ভারিক্কি বিষয়টি থাকতে হবে, এমনটি আর নেই।
যাঁদের শরীর আপেল-আকৃতি, তাঁদের জন্য ভি-গলা শার্ট বা বেলুন কাটের শার্ট ভালো।
আয়তাকার আকৃতির শরীরের জন্য হালকা আঁটসাঁট শার্ট বেছে নিন। গাঢ় রং এবং সাহসী নকশা মানাবে।
আওয়ারগ্লাসের শারীরিক অধিকারীরা শরীরে লেপ্টে থাকবে এমন ফিটিংয়ের শার্ট বেছে নিন।
পিয়ার আকৃতির জন্য শরীরের ওপরের অংশকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য শার্টের ওপরে নকশা থাকলে ভালো।
বেল্ট, প্যান্ট, জুতা, গয়না—সবকিছুর সঙ্গেই শার্টের স্টাইল করা যাবে। কীভাবে পরতে চাচ্ছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে কোমরে আটকে নেন চওড়া বেল্ট, অনেকে আবার ঢিলেঢালাভাবেই পরেন। কেউ আবার হাতাকাটা শার্টের ওপরেই পরছেন জ্যাকেট। সামনের অংশটুকু প্যান্টের ভেতর গুঁজে, পেছনের অংশটি খোলা রেখে দিচ্ছেন কেউ। বেশি বড় শার্ট হলে সামনে গিট্টু মেরে নিচ্ছেন অনেকে। সাদা কিংবা রঙিন, যে রঙের বা নকশারই হোক না কেন, উপযুক্ত অনুষঙ্গ আর আত্মবিশ্বাস সোজাসাপটা শার্টের সাজে তুলে ধরবে ভিন্নতা।